ছারছীনা শরীফ।
ছারছীনা'র বর্তমান পীর সাহেব এবং বড় সাহেবজাদা। |
একটা কথা বলে নেওয়া ভালো । আমি কিন্তু প্রফেশনাল লেখক নই । পড়ে বিরক্ত হলে আমার দোষ নাই।😆
ইচ্ছা কইরা যখন বিরক্ত হতে আসলেন তাহলে প্যাঁচাল শুরু কইরা দেই। দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার পর এক বিজ্ঞজনের পরামর্শে ঢাকায় নাহু-ছরফের কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানকার ওস্তাদ-ছাত্ররা আমার পান্জাবী-টুপি দেখে বিদআতী মনে করে অন্য চোখে দেখত। কয়েকজন ওস্তাদ আমাকে বিদাআত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যথেষ্ট স্নেহ,মায়া-মমতা দেখিয়ে কাছে রেখে পড়াতেন এবং যতদিন ছিলাম ঘুমানো থেকে শুরু করে খাবার-দাবার,গোসল সব কিছুর খেয়াল রাখতেন। মাদ্রাসার প্রধান তার একান্ত খাদেম কে আমার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন।
যাক গে বেশি বললে মানুষ ভাববে কৌশলে নিজের ঢোল বাজাচ্ছি।🤓 আসল কথা শুরু করে দেই । একদিন দুপুরে খাবার সময় প্লেটেই বমি করে দিলাম। বাই দা রাস্তা একটা কথা বলে রাখি, সেখানে চার-পাচ জন মিলে এক প্লেটেই খায় (এটা সুন্নাহ সমর্থিত পদ্ধতি)। অভ্যাস না থাকায় সবার খারার মাটি করে দিয়ে উঠে গেলাম। আমার প্লেটের বাকি সবাই দায়িত্বশীল ওস্তাদের কাছে বিচার দিল(দায়িত্বশীল ওস্তাদ মুফতি শফী র: এর খলিফা ছিলেন এবং তিনি তাহাজ্জুদ গুজারী ছিলেন। নিয়মিত ছাত্ররা তাঁকে খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখত )। এ দিকে সবার খাবার নষ্ট করায় ভয়ে দোয়া দুরুদ যা পারছি এক খতম শেষ করছি। হঠাৎ প্রধানের খাদেম এসে বললেন বড় হুজুর আপনাকে ডাকছেন। ভয়ে ভয়ে তাঁর রুমে গিয়ে দেখলাম তিনি খাবার নিয়ে বসে আছেন। ভয়ার্ত চেহারা দেখে তিনি বললেন; আমাদের সাথে শরীক হোন। আমি কাচুমাচু হয়ে বসলাম।
খাবার শেষে খাদেমের মাধ্যমে দায়িত্বশীল ওস্তাদ কে ডেকে পরবর্তী বেলা থেকে আমাকে আলাদা প্লেটে খাবার দেওয়ার নির্দেশ করলেন। রাতে পড়ার পরে দায়িত্বশীল ওস্তাদ আমার ব্যাপারে বিস্তারীত জানার জন্য ডাকলেন। আমি ছারছীনা শরীফের পরিচয় দেওয়ার পরে ওস্তাদ বললেন; সেখানে তো অনেক বিদআত হয়। তোমাকে প্রধান হুজুর কি ভাবে চিনেন। আমি আগ বাড়িয়ে বললাম,তারা কি কি বিদায়াতে লিপ্ত? উত্তরে তিনি বললেন,তারা সুন্নাতের নামে অনেক বিদায়াত আমল করে (মীলাদ কিয়াম কে উদ্দেশ্য করেছেন)।
আমি বললাম তারা এ ধরনের আমল কে সুন্নাতে রাসুল মনে করেন না। বরং তারা মোবাহ সর্বোচ্চ মুসতাহসান মনে করে। আরো বললেন, শুনেছি সেখানের পীর অতবড় আলেমও নন। কিছুক্ষন চুপ করে আমাকে বিদায় করে দিলেন। ওস্তাদ অত্যান্ত মুখলিছ মানুষ । সে ছারছীনা হুজুরের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করায় আমার অনেক খারাপ লাগছিল । আমি নিজেকে এ বলে সান্তনা দিলাম; তিনি হয়ত ছারছীনা শরীফের ব্যাপারে বিস্তারীত জানেন না বিধায় এমন মন্তব্য করেছেন।
অগোছালো লেখা পড়ে এই পর্যন্ত যেহতু আসলেন,বাকিটাও পড়ুন।
শেষে মন্তব্য ঘরে কিছু লেখে যাইবেন।
পরের দিন ক্লাশ শেষে ওস্তাদ কে ছারছীনা শরীফের মরহুমে আউয়াল শাহ সূফি নেছারুদ্দীন আহমদ র: এর লিখিত বাংলা ভাষার সর্বপ্রথম মাসয়ালা মাসায়েলের পূর্নাঙ্গ বই “তরিকুল ইসলাম ১ম খন্ড“ সহ আরো দুইটা বই হাদিয়া দিলাম।
সপ্তাহখানেক পরে একদিন বিকালে আমাকে ডেকে বললেন; এটা কি নেছারুদ্দীন সাহেবের নিজের লেখা বই? আমি বললাম জ্বি। আমার উত্তর শুনে তিনি তা‘জ্জুব বনে গেলেন,বললেন তিনি তো একজন মাহের আলেম। মাহের আলেম ছাড়া এমন বই যে কেউ লিখতে পারেন না। সুযোগ পেয়ে আমি তার ভুলগুলো ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলাম। ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকে ছারছীনা শরীফের অবদানসহ সারাদেশব্যাপী ইলমী খেদমত গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আমার কথাগুলো তিনি মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন আর হতভম্ব হচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন;এমন দরবারে তো বিদায়াত থাকতে পারে না। তুমি ছারছীনা থাকাকালীন আমি একবার যাবো। এর পরে সুুযোগ পেলেই তিনি আমার কাছে ছারছীনা দরবারের পীরদ্বয়ের কারামত শুনতেন। পরে তিনি অন্যান্ন ওস্তাদদের এগুলো শুনাতেন।
আরও পড়ুন: বিবাহ বিচ্ছেদ কেন বাড়ছে?
খেয়াল করে দেখুন, কিছুুদিন পূর্বে যিনি না জেনে ছারছীনা শরীফ কে বিদায়াতের আখড়া মনে করতেন, সে তিনিই আমার কাছে সুযোগ পেলে ছারছীনা শরীফের গুনগান শুনতে চাইতেন। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র আল্লাহর রহমতে তার ইনসাফের দৃষ্টি থাকার কারণে। অনেকেই আছেন ছারছীনা শরীফের ব্যাপারে না জেনেই মন্তব্য করে বসেন। আমার পরিচিত একজন , তিনি কি কি কারণে ছারছীনা শরীফ কে বিদায়াত ধারক-বাহক বলেন,তার একটা লিষ্ট একবার ইনবক্সে দিয়েছিলেন। যার একটার ও কোন ভিত্তি নেই। না দেখে, না শুনে যারা ছারছীনা দরবার কে বিদায়াত,ভন্ড বলেন,তাদের কে বলবো দয়া করে একবার ছারছীনায় আসুন। পরে ইনসাফের সাথে যা ইচ্ছা তা মন্তব্য করবেন।
#ছারছীনাদরবারশরীফ