আখেরী চাহার সোম্বা কি এবং কেন?

আখেরী চাহার সোম্বার ফযিলত কি?

আখেরি চাহার সোম্বা। আবহমান কাল থেকে চলে আসা এদেশের মুসলিম সংস্কৃতির অন্যতম উপলক্ষ। হিজরী সনের দ্বিতীয় মাস হলো সফর। এই মাসের শেষ বুধবারকে বলা হয় ‘আখেরি চাহার সোম্বা।’ আখেরি চাহার সোম্বা আরবি ও ফারসি শব্দের সংমিশ্রণে গঠিত। ‘আখেরি’ শব্দটি আরবি এর অর্থ হলো শেষ। আর ফারসি শব্দ ‘চাহার সোম্বা’ অর্থ হলো বুধবার। কোনো কোনো ঐতিহাসিকরা বলেছেন, রাসুল (সা.) সফর মাসের শেষ বুধবারে গোসল করেছিলেন এবং কিছুটা সুস্থতা লাভ করেছিলেন। এসংক্রান্ত বর্ণিত প্রায় প্রতিটি আলোচনা'ই ধোঁয়াশাপূর্ণ।


আখেরী চাহার সোম্বা কি এবং কেন?

প্রথমত:-

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুস্থতা নিয়ে রয়েছে ইখতেলাফ। যেমন,রাসূল সাঃ সুস্থ হয়েছেন-
★সফরের শেষে।
★রবিউল আউয়ালের প্রথমে।
★রাসূল সাঃ অসুস্থ হয়ে আর পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন নি। তবে বুখারী শরীফের একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য সুস্থ হয়েছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন,

وَكَانَتْ عَائِشَةُ زَوْجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم تُحَدِّثُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا دَخَلَ بَيْتِيْ وَاشْتَدَّ بِهِ وَجَعُهُ قَالَ هَرِيْقُوْا عَلَيَّ مِنْ سَبْعِ قِرَبٍ لَمْ تُحْلَلْ أَوْكِيَتُهُنَّ لَعَلِّيْ أَعْهَدُ إِلَى النَّاسِ فَأَجْلَسْنَاهُ فِيْ مِخْضَبٍ لِحَفْصَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ طَفِقْنَا نَصُبُّ عَلَيْهِ مِنْ تِلْكَ الْقِرَبِ حَتَّى طَفِقَ يُشِيْرُ إِلَيْنَا بِيَدِهِ أَنْ قَدْ فَعَلْتُنَّ قَالَتْ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى النَّاسِ فَصَلَّى بِهِمْ وَخَطَبَهُمْ.

নবীজি (সা.) হজরত আব্বাস (রা.) ও অপর একজন সাহাবির ওপর ভর করে একদিন ঘর থেকে বের হলেন। নবীজি যখন আমার ঘরে প্রবেশ করেছিলেন, তখন তার অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার ওপর বাঁধন খোলা হয়নি, এমন সাত মশক পানি ঢাল, যেন আমি সুস্থ হয়ে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। এরপর আমরা তাকে হজরত হাফসা (রা.) এর একটি বড় গামলায় বসালাম। তারপর আমরা উক্ত মশক হতে তার ওপর ততক্ষণ পর্যন্ত পানি ঢালতে লাগলাম যতক্ষণ না তিনি তার হাত দ্বারা আমাদের ইশারা করে জানালেন যে, তোমরা তোমাদের কাজ সম্পন্ন করেছ। এরপর তিনি মসজিদে গিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে সালাত আদায় করেন এবং তাদের খুতবা প্রদান করেন। (সহিহ বোখারি : ৪৪৪২)।

দ্বিতীয়ত:-
যদি আমরা ধরে-ও নেই রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি পরিপূর্ণ  সুস্থ হয়েছিলেন। তবে সুস্থতার দিনটি ছিলো কি বার? সেটি নিয়ে-ও ইখতেলাফ।
★শনিবার।
★সোমবার।
★বুধবার।

আরও পড়ুন: ট্রান্সজেন্ডার কী? ট্রান্সজেন্ডার কারা?

এই পুরো দিবসটি পালিত হচ্ছে বার কেন্দ্রিক। অথচ সেই বার নিয়ে-ও রয়েছে ইখতেলাফ।

তৃতীয়ত:-
এদিবসের ফযিলত সংক্রান্ত বিষয়গুলো জাল। যেমন  সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুস্থতায় আনন্দ উল্লাসে প্রকাশ করে মুক্ত হস্তে দান করেছেন। যেমন বলা হয়-

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুস্থতা লাভের দরুন খুশি হয়ে-
★আবু বকর রাঃ ৭০০০ দিরহাম।
★ওমর রাঃ ৫০০০ দিরহাম।
★ওসমান রাঃ ১০০০০ দিরহাম।
★আলি রাঃ ৩০০০ দিরহাম।
★এবং আব্দুর রহমান আউফ রাঃ ১০০/৭০ মুদ খেজুর আল্লাহর রাস্তায় দান করেছিলেন।

তথ্যসূত্র-
মুকসুদুল মুমিন।
রাহাতিল ক্বুলুব।
সা'য়াদাতে আদাবিয়া।

একথাগুলোর কোন সনদ উপরিউক্ত কিতাবগুলো উল্লেখিত হয় নি। ফলে বলাই যায় একথাগুলোর ভিত্তি খুবই নড়বড়ে।

আলোচনার এ পর্যায়ে এসে আমরা বলতে পারি, 'আখেরী চাহার সোম্বা' নামক দিবসটি ইসলামী শরীয়তে স্বীকৃত নয়।


বিস্তারিত জানতে ভিডিও টি দেখতে পারেন-



Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন