MTFE কি বৈধ? এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার হুকুম কি?

MTFE কি বৈধ?

বর্তমানে ঘরে বসে ইনকামের নামে মুখরোচক অনেক এডভ্রাইজ শোনা যায়। বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার মত, অনলাইন বিভিন্ন পোর্টালে এসব ছড়িয়ে পড়েছে। MTFE তেমনি একটি সাইট। আজকে আমরা ইসলামি শরীয়াহ'তে এর বৈধতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ।

MTFE কি বৈধ?  এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার হুকুম কি?


MTFE কী?

MTFE এর পূর্ণরূপ হল- METAVERSE FOREIGN EXCHANGE GROUP (মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ)।একটি তথ্যমতে এর যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। এটি মূলত কানাডাভিত্তিক একটি ব্রোকার প্রতিষ্ঠান। এর মূল কাজ, বিশেষ একটি অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডিং সার্ভিস প্রোভাইড করা। 

{getToc} $title={Table of Contents}

MTFE কি বৈধ?  এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার হুকুম কি?

সম্প্রতি IFA Consultancy Limited  এ ব্যাপারে একটি গবেষণালব্ধ আর্টিকেল প্রকাশ করে যার সারসংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো:

MTFE- এর কারবারে সম্পৃক্ত হওয়া শারিয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নয়। যে কারণে এখান থেকে কোন আয় করা হলে, তা সরাসরি হারাম আয় বলে বিবেচিত হবে। এমনকি যারা এর প্রচার-প্রসারে লিপ্ত তারাও গুনাহগার হবেন। নিম্নে হারাম হওয়ার কারণ উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত শারিয়াহ বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হল-

১. প্রতারণা

MTFE তে ট্রেড মূলত কোন শেয়ার কিংবা পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় নয়। বরং পর্যবেক্ষণে দেখা যায়; ব্যবসার নাম দিয়ে এখানে নিছক একটি কৃত্রিম লেনদেনের ছক সাজানো হয়েছে। আর এটি একটি প্রতারণা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন;
من غشنا فليس منا،
প্রতারণাকারী আমার উম্মত নহে। বাজারে গিয়ে ভিজে খেজুরের উপর শুকনো খেজুর বিক্রি করতে দেখে তিনি দোকানিকে উপরের হাদিস রেওয়ায়েত করেছিলেন।

১:১ এটি যে একটি প্রতারণা তা এটির সংশ্লিষ্ট প্রচারকগণের মিথ্যা বক্তব্যে প্রমাণিত হয়। তাদের দাবী  কোম্পানিটি কানাডার অন্টারিও সিকিউরিটিস কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত। প্রকৃতপক্ষে তাদের এ দাবীটি সঠিক নয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো স্বয়ং অন্টারিও জুলাই ৬, ২০২৩ (মাত্র ১ মাস আগে) তাদের বিরুদ্ধে ইনভেস্টর এলার্ট ইস্যু করে লিখেছে; "mtfe.ca সাইটে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি অন্টারিওতে সিকিউরিটিস ট্রেডিং এর জন্য নিবন্ধিত নয়।" যা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, এই প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক লেনদেনের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রতারণাময়।

২. মার্জিন ভিত্তিক ব্যবসার গোলক ধাঁধা

আদতে MTFE কোনও পণ্য বা সেবার বেচাকেনা-ই করে না। বরং এটি নিছক একটি মার্জিনভিত্তিক ব্যবসা বৈ কিছুই নয়। তাদের ওয়েবসাইটের হোম পেইজে একেবারে নিচের অংশে Risk warning শিরোনামে লেখা আছে:- (তথ্য সংগ্রহের তারিখ: ১৩-৮-২৩)

Please keep in mind that financial products involve a high level of risk, and you may lose your entire principal. Margin trading may not be suitable for all investors, please ensure that you Towards a Halal & Sustainable Economy fully understand the risks involved. Before using our services, please read carefully our risk warnings, terms and conditions. Traders do not own the underlying assets and related rights and interests of the transaction.

মার্জিন ব্যবসার অর্থ-আপনি কোনও একটা পণ্যের নির্ধারিত সময়ের মার্কেট রেইটের উপর চুক্তি করবেন। নির্ধারিত সময় শেষে সেই রেইট উঠা-নামার ভিত্তিতে আপনার লাভ-লস নির্ধারিত হবে। অন্য ভাবে বললে-ফিউচার সেল।

এ ধরনের লেনদেনে শুভঙ্করের ফাঁকি হল:- বাহ্যত নানা পণ্য বা কমোডিটি দেখা যায়। আদতে পুরোটাই ফাঁকা। কেবল মার্জিনের উপর ট্রেডিং হয়। এ লেনদেনে বাস্তব কোন পণ্য, স্টক, সেবা কোন কিছুরই লেনদেন হয় না। কেবল রেইট বা মার্জিনের উপর ট্রেডিং হয়ে থাকে। আর এ ধরনের লেনদেন সম্পূর্ণ অবৈধ।

৩. সুদের উপস্থিতি
আলোচিত MTFE -এ প্রথমে নির্ধারিত ডিপোজিট করতে হয়। এরপর ভুয়া ট্রেডিং এর নাম দিয়ে সেই প্রদত্ত ডিপোজিটের উপর অতিরিক্ত প্রদান করা হয়। মাঝের ট্রেডিং যেহেতু ভুয়া, অস্তিত্বহীন, তাই প্রদত্ত ডিপোজিটের উপর লব্ধ আয় সরাসরি সুদ বা রিবা বলে বিবেচিত হবে।

MTFE কি বৈধ?  এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার হুকুম কি?

৪. শরিআহ পরিপন্থী প্রডাক্টের লেনদেন

যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, এখানে কোন কৃত্রিম লেনদেন হয় না বরং সরাসরি ক্রয়-বিক্রয়ই হয় তবুও এখান থেকে হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জনের কোন সুযোগ নেই। কারণ, এখানে যেসব প্রডাক্টের লেনদেন হয় তা শরিআহসম্মত নয়। মোটা দাগে ০৫ ক্যাটাগরির প্রডাক্ট লেনদেন হয়ে থাকে। যথা- ফরেক্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি, কমোডিটি, স্টক, ইনডেক্স। এগুলোর প্রত্যেকটিতে বিভিন্ন শারিয়াহ সমস্যা রয়েছে। বিস্তারিত নিম্নরূপ-

৪.১. ফরেক্স ট্রেডিং:

MTFE তে তালিকাভূক্ত একটি প্রডাক্ট হচ্ছে ফরেক্স ট্রেডিং। যদিও  ফরেক্স ট্রেডিং দ্বারা বুঝা যায় অনলাইনে মুদ্রা কেনা-বেচা। কিন্তু এখানে মুদ্ৰা বেচা-কেনা উদ্দেশ্য হয় না বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য বা রেইটের সূচক উঠানামা থেকে উপকৃত হওয়া। মুদ্রা কেনা-বেচার ক্ষেত্রে যে শারিয়াহ নীতিমাল রয়েছে সেগুলো তাতে রক্ষা করা হয় না। অ্যাওফি তাদের মুদ্রা লেনদেন ও ট্রেডিং সংক্রান্ত নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে:-

২/১/১ লেনদেনের উভয় পক্ষ লেনদেনের স্থান ত্যাগের পূর্বেই মুদ্রা হস্তগত করতে হবে। চাই সেই হস্তগতকরণটি প্রকৃতভাবে হোক অথবা বিধানগতভাবে হোক।
(শারিয়াহ স্ট্যান্ডার্ড নং: ০১)।

অথচ ফরেক্স ট্রেডিংয়ে এটিসহ বিভিন্ন শারিয়াহ নীতি লঙ্ঘন হয়।

MTFE কি বৈধ?  এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার হুকুম কি?

৪.২. ক্রিপ্টোকারেন্সি

MTFE তে ট্রেড করার মত আরেকটি জনপ্রিয় প্রোডাক্ট হল ক্রিপ্টোকারেন্সি। এতে প্রচলিত ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনও রয়েছে। বিটকয়েন ছাড়াও এতে যে ভার্চুয়াল মুদ্রাগুলো রয়েছে তা হল:- ১. LTC, 2. ETH, 3. ADA, 4. ETFC, 5. LOTC ইত্যাদি। শরীয়তে এগুলো নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

৪.৩. কমোডিটি, স্টক, ইনডেক্স:

আন্তর্জাতিক কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে নানা কমোডিটি ট্রেডের দাবি করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নানা কোম্পানির স্টক ক্রয়, আন্তর্জাতিক ইনডেক্স ক্রয়েরও দাবি করা হয়। মূলত শারিয়াহর দৃষ্টিতে কমোডিটি, স্টক, ইনডেক্স প্রডাক্টের লেনদেনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এসব ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে সেসব শারিয়াহ স্ক্রিনিং অনুসরণ করা হয় না। মোটকথা এসব প্রডাক্টের লেনদেনও এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নাজায়েয।

সুতরাং যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, MTFE অ্যাপে কৃত্রিম লেনদেন হচ্ছে না বরং বাস্তবেই ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে তারপরও উপরোক্ত বিবরণের আলোকে উক্ত কারবারকে শারিয়াহসম্মত বলার সুযোগ নেই।

৬. পণ্য হস্তগত করা ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয়

সাধারণত কোনো কিছু বিক্রয় করার আগে এবং ক্রয়ের পর শরীয়তে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবধারিত করে দিয়েছে। তা হল-পণ্য বা বেচাকেনার সাবজেক্ট হস্তগত করা। পরিভাষায় একে 'হস্তগত' (القبض) বলে। কিন্তু mtfe তে পণ্য হস্তগত হয় না।

৫. মালিকানা ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয়

কোনো পণ্য বিক্রয়ের আগে সেটি বিক্রেতার পূর্ণ মালিকানায় থাকা জরুরী। কিন্তু এখানে কেবল সেই ব্লকড রেইট এক্সচেঞ্জ করা হয়। নির্ধারিত সময় পর রেইট পরিবর্তন হয়ে যায়। এবার এই দুই রেইটের এক্সচেঞ্জ থেকে যে মার্জিন আসে, সেটিকে লাভ হিসাবে বা লোকসান হিসাবে দেখানো হয়। সুতরাং এই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার পণ্য-মালিকানা লাভ হয় না। বরং মার্জিন ভাগাভাগি করাই মৌলিক উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। হাদীসে স্পষ্ট এসেছে-
لا تبع ما ليس عندك

“যা তোমার কাছে নেই, তা বিক্রয় করবে না।
(তিরমিজি হাদিস নং- 1232, আবু দাউদ হাদিস নং- ৩৫০৩)

আরও পড়ুন: মুজাদ্দিদ কারা? মুজাদ্দিদের পরিচয় কি?

সারকথা:

উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, উপরোক্ত নানা শারিয়াহ নিষিদ্ধতার কারণে MTFE অ্যাপের সাহায্যে ট্রেড করে বা রেফার করে আয় করা শারিয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নয়। বরং তা সুস্পষ্ট একটি হারাম লেনদেন। ইসলামি ফিকহের পরিভাষায় নিষিদ্ধ রিবা, গারার, ক্বীমারসহ বহু শারিয়াহ নিষিদ্ধ কারণ বিদ্যমান রয়েছে। তাই একজন মুসলিম হিসেবে এ ধরনের অবৈধ লেনদেন পরিহার করা জরুরী।

আল্লাহু আ'লাম।

Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন