ঈমান ভঙ্গের কারণ: গণতন্ত্রের মূল কনসেপ্ট বিশ্বাস করা

ঈমান ভঙ্গের কারণ:

গণতন্ত্রের মূল কনসেপ্ট বিশ্বাস করা।

বর্তমান বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের জয়জয়কার চলছে। গণতন্ত্রকে ইংরেজিতে বলা হয় democracy । উইকিপিডিয়াতে গণতন্ত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে,

“গণতন্ত্র পরিভাষাটি ইংরেজি ডেমোক্রেসি (Democracy) থেকে এসেছে। এই ইংরেজি শব্দটি আবার এসেছে গ্রিক শব্দ δημοκρατία (দেমোক্রাতিয়া) থেকে, যার অর্থ ‘জনগণের শাসন’। শব্দটির দুইটি মূল হচ্ছে δῆμος (দেমোস) ‘জনগণ’ ও κράτος (ক্রাতোস) ‘ক্ষমতা’ থেকে।” 
যার সারাংশ দাঁড়ায়, ‘জনগণের শাসন ও ক্ষমতা’।

আর সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন ভাবে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সর্বশেষ আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন (Abraham Lincoln) তার এক ভাষনের মধ্যে জনপ্রিয় এক সংজ্ঞা প্রদান করেন। আব্রাহাম লিংকন 19/১১/1863 তারিখে তার দেয়া এক বক্তৃতাতে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন এভাবে, 
Government of the people, by the people, for the people. 
যার অর্থ হলো,জনগণের অংশগ্রহণের গণতান্ত্রিক সরকার , জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য।” 

গণতন্ত্রের এই সংজ্ঞায় মোট তিনটি পয়েন্ট রয়েছে। ইসলাম গণতন্ত্রকে কোন দৃষ্টিতে দেখে, সেই তিন পয়েন্টে খোলাসা করতে চাই। 

১. Government of the people অর্থাৎ জনগণের সরকার। অর্থাৎ জনগণ ভোট দিয়ে তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনপ্রতিনিধি এবং সরকার গঠিত হবে। জনগণ চাইলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে; না চাইলে থাকবে না এবং জনগণ যা চাইবে তারা তা করবে। 
যার অর্থ হচ্ছে, “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস বা সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক কিংবা সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ”। গণতন্ত্রের মূল কনসেপ্ট হলো এটা।
কাজেই গণতন্ত্রের মূল কনসেপ্ট হচ্ছে, সকল ক্ষমতার উৎস কিংবা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মালিক জনগণ। যেমন বাংলাদেশ সংবিধানের ৭ (১) অনুচ্ছেদে রয়েছে, “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ”। 

এটা ইসলামের মৌলিক আকীদার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ সকল শক্তি ও ক্ষমতার একমাত্র উৎস আল্লাহ তাআলা এবং তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক। 
কুরআনে কারীমের ঘোষণা,
قُلِ اللّٰہُمَّ مٰلِکَ الۡملۡکِ تُؤۡتِی الۡمُلۡکَ مَنۡ تشَآءُ وَتَنۡزِعُ الۡمُلکَ مِمَّنۡ تَشَآءُ ۫ وَتُعِزُّ مَنۡ تَشآءُ وَتُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُ ؕ بِیدِکَ الۡخیرُ ؕ اِنَّکَ عَلی کُلِّ شیۡءٍ قَدِیۡرٌ 
বলুন, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে চাও ক্ষমতা দান কর, আর যার থেকে চাও ক্ষমতা কেড়ে নাও। যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর এবং যাকে চাও লাঞ্ছিত কর। সমস্ত কল্যাণ তোমারই হাতে। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। আলে ইমরান ২৬।

দ্বিতীয়ত:
যেহেতু সার্বভৌম ক্ষমতা ও শক্তির মালিক আল্লাহ, তাই বিধান চলবে তাঁর-ই। এ কারণে ইসলাম বলে, জনপ্রতিনিধি ও সরকারের জন্য আল্লাহর বিধান থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং তারা আল্লাহ তাআলার বিধান বাস্তবায়নের প্রতিনিধি। তারা যতক্ষণ কুরআন-সুন্নাহর ওপর অটল থাকবেন, ততক্ষণ রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের হাতে থাকবে।

পক্ষান্তরে গণতন্ত্রে নিরঙ্কুশ/সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ তথা নির্বাচনে ভোট প্রদানের মাধ্যমে উক্ত নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মালিক বা প্রতিনিধি হন সংসদ সদস্যগণ। আর সাংসদগণ এমন ক্ষমতা পেয়ে আল্লাহর আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে পশ্চিমা ও মানব রচিত আইন প্রণয়ন করেন এবং সংবিধান তৈরি করেন। 

আর এ সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেমন সংবিধানের ৭ (২) অনুচ্ছেদে লেখা আছে, “এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।” অর্থাৎ দেশের সংবিধানই সর্বোচ্চ আইন এবং শেষ কথা।

এদিকে জনগণের ভোটের মাধ্যমে প্রাপ্ত নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মালিক বা প্রতিনিধি সাংসদগণও যে কোন আইন তৈরি করতে পারেন। সংবিধানের ৬৫ (১) অনুচ্ছেদে রয়েছে, “এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত হইবে;...”

আর উক্ত ক্ষমতা বলে সাংসদগণ মদ ও পতিতাবৃত্তি বৈধতার লাইসেন্স দেওয়ার এবং মৃত্যুদণ্ডের আসামিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারার আইন করতে পারেন, যা আল্লাহর আইনে অকাট্যভাবে নিষিদ্ধ। এভাবে চোরের হাত কাটা, ব্যভিচারের শাস্তি ও কিসাস সহ অনেক কিছু নিষিদ্ধের আইন প্রণীত হয়, যা আল্লাহর আইনে জরুরী। 

কাজেই জনগণ পরোক্ষভাবে এবং সাংসদগণ প্রত্যক্ষভাবে নিজেদেরকে আইনের মালিক ও বিধানদাতা বানালেন, যা নিশ্চিত কুফর-শিরক। আল্লাহ তআলা বলেন, 
اَمۡ لَہُمۡ شُرَکٰٓؤُا شَرَعُوۡا لَہُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا لَمۡ یَاۡذَنۡۢ بِہِ اللّٰہُ ؕ وَلَوۡلَا کَلِمَۃُ الۡفَصۡلِ لَقُضِیَ بَیۡنَہُمۡ ؕ وَاِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ 
তাদের কি এমন কতক শরীক আছে, যারা তাদের জন্য এমন বিধান প্রণয়ন করে দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? আশ্‌-শূরা ২১।

মুফতী তাকী ওসমানী হাফিজাহুল্লাহ ‘ইসলাম আওর সিয়াসী নাযরিয়াত’ গ্রন্থে বলেন, 
جمہوریت میں عوام خود حاکم ہوتے ہیں، کسی الہی قانون کے پابند نہیں، تو وہ خود فیصلہ کریں گے کیا چیز اچھی ہے یا بری...... جمہوریت سیکولرازم کے بغیر نہیں چل سکتی.
গণতান্ত্রিক সিস্টেমে সাধারণ লোক স্বয়ং নিজেরাই ক্ষমতার মালিক হয়। এতে কোনো ঐশী বিধানের পাবন্দ বা আবশ্যকীয়তা নেই। তাই কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ- এর ফায়সালা নিজেরাই করে।..... 
আর গণতন্ত্র সেক্যুলারিজম ছাড়া চলতে পারে না। দেখুন এর বাংলা অনুবাদ, ইসলাম ও রাজনীতি পৃ. ১৬০।

কেননা সেক্যুলারিজমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজ, উৎসব, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থা থেকে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্মমুক্ত করা বা ধর্মের বিধান বাদ দেওয়া। 

এখন এ ক্ষেত্রগুলোতে ধর্মমুক্ত ও ধর্মহীন করার পর সেগুলো পরিচালিত হওয়ার জন্য তৎস্থলে অন্য কিছু লাগবে।

তাই গণতন্ত্রের স্লোগানে তথা ‘জনগণের শাসনক্ষমতা’র নামে সংসদ সদস্যগণের মাধ্যমে এতে পশ্চিমা আইন বা মানব রচিত আইন, নীতি ও সংস্কৃতি রিপ্লেস ও সংযোজন করানো হয়। যেমন ইসলামী অর্থনীতি বাদ দিয়ে পুঁজিবাদ, উৎসব-সংস্কৃতিতে বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও পশ্চিমা উৎসব-সংস্কৃতি, ইসলামী আইন ও বিচারব্যবস্থায় ব্রিটিশ আইন, খেলাফত ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র রিপ্লেস বা সংযোজন করা হয়েছে!
অর্থাৎ সেক্যুলারিজমের কাজ হচ্ছে, শরীর থেকে ধর্মের লেবাস খুলে ছুড়ে ফেলা, আর গণতন্ত্রের কাজ হচ্ছে উক্ত লেবাসবিহীন শরীরে অধর্মীয় কাপড় পরিধান করানো।

সুতরাং তিনি যথার্থই বলেছেন যে, ‘গণতন্ত্র সেক্যুলারিজম তথা ধর্মহীনতা ছাড়া চলতে পারে না।’

“ঈমান-আকীদা” বই থেকে

লেখক Sayed Ahmad - সাঈদ আহমদ

Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন