গায়েবানা জানাজার বিধান
ফিকহে হানাফীতে গায়েবানা জানাযা জায়েয নয়৷ কারণ জানাযার নামাযের অন্যতম শর্ত
হচ্ছে, 'মায়্যিত সামনে উপস্থিত থাকা'৷ অন্যান্য মাযহাবের তুলনায় দলিলের আলোকে
হানাফী মাযহাবের ফতোয়াটি অধিক শক্তিশালী৷
অনেকেই নিন্মোক্ত হাদীস দিয়ে গায়েবানা জানাজার দলিল দিয়ে থাকেন।
হাদীসে আসছে- ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি বলেন,
إِنّ أَخَاكُمْ النّجَاشِيّ توُفِّيَ
فَصَلُّوا عَلَيْهِ. قالَ: فَصَفّ رَسُولُ اللهِ صلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ،
وَصفَفْنَا خَلْفَهُ فَصَلّى علَيْهِ، وَمَا نَحْسِبُ الْجنَازَةَ إِلّا
مَوْضُوعَةً بيْنَ يَدَيْهِ.
তোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাযা আদায় কর।
ইমরান রা. বলেন, অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। এবং
আমরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। আমাদের মনে
হচ্ছিল যে, নাজাশীর লাশ তাঁর সামনেই রাখা ছিল।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২০০০৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩০৯৮
বাদশাহ নাজাশীর জানাযা রাসূলুল্লাহ ﷺ পড়েছেন৷ লাশ সামনে উপস্থিত ছিলো না৷
এর অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে৷ অন্যতম ব্যাখ্যা হচ্ছে- নবী হিসেবে অনেক বিষয়
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য খাস ছিলো, উম্মতের জন্য করণীয় নয়৷ তন্মধ্যে নাজাশির
জানাযাও একটি খাস আমল৷
এর প্রমাণ পাওয়া যায়- নাজাশীর পূর্বাপর অনেক সাহাবী দূরদূরান্তে ইন্তেকাল
করেছেন৷ কারো গায়েবানা জানাযা পড়ার নজির পাওয়া যায় না৷ না রাসূল ﷺ থেকে পাওয়া
যায়, না তাঁর সাহাবীদের থেকে পাওয়া যায়৷
তাছাড়া নাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানাযা পড়ার মতো
কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাযা পড়িয়েছেন।
মায়্যিতের জন্য জানাযা ছাড়াও সওয়াব পৌছানোর আরো অনেক পদ্ধতি রয়েছে৷ দুআ,
তিলাওয়াত, সাদাকা এসব আমলের মাধ্যমে সওয়াব পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে৷
যেমন: নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَان ابنُ عُمَر إِذَا انْتهَى إِلَى جِنازَة وقَدْ صُلِّيَ عَلَيْها دَعَا
وَانصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصّلَاةَ.
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কোনো জানাযায় পৌঁছতে পৌঁছতে জানাযা নামায শেষ হয়ে গেলে
মৃতের জন্য দুআ করে ফিরে আসতেন। দ্বিতীয় বার জানাযা পড়তেন না। (মুছান্নাফে আবদুর
রাযযাক- ৬৫৪৫।
★ عَنِ الْحَسَنِ ، أَنّهُ كَانَ إذَا سُبِقَ بِالْجِنَازَةِ يَسْتَغْفِرُ
لَهَا وَيَجْلِسُ أَوْ يَنْصَرِفُ. হাসান বসরী রাহ. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি
মৃতের জানাযা নামায না পেলে মৃতের জন্য ইসতেগফার করতেন। অতপর বসতেন অথবা ফিরে
যেতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ১২০৭১)
গায়েবানা জানাযা পড়ে আমাদের দেশে একটি অপ্রচলিত পদ্ধতির রেওয়াজ চালু করা
কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়৷