১.তিয়ানশি (TIENS) কী?
তিয়ানশি একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি। তিয়ানশির বাংলাদেশে আবির্ভাব ২০০৪ সালে। বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার বয়স প্রায় ১৮ থেকে ১৯ বছর। চিনা এ কোম্পানিটি ২০০৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধিনে রেজিষ্ট্রেশনভুক্তির দাবী করলেও তা'যে মিথ্যা এবং প্রবঞ্চনা তা একবারে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ২০১৫ সালের দিকে বাংলাদেশের প্রায় ১৮টি দৈনিক পত্রিকা এদের প্রতারণা নিয়ে কলাম ছেপেছে। আমি নিচে একটি কলামের শিরোনাম যুক্ত করে দিলাম। বাকিগুলো আপনারা গুগল থেকে দেখে নিবেন।
★ (লাইসেন্সবিহীন এমএলএম কোম্পানির রমরমা ব্যবসা
আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী
Published: 19 Jun 2015, 01:57)
২:১. তিয়ানশির কার্যক্রম:
তিয়ানশিতে জয়েন করতে হলে ২১২০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, বিনিময়ে আপনাকে তারা সমমূল্যের নামমাত্র পণ্যের ক্রেতা-পরিবেশক বানায়ে দিবে। তার মধ্যে থাকবে পেস্ট,তেল,ভিটামিন ক্যাপসুল, হারবাল চা, ডায়েট চা,ডায়াবেটিস চা ইত্যাদি।
কিন্তু মজার বিষয় হলো; আপনি তাদের কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আপনার উপরে সাত লেভেল (ফোর,ফাইভ,সিক্স,সেভেন স্টার) পর্যন্ত কমিশন খাবে ৪% করে প্রায় ১৬০০ টাকা। তাহলে কি দাড়ালো! আপনাকে মুরগী বানিয়ে ৫২০ টাকার মুলা (পন্য) ধরিয়ে দিয়ে তারা ১৬০০ টাকা নিয়ে গেলো🙄।
২:২.আপনাদের কে একটু সহজে এমএলএম ব্যবসা বুঝিয়ে বলি; ধরুন, ‘ক’ নামক ব্যক্তিকে গ্রাহক (ক্রেতা-পরিবেশক) বানাল। এরপর ক নামক লোকটি উক্ত শর্তে খ ও গ নামক আরো দুজনকে কোম্পানির ক্রেতা-পরিবেশক বানাল। অতপর খ ও গ প্রত্যেকে কোম্পানিতে ভেড়াল যথাক্রমে ঘ, ঙ এবং চ, ছ কে। এভাবে প্রত্যেক নতুন ব্যক্তি দুজন করে ক্রেতা, কোম্পানিতে নিয়ে আসবে। উপরোক্ত উদাহরণে ক নামক ব্যক্তি যেমনিভাবে খ ও গ নামক ব্যক্তিকে জোগাড় করার জন্য কোম্পানি থেকে কমিশন পাবে তেমনি স্থলবর্তী প্রত্যেক ব্যক্তি তথা ঘ, ঙ, চ, ছ সহ আরো যতজন এ লাইন দুটিতে নীচের দিকে যোগ হবে তাদের প্রত্যেকের অন্তর্ভুক্তির জন্য কোম্পানি তাকে বোনাস টাকা প্রদান করবে। এভাবে আপ লেভেল বা উপরের স্তরের ক্রেতাগণ ডাউন লেভেল তথা নিম্নস্তরের পরিবেশকদের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে থাকবে।
২:৩, তিয়ানশির ব্যবসায়ীক কার্যক্রম প্রায় এমএলএম কোম্পানির মতোই। অর্থাৎ আমি সুস্থ থাকার জন্য সর্বপ্রথম ৩০০ ডলারের (২৪০০০ টাকা) পণ্য ক্রয় করে থ্রি স্টার (three stars) অর্জন করব। তারপর আমি কোম্পানির যেসব পণ্য ক্রয় করব তা থেকে ঐ পণ্যের মূল্যের ২০% হারে ছাড় পাব। নিয়মটা ঠিক এরকম, আমি নির্দিষ্ট দামেই পণ্য কিনব। তবে পরবর্তীতে তা থেকে মূল্যের ২০% আমার একাউন্টে চলে আসবে। আমার মাধ্যমে অন্য কেউ ক্রয় করলেও ঠিক এ রকম। এরপর আমি ৪ জনকে থ্রি স্টার বানাব। আর তাদের থেকে নির্দিষ্ট পয়েন্ট পেয়ে আমি হয়ে যাব ফোর স্টার (four stars)। এতে আমি সরাসরি যা কিনব তা থেকে পাব ২৪%। আর আমি যাদেরকে নিয়োগ দিয়েছি তাদের ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য থেকে পাব ৪%। এভাবে আমার ঐ ৪ জন ফোর স্টার হয়ে গেলে আমি হবো ফাইভ স্টার। পণ্যের মূল্যের ২৪% লাভ পাব। আর আমার নিচের লোকদের থেকে পাব ৪% ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এক সময় তা ৪০% পর্যন্ত যাবে।
২:৪, এমএলএম এবং তিয়ানশীর পার্থক্য কোথায়?
এখন পর্যন্ত আমি এটা বুঝতে পারছি এম এল এম কোম্পানি প্রোভাইট করে (ক্রেতা এবং পরিবেশক) কে এবং পক্ষান্তরে তিয়ানশী প্রোভাইট করে; সেবা,ক্রেতা,পরিবেশক কে। সেবা নামক নতুন পলিসি যুক্ত হওয়ায় তিয়ানশীর কার্যক্রম এমএলএম থেকে কিছুটা ভিন্ন তবে পলিসি ফাংশন একই ক্যাটাগরির।
৩:১, তিয়ানশীর (TIENS) কার্যক্রম শরয়ী বহির্ভূত :
উপরের আলোচনা থেকে আমরা তিয়ানশীর কার্যক্রমে মোটাদাগে নিন্মুক্ত বিষয়গুলো পাই-
ক) এক চুক্তিতে দুই চুক্তি।
খ) ক্রয়বিক্রয়ের সাথে শর্তারোপ।
গ) বিনাশ্রমে অন্যের সম্পদ গ্রাস করা।
ঘ) ধোঁকা, প্রতারণা।
ক) প্রথম সমস্যা ; এক চুক্তিতে দুই চুক্তির অস্তিত্ব। তিয়ানশীর কার্যক্রমের প্রাথমিক বিষয় টি আমরা মনযোগ দিয়ে আবার পড়ি, [আমি সুস্থ থাকার জন্য সর্বপ্রথম ৩০০ ডলারের (২৪০০০ টাকা) পণ্য ক্রয় করে থ্রি স্টার (three stars) অর্জন করব। তারপর আমি কোম্পানির যেসব পণ্য ক্রয় করব তা থেকে ঐ পণ্যের মূল্যের ২০% হারে ছাড় পাব। নিয়মটা ঠিক এরকম, আমি নির্দিষ্ট দামেই পণ্য কিনব। তবে পরবর্তীতে তা থেকে মূল্যের ২০% আমার একাউন্টে চলে আসবে। ] এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো ক্রয় করার পরে আমার একাউন্টে ২০% আসতেছে, এই ২০% আসার চুক্তিটি ক্রয় চুক্তির মধ্যে নতুন চুক্তি। আর এটা ফিকহী হানাফির দৃষ্টিতে অবৈধ।
খ) দ্বিতীয় সমস্যা ; ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে নতুন শর্তারোপ- তিয়ানশীর কার্যক্রমের এই অংশটি আমরা আবার পড়ি, [ তিয়ানশিতে জয়েন করতে হলে ২১২০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, বিনিময়ে আপনাকে তারা সমমূল্যের নামমাত্র পণ্যের ক্রেতা-পরিবেশক বানায়ে দিবে। তার মধ্যে থাকবে পেস্ট,তেল,ভিটামিন ক্যাপসুল, হারবাল চা, ডায়েট চা,ডায়াবেটিস চা ইত্যাদি। ] এখানে সমস্যা হলো- ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে নতুন শর্ত "রেজিষ্ট্রেশন" নামক নতুন শর্তারোপ আরোপ করা। (যদি-ও ইনিয়েবিনিয়ে এই সমস্যা টা বৈধ করা যায় কিন্তু এতে মূল সমস্যা থেকেই যায়।
গ) তৃতীয় সমস্যা; বিনাশ্রমে অন্যের সম্পদ গ্রাস করা। আপনি ফোর স্টার হলে তৃতীয় স্টারের পন্যের লাভ আপনাকে কেন দেওয়া হবে? ফাইভ স্টার হলে ফোর স্টারের পন্যের লাভ আপনি কেন পাবেন? এভাবে ক্রমানুসারে আপ স্টারের লোক ডাউন স্টারের লাভ কেন পাবেন? এই শ্রমহীন অন্যের সম্পদ গ্রাস কখনোই ইসলামি ফিকহে গ্রহনযোগ্য নয়।
ঘ) চতুর্থত; ধোঁকা, প্রতারণা।
ঘ:১. প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্ন দেখানো ঠিক আছে। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিষয়টা ঠিক নয়।
ঘ:২. কথা দিয়ে কথা বার বার ভঙ্গ করে। যেমন,ধরেন কেউ আপনার মাধ্যমে কোম্পানির প্রডাক্ট ক্রয় করার জন্য অগ্রিম টাকা দিল। আপনি ঐ টাকা আপনার আপলাইন বা আপনার লিডারকে দিলেন। এখন আপনার ভাগ্য ভালো হলে উনি আপনাকে সাথে সাথে প্রডাক্ট দিয়ে দিবে। কিন্তু যদি কোনো তারিখ দেয় তাহলে ধরে নিবেন এবার তারিখের উপর তারিখই আসবে। আপনিও এই মোতাবেক আপনার পরিচিত ব্যক্তিকে তারিখের উপর তারিখ দিবেন। এতে আপনার জবানের মূল্য দিন দিন হ্রাস পাবে।
ঘ:৩. আয়ের তুলনায় খরচ বেশি। আপনি হয়তো কিছু আয় করবেন ঠিকই। তবে আপনার প্রায় আয়ের সমপরিমাণ খরচ-ও হয়ে যাবে। এখানে সেখানে যাওয়া, ট্রেনিং করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঘ:৪. আপনি যদি ভবিষ্যৎ টাকার কথা চিন্তা করেন, তাহলে আপনি আপনার উপরের যে লিডার আছে উনার বাসার অবস্থা দেখে অনুমান করতে পারবেন। সে এতো কষ্ট আর সফলতার কথা শুনিয়ে তার পারিবারিক আর্থিক অবস্থা এতো করুন কেন? দিন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা কেন?
এগুলো আমি বাহ্যিক ধোঁকা দেখিয়েছি। ফিকহের সাথে সাংঘর্ষিক প্রবঞ্চনা একটু ডিপলি আলোচনা করতে হবে। আবার এ আলোচনা সবার বোধগম্য-ও হবে না তাই এড়িয়ে গেলাম।
আলেমদের জন্য নিচে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া সংযুক্ত করে দিচ্ছি-
Question: 18698
میں ایک کاروبار کرنا چاہتاہوں۔کاروبار یہ ہے میں دینی بیان کی آڈیو سی ڈی جس میں معتبر علماء کے بیان ہوں گے کو سو روپیہ کی قیمت میں ایک شخص کو بیچوں گا اور اس سے کہوں گا کہ آپ اس سی ڈی کو صرف دو لوگوں کو فروخت کردو اس کے بدلے میں اس شخص کو میں بیس روپیہ دوں گا۔ دو لوگوں کے جن کو اس شخص نے سی ڈی بیچی ہے اس طرح جب وہ دو لوگ چار لوگوں کو سی ڈی بیچیں گے تو میں اس کے بدلے میں پہلے شخص کو پھر بیس روپیہ دوں گا، یعنی ایک شخص کے پانچ روپیہ چار کے بیس روپیہ ،پھر وہ چار لوگ آٹھ کو سی ڈی بیچیں گے تو پہلے شخص کو بیس روپیہ دوں گا اس طرح سلسلہ چلتا رہے گا ،اور اس سلسلہ میں سب کو منافع ملتا رہے گا جتنے لوگ اس سے جڑتے جائیں گے۔ اس میں مجھ کو ایک سی ڈی پر پچیس روپیہ کا منافع ہوگا۔ یہ ایک ملٹی لیول مارکیٹنگ کاروبار کا تصور ہے، کیا کاروبار کرنا جائز ہے؟ اس میں دین کا بھی فائدہ ہوگا لوگ اگر دین کی بات سن کر عمل کریں گے تو جتنے لوگ جڑیں گے سب کو فائدہ ہوگا۔ ایسا کوئی کاروبار کرسکتے ہیں یا نہیں؟
07 Feb, 2010
Answer: 18698
فتوی(ب): 197=198-2/1431
مذکورہ بالا طریقہ پر سی ڈی کو فروخت کرنا اور اس کے بدلے میں مزید پیسے دینا شرعاً درست نہیں۔ یہ ملٹی لیول مارکیٹنگ کاروبار کا تصور ہماری اسلامی شریعت میں جائز نہیں ہے۔
والله تعالیٰ اعلم
دارالافتاء، دارالعلوم دیوبند
শেষকিছু প্রশ্ন-
১) ওদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক বা পুরস্কার ছবি কিভাবে আসলো?
২) তিয়ানশি যদি বাংলাদেশে অবৈধ হয়,তাহলে ব্যাবসা কিভাবে চলছে?
আরও পড়ুন: MTFE কি বৈধ? এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার হুকুম কি?
অবৈধ ইয়াবা ব্যবসা যেভাবে চলে! যেভাবে দেশের টপ সন্ত্রাসীরা এম,পি মন্ত্রীর সাথে প্রোগ্রামে এডেন্ড করে ঠিক একই ভাবেই এরা ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আর প্রিন্টমিডিয়া এবং তথ্য প্রযুক্তির এ-যুগে পদক বা পুরস্কারের কথা নতুন করে বলার কিছুই নেই। সচেতন যে কেউ এটা সহজে উপলব্ধি করতে পারবেন।
সম্মানিত আলেম সমাজের কাছে অনুরোধ থাকলো উল্লেখিত লেখায় কোন ডাউট থাকলে আমাকে ই-মেইল করে জানাতে পারেন। প্রয়োজন মনে হলে এই ভাইরাসে সংক্রামিতদের কাছে লেখাটি শেয়ার করতে পারেন।
আল্লাহু আ'লাম।