তরিকায়ে মুহাম্মদীয়া কি?
ছারছীনা পীর সাহেব এবং বড় সাহেবজাদা। |
আমাকে জনৈক ভাই বলেছিলেন বিদায়াতিদের নিয়ে লিখতেছেন, ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন তো? জিজ্ঞেস করলাম সমস্যা কি? উনি বললেন ওরা মারাত্মক পর্যায়ের অজ্ঞ থাকে এবং অপবাদে সিদ্ধহস্ত।
আমিরে হিযবুল্লাহ ছারছীনা দরবার শরীফের আ'লা হযরত পীর সাহেব হুজুর কেবলার বাইয়াতের মধ্যে চিশতীয়া, ক্বদরীয়া, নকশবন্দিয়া,মুজাদ্দিদীয়া মুহাম্মাদীয়া তারিকার বাইয়াত গ্রহন করেন।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রচলিত ধারার বাহিরে লেখায় প্রথমত অনেকেই ভুল বুঝেছিলেন; তখন অনেকেই ওহাবী,নজদী,তাইমি বলে অপবাদ দিয়েছিলো। সেখানে একজনের কমেন্ট দেখেছিলাম উনি লিখলেন, 'বাইয়াতের মধ্যে আওর মুহাম্মাদীন" বলে কি বুঝাতে চায় সেটা আগেই বুঝেছি। আপনারা মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল ওহাব নজদীর নামানুসারে মুহাম্মাদীয়া তরিকা বানিয়ে নিয়েছেন। তখনই জনৈক ভাইর কথাগুলো ভালোভাবে উপলব্ধি করেছিলাম। যদিও বহু আগ থেকেই বিদায়াতীরা সায়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলবী রঃ কে এ দেশে ওহাবী মতবাদের আমদানি কারক হিসেবে প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর।
সাধারনত তরিকাগুলোর নাম, স্ব স্ব তরিকার একজন বড় সালেকের নামানুসারে পরবর্তী সালেকরা নামকরণ করেছেন। যেমন:
চিশতীয়া- মাঈনুদ্দীন চিশতী রঃ এর নামানুসারে।
ক্বাদরীয়া- আব্দুল কাদির জিলানী রঃ এর নামানুসারে।
নকশবন্দিয়া- বাহাউদ্দীন নকশবন্দিয়া র: এর নামানুসারে।
মুজাদ্দিদীয়া- মুজাদ্দিদে আলফে সানী রঃ এর নামানুসারে।
মুহাম্মাদীয়া- সায়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলবী র: মাধ্যমে।
পীর সাহেব ফুলতলী দরবার শরীফ। |
প্রশ্ন হলো;সায়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলবী রঃ কেন চার তরিকার বাহিরে নতুন তরিকা প্রবর্তন করেছেন। এক বাক্যে যদি বলতে হয় তাহলে বলবো ‘তরিকায়ে মুহাম্মদীয়া’ হলো চিশতিয়া, ক্বাদরীয়া, নক্শবন্দিয়া ও মুজাদ্দেদীয়া তরিকার সার নির্যাস। পূর্ববর্তী চারটি তরিকাতে শুধু হিদায়তের বাইয়াত গ্রহণ করা হতো। কিন্তু সায়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলবী রঃ এর আন্দোলন ছিলো প্রধান তিনটি বিষয় কে কেন্দ্র করে;
☞ দ্বীনী সংস্কার আন্দোলন।
☞ আধ্যাত্মিক আন্দোলন।
☞ সশস্ত্র জি/হাD।
প্রথম বিষয়;দ্বীনী সংস্কার আন্দোলন। এ বিষয়ের উদাহরণ হিসেবে আমরা ইসলামী তাহজীব-তামাদ্দুন, পোষাক-পরিচ্ছেদ, কবর পূজা সহ নানা ধরণের শিরক বিদআতের উচ্ছেদ, হজ্জের ফরজিয়াত সম্পর্কে প্রচলিত অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে অবস্থান এবং স্বদলবলে হজ্জ পালন, বিবাহ প্রথা সংশোধন, হিন্দুয়ানী বেশ-ভূষা ও রীতি-নীতি থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের উদাহরণ পেশ করতে পারি।
দ্বিতীয় বিষয়;আধ্যাত্মিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের উদাহরণ হিসেবে এখন পর্যন্ত ত্বরান্বিত গতিতে চলমান ভারতীয় উপমহাদেশের হক্কানী সিলসিলা ও দরবার শরীফগুলোর উদাহরণ পেশ করতে পারি। ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশের ফুরফুরা, ছারছিনা, ফুলতলী, জৈনপুরী, নারিন্দা, সোনাকান্দা-সহ এদেশের সিংহভাগ হক্কানী সিলসিলাগুলোর পূর্বসূরীরা হজরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রহ. এর অনুসারী।
আরও পড়ুন: মুজাদ্দিদ কারা? মুজাদ্দিদের পরিচয় কি?
তৃতীয় বিষয়; সশস্ত্র জি/হাD এর উদাহরণ হিসেবে আমরা ৬ মে ১৮৩১ সালের ঐতিহাসিক বালাকোটের উদাহরণসহ অসংখ্য সশস্ত্র সংগ্রামের উদাহরণ পেশ করতে পারি। ঐতিহাসিক বালাকোটের যুদ্ধে সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রঃ এর নেতৃত্বে ৭০০ মুজাহিদ শিখ সেনাপতি রনজিৎ সিং-এর ১০, ০০০ শিখ সৈন্যের সাথে মোকাবিলা করে জয় লাভ করেন।
শুধুমাত্র হিদায়াতের বাইয়াত গ্রহনের বাহিরে অতিরিক্ত দুইটি বিষয়ের বাইয়াত গ্রহণের কারনে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি না-চাইলেও পরবর্তীতে তাঁর নামানুসারে হয়তো তার এই নতুন আন্দোলনের নাম করন হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি জীবিত থাকাকালীন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নামানুসারে এই তরিকার নামকরণ করলেন 'তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়া'।
ফুটনোটঃ এই ব্লগে দুইটি বিষয় বুঝতে পারবেন;
১। পীরেরা গনতান্ত্রিক জি/হাD নামক নতুন প্রতারণার সাথে শামিল না হয়ে প্রতিনিয়ত
জি/হাDর বাইয়াত গ্রহণ করতেছেন।
২। বিদায়াতীদের অসার দাবী এবং মিথ্যা অপবাদগুলো বুঝতে পারবেন।