আমরা মুখের উপর কিছু বলে দেওয়া কে স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড বলি। এবং বুক টান টান করে এটা নিয়ে গর্ব-ও করি।
মুখের উপর কথা বলা।
গত কয়েকদিন পূর্বে মেশকাত শরীফে মুনাফেকের আলামত পড়াতে গিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে মনের অজান্তেই বলে ফেললাম; রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পিছনে উবাই ইবনু সুলুল নামাজ আদায় করেছে কিন্তু কখনো বলেন নি, 'তুমি মুনাফেক', বা কাউকে বলেন নি তুমি সুদখোর বা ঘুষখোর।
বরং তিনি সাঃ বলতেন, এই এই বিষয়গুলো মুনাফেকির সিমটম বা বৈশিষ্ট্য। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যথাক্রমে ১। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ২। যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে ৩। আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে (বুখারি শরীফ - ২৬৮২, সহিহ মুসলিম- ১/২৫)।
কাউকে মুনাফিক বলা যাবে?
অন্য হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَبدِ اللَّهِ بْنِ عَمرٍو، عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، أَنَّهُ قَالَ," أَرْبَعٌ مَنْ كنَّ فِيهِ كَانَ منَافِقًا، أَوْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلةٌ مِنَ الْأَرْبَعِ، كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا, إِذَا حَدَّث كَذبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخلَفَ، وَإِذَا عَاهدَ غَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ "
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তির মাঝে চারটি অভ্যাস থাকে তাহলে সে প্রকৃত মুনাফিক। কারো মাঝে এই চার অভ্যাসের কোনো একটি পাওয়া গেলে, তা ত্যাগ করা পর্যন্ত তার মাঝে নেফাকের একটি চিন্থ বিদ্যমান থাকবে। সেই চারটি অভ্যাস হলো-১। কোনো কিছুর আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে ২। কথা বললে মিথ্যা বলে ৩। ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে ৪। ঝগড়া করলে গালাগালি করে। ( বুখারি,মুসলিম)।
কখনোবা সুদ অথবা ঘুষের শাস্তি বর্ণনা করতেন। কিন্তু কাউকেই নাম ধরে মুখের উপর মুনাফেক বা সুদখোর অথবা ঘুষখোর বলতেন না। মুখের উপর নিন্দা করতেন না। এরপর থেকেই কারো মুখের উপর দু’কথা শুনিয়ে দেওয়া (স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড) নিয়ে শরীয়হর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমার জল্পনা কল্পনা শুরু হয়। সময়ের অভাবে বিস্তারিত পড়ার-ও সময় হচ্ছিল না।
আমার দৃষ্টিতে যেটা ভুল সেটা অপরজনের কাছে ভুল না-ও হতে পারে। দৃষ্টিকোণের ভিন্নতার দরুন একজনের ভুল অপরজনের কাছে সঠিক আবার অপরজনের কাছে ভুল বিষয়টি নিজের কাছে সঠিক মনে হতে পারে। কাজেই আমার দৃষ্টিতে ভুল কোন বিষয় নিয়ে বিস্তারীত না-জেনে কাউকে মুখের উপর দু’কথা শুনিয়ে দেওয়া কখনোই শোভনীয় নয়।
আরও পড়ুন: বিবাহ বিচ্ছেদ কেন বাড়ছে?
এ সংক্রান্ত অনেকগুলো হাদীস এবং কয়েকটি আয়াত একত্রিত করেছি। ফুরসত পেলে বিস্তারিত লিখবো ইনশাআল্লাহ। আপাতত পরিচিত একটি আয়াত দিয়ে লেখাটি শেষ করছি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَیۡلٌ لِّکُلِّ ہُمَزَۃٍ لُّمَزَۃِۣ ۙ
বহু দুঃখ আছে প্রত্যেক এমন ব্যক্তির, যে পেছনে অন্যের বদনাম করে (এবং) মুখের উপরও নিন্দা করে।
— সূরা আল হুমাযাহ - ১
বিঃদ্রঃ সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলা অথবা এক কথার মানুষ আর স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড নামক বেয়াদবী মনোভাব এক বিষয় নয়।