বর্তমানে কি পরিমাণ সম্পদে কুরবানী ওয়াজিব?

কুরবানির পরিচয়:

ধন-সম্পদের মোহ ও মনের পাশবিকতা দূরীকরণের জন্য মহান আল্লাহ তায়া’লার নামে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক পশু জবাই করার নামই কুরবানী। কুরবানির দিনকে ঈদুল আজহা-ও বলা হয়।

কুরবানি শব্দটি  আরবি 'কুরবুন' শব্দমূল থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা, সান্নিধ্য অর্জন করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা।

শরিয়তের পরিভাষায়-নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ তায়া’লার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহ তায়ালার নামে জবেহ করার নাম'ই হলো কুরবানি।

কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত:>

কুরবানি হলো ইসলামের একটি শি’য়ার বা মহান নিদর্শন। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন-‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় কর ও পশু কুরবানি কর।’ (সূরা কাউসার, আয়াত-২)।

কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে উহার (জন্তুর) গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না বরং পৌঁছায় তোমাদের ত্বাকওয়া। (সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত-৩৭)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের না আসে’। (যারা কুরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্কবাণী।)

(ইবনে মাজাহ-৩১২৩)।

কুরবানির মাধ্যমে বিশেষ করে গরিব মানুষের অনেক উপকার হয়। সারা বছরে যারা একবারও গোশত খেতে পারে না, তারাও গোশত খাওয়ার সুযোগ পায়। কুরবানির চামড়ার টাকা অসহায় দুস্থদের মাঝে বণ্টন করার মাধ্যমে তাদের অভাব ও দুঃখ মোচন হয়। আর তাছাড়া কুরবানির চামড়া অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।

কি পরিমান টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে?

জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নিজ এবং পরিবারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা তার সমমূল্য পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে কুরবানি ওয়াজিব হবে।

🖋️বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বাজারে এক ভরি ২২ ক্যারেট রুপার দাম ১৭১৪ টাকা। অতএব নেসাব পরিমাণ টাকা হবে (১৭১৪ × ৫২.৫০=৮৯১২৮) টাকা।

🖋️আর এক ভরি ২১ ক্যারেট রুপার দাম ১৬৩২ টাকা। অতএব নেসাব হবে(১৬৩২×৫২.৫০=৮৫৬৮০) টাকা।

🖋️১৮ ক্যারেট এক ভরি রুপার মূল্য ১৩৯৯ টাকা। অতএব নেসাব হবে ১৩৯৯×৫২.৫০= ৭৩৪৪৭) টাকা।

আরও পড়ুন: কুরবানিকে কেন্দ্র করে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার

মোট কথা হচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সর্বনিম্ন ৭৩৪৪৭ টাকা বা সমপরিমাণ সম্পদ থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হবে। যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয়না এবং প্রয়োজন-অতিরিক্ত আসবাবপত্র- এসবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাব যোগ্য।

উল্লেখ্য, স্বর্ণ-রুপার বাজারমূল্যে যেহেতু হ্রাস- বৃদ্ধি ঘটে,তাই তাৎক্ষণিক সাড়ে বায়ান্ন(৫২.৫০) ভরি রুপার বাজার মূল্য হিসাব করে কুরবানীর নেসাব বের করা যাবে। 

আলমুহীতল বুরহানী,৮/৪৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া,৪/৩০৯।

বিঃদ্রঃ পোষ্টটি ২০২৩ সালের। তবে উপরে বর্ণিত হিসেব ধরে রুপার বাজার দর অনুযায়ী টাকার পরিমাণ বের করতে পারবেন।




Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন