হাদিয়ে জামান পীর হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী আল ফুরফুরাবী (র) এর পরিচয়ঃ
❑ জন্মঃ ১৫ এপ্রিল ১৮৪৫
❑ মৃত্যুঃ ১৭ মার্চ ১৯৩৯ (বয়স ৯৩)
মাজার শরিফ: ফুরফুরা শরিফ, হুগলি জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
❑ সন্তান : ৫ ছেলে (৫হুজুর কেবলা)
❑ জন্ম ও শিক্ষা:
পীর মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (র)পাক-ভারত উপমহাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ পীর, ধর্ম প্রচারক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি হযরত মুহম্মদ(স)এর প্রথম খলিফা আমীরুল মুমেনীন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা)এর বংশধর, এহেতু তিনি সিদ্দিকী উপাধিতে ভূষিত হন।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর নিম্নতম ৩০ পুরুষ পীর মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক ফুরফুরাবী (র)। তার বংশের ঊর্ধতন পুরুষ হযরত মাওলানা জিয়াউদ্দিন জাহেদ (রহঃ) ইসলাম প্রচার মানসে আরব দেশ থেকে ভারতে এসে বসবাস শুরু করেন। হুজুরের সাহেবজাদা (পুত্র) হযরত মনসুর বাগদাদী (র) ৭৪১ হিজরী মোতাবেক ১৩৪০ বংগাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর শাসনকালে বাগদাদ শরীফ থেকে ইসলাম প্রচারার্থে বংগদেশে এসে হুগলী জেলার অন্তর্গত মোল্লাপাড়া নামক গ্রামে বাস করেন, যিনি ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) এর ১৬শ অধস্তন পুরুষ ।
তার নিম্নতম অষ্টমপুরুষ কুতুবুল আকতাব হযরত মাওলানা মোস্তাফা মাদানি (র) যুগ শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ ও কামেল ওলী ছিলেন, তিনি অসাধারণ রূহানী শক্তির বলে এক ভবিষৎবাণী করেন যে, আমার ষষ্ঠ পুরুষের পর এমন একটি পুত্র জন্মগ্রহণ করিবে যে উচ্চস্থরের ওলি হবে। যখন সারা বাংলা আসাম শিরক বেদয়াতে নিমগ্ন হয়ে পড়বে, তখন ওই পুত্রের দ্বারা সকল প্রকার কুসংস্কার দূরীভূত হবে। সারা ভারত এমনকি আরব পর্যন্ত তার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
বলাবাহুল্য,হযরত মোস্তফা মাদানি (র) এর সেই ভবিষৎবাণী পরবর্তীকালে বাস্তবায়িত হয়েছিল।
** হযরত মাওলানা মোস্তাফা মাদানি (রহঃ) ছিলেন হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রহঃ) এর সাহেবজাদা খাজা মোহাম্মাদ মাসুম (রহঃ) এর মুরিদ। একই দিনে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব (রহঃ) এবং হযরত মোস্তফা মাদানী (রহঃ) বায়অাত গ্রহন করেন।হযরত খাজা মোহাম্মাদ মাসুম (রহঃ) কতৃক হযরত মোস্তফা মাদানী (রহঃ) কে লিখিত ২ টি চিঠি মকতুবাতে মাসুমীয়া কিতাবে উল্লেখ আছে।
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব (রহঃ) বর্তমান মেদেনীপুর শহরে একটি মসজিদ সমন্বিত মহল ও বহু লাখেরাজ সম্পত্তি হযরত মোস্তফা মাদানী (রহঃ) কে দান করেন। হযরত মোস্তফা মাদানী ( রহঃ) এর নামেই মাদানীপুর নামকরন করা হয়।পরে পরিবর্তিত হয়ে অপভ্রংশ হিসেবে মেদেনীপুর নাম হয়।
হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (র) আরবী ১২৬৩ হিজরীতে ১৮৪৫ ইং হিন্দুস্তানের হুগলী জেলার ফুরফুরা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।
নিজ হাতে করা দস্তখত |
❑ হুজুরের পিতার নাম মাওলানা আব্দুল মুক্তাদির (র)। মাত্র নয় মাস বয়সে তার পিতা ইন্তেকাল করেন। ইয়াতিম সন্তানকে নিয়ে আম্মাজান বিবি মুহাব্বাতুন্নেসা তার পূর্ন লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন তার পিতার একমাত্র সন্তান।
❑ হুজুর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি প্রথমে গ্রাম্য মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষার পর সিতাপুর মাদ্রাসা ও পরে হুগলী মোহসিনিয়ায় অধ্যায়ন করেন শেষোক্ত মাদ্রাসা থেকে তিনি কৃতিত্বপূর্ণ ভাবে জামাতে উলা (ফাজিল) পাস করেন।
❑ অতঃপর হুজুর কোলকাতা সিন্ধুরিয়া পট্টির মসজিদে হাফেজ মাওলানা জামালুদ্দিন সাহেবের নিকট তাফসীর,হাদীস, ও ফিকহে অধ্যয়ন করেন। হাফিজ সাহেব শহীদ সাইয়েদ আহমদ বিরলভী (র)এর খলিফা ও তার সংগঠিত মুজাহিদ আন্দোলনের সহচর ছিলেন।
❑ অতঃপর ফুরফুরার পীর সাহেব নাখোদা মাসজিদের মাওলানা বেলায়েত আলীর কাছে মান্তেক, হিকমত ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। প্রায় ২৩/২৪বছর বয়সে তিনি ইসলামী ইলমের বিভিন্ন শাখায় ব্যুৎপ্তত্তি লাভ করেছিলেন।
❑ তারপর তিনি মক্কা ও মদিনায় গমন করেন।তথায় তিনি হাদীসশাস্ত্রে অধ্যায়ন করেন এবং রওজা শরীফের খাদেম বিখ্যাত আলিম আদ-দালায়েল আমিন রেদওয়ান এর কাছ থেকে ৪০টি হাদীস গ্রন্থের সনদ (সার্টিফিকেট) লাভ করেন।
❑ অতঃপর দেশে ফিরে একাদিক্রমে ১৮বছর তিনি ব্যক্তিগত ভাবে অধ্যায়ন ও গবেষনা করে ঈলমে দীন সম্পর্কে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
আরও পড়ুন: ইসলামে গায়েবানা জানাযার বিধান
❑ হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রহঃ) বায়াত গ্রহন করেন হযরত শাহ সূফী ফতেহ আলী ওয়েসী (রহঃ) এর নিকট।
❑ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (রহঃ) নিজ বইয়ে হুজুরের ১৫ জন প্রাধান খলিফার নাম উল্লেখ করেছেন।
যেমন: ছরছীনা শরীফের হযরত শাহ সূফি নেছার উদ্দিন আহমদ (রহঃ) প্রমুখ। হযরত
আব্দুল হাই সিদ্দিকী (রহঃ) ,
হযরত শাহ সূফী সদরুদ্দিন (রহঃ),
অধ্যাপক আব্দুল খালেক (রহঃ)
❑ উল্লেখ্য আমাদের এ ছারছীনা দরবার শরীফ ফুরফুরা মাসলাকের হুবহু অনুসারী। আমাদের আকিদা আদর্শ ফুরফুরা শরীফের মোজাদ্দিদে জামান আবু বকর সিদ্দিক আল কুরাইশী রহমাতুল্লাহ আলাইহির আকিদা আদর্শ। তার প্রধান খলিফা আল্লামা নেছার উদ্দিন আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির আকিদা আদর্শ। শতাব্দী ধরে চলে আসা এই সিলসিলায় কোনরূপ পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়নি।