রাসূলুল্লাহ সাঃ ইন্তেকালের প্রায় ৬শ বছর পরে আবিষ্কৃত 'আনুষ্ঠানিক মিলাদুন্নবী উদযাপন' বিদায়াত হবে না, কেন?
৬শ হিজরিতে ইরবিল শহরের গভর্নর আবু সাইদ মুজাফফর আনুষ্ঠানিক মিলাদুন্নবী উদযাপন শুরু করেছিলেন। হাফিয ইবনু কাসীর (র.), যিনি উক্ত বাদশাহের সমসাময়িক ছিলেন- তিনি বলেন, বাদশাহ আবূ সাঈদ রবীউল আউয়াল মাসে মীলাদ মাহফিল করতেন এবং খুব গুরুত্বের সাথে তা উদযাপন করতেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, ১৩:৭)
রাসূলুল্লাহ সাঃ ইন্তেকালের ৬শ বছর পরে আনুষ্ঠানিক মিলাদুন্নবী উদযাপনের আবিষ্কার হয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, প্রত্যেক নতুন আবিস্কৃত বিষয় বিদায়াত আর প্রত্যেক বিদায়াত গোমরাহি। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর এ কথার মাফহুম না বুঝে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। বিদায়াত সম্পর্কে বিস্তারিত না জানাই এ অজ্ঞাতার মূল কারণ।
☞ইমাম শাফেয়ী (মৃত্যু:২০৪ হি) রঃ বলেন, বিদায়াত দুই প্রকার। ১. বিদায়াতে মাহমুদাহ । ২.বিদায়াতে মাযমুমাহ। যেসব আমল সুন্নাহর সাথে প্রাসঙ্গিক তা বিদায়াতে মাহমুদাহ এবং যেসব আমল সুন্নাহর সাথে অপ্রাসঙ্গিক তা বিদায়াতে মাযমুমাহ।
☞ইমাম আবু সুলাইমান খত্বাবী রঃ ( মৃত্যু ৩৮৮ হিজরী) আবু দাউদের শরাহয় বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বাণী, 'প্রত্যেক নতুন আবিস্কৃত বিষয় বিদায়াত' এই কথাটি কতিপয় বিষয়ের সাথে খাস। যেসব আমলের আসল দ্বীনের আসলের বাহিরে সেসব নতুন আবিস্কৃত বিষয় বিদায়াত। কিন্তু যেসব আমলের ভিত্তি দ্বীনের আসলের উপর নির্ভরশীল তা বিদায়াত হবে না।
☞ইমাম কুরতুবি রঃ ( মৃত্যু: ৬৭২ হিজরী) তাঁর তাফসীরে বলেন, মাখলুক সৃষ্টি প্রত্যেক বিদায়াত দুইটি অবস্থা থেকে খালি নয়। হয়তো শরীয়তে সে কাজের আসলের ভিত্তি থাকবে নয়তো থাকবে না। যদি ভিত্তি থাকে তাহলে সেটির মেছাল শরীয়তে না থাকলেও প্রশংসিত আমল বলে গণ্য হবে। যেমন, দান-সদকা, ভালোকাজ সমূহ।
একটু সহজে বললে, কেউ একজন জুমার দিনে ৫০০ টাকা দান করায় আপনি প্রশ্ন তুলে বললেন, সালাসে কুরুনের কেউ কি জুমার দিনে ৫০০ টাকা দান করেছেন? যদি করে থাকে তাহলে কাইফিয়াত কি? দলীল কোথায়? সনদ সহিহ কি-না? ইত্যাদি। দান করার ভিত্তি শরীয়তে আছে। বাদবাকি নির্দিষ্ট সংখ্যক এবং সময় নির্ধারিত নয় । তাই নিয়ত সহিহ রেখে ইচ্ছেমতো নতুন নতুন সংখ্যা দান করলে সেটা আর নতুন আবিস্কৃত বিদায়াত হবে না। তদ্রূপ মিলাদুন্নবী সাঃ এর আয়োজনে আমরা যা করি,তথা কুরআন তিলাওয়াত, হামদ নাতের প্রোগ্রাম, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জিবনী আলোচনা,বিরিয়ানি, মিষ্টি খাওয়া, আনন্দ প্রকাশ করা এগুলোর মূল ভিত্তি শরীয়তে রয়েছে। তাই শুধু নতুন আবিস্কৃত কাইফিয়াতের মেছাল পূর্ববর্তীদের মাঝে না থাকার কারণে পুরো বিষয়টিকে বিদায়াত বলা যাবে না।
☞ইমাম ইবনু আসীর (মৃত্যু: ৬৩০ হিজরী) রঃ নিহায়াতে বলেন, বিদায়াত দুই প্রকার। ১.বিদায়াতে হুদা। ২.বিদায়াতে দ্বলালাহ। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের শানের খেলাফ প্রত্যেক আবিস্কৃত বিষয় বিদায়াতে দ্বলালাহ। প্রত্যেক নতুন আবিস্কৃত ভালোকাজ যার প্রতি আল্লাহ ও তদ্বীয় রাসূল সাঃ উৎসাহ প্রদান করেছেন তা বিদায়াতে হাসানাহ।
☞ইমাম তকিউদ্দীন সুবকী (মৃত্যু:৭৫৬ হিজরী) রঃ বলেন, শরীয়তে বিদায়াত দ্বারা নতুন আবিস্কৃত এমন সববিষয় বুঝানো হয় যার আসল শরীয়তে নেই। কখনো কখনো বিদআত শব্দটি শর্তযুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়। যেমন বিদায়াতে হুদা, বিদায়াতে দ্বলালাহ।
☞ইমাম ইবনু রজব হান্বলী (মৃত্যু:৭৯৫ হিজরী) রঃ বলেন, বিদাআত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শরীয়তে যার আসল নেই। যার আসল শরীয়তে রয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে তৈরী তা আভিধানিক অর্থে বিদায়াত পারিভাষিক অর্থে নয়।
বিদায়াতের সংজ্ঞা এবং ইজ্জুবনু আব্দিস সালাম,ইমাম গাজালি,হাফেজ ইবনুল জাওযী,ইমাম নববী,ইমাম আবু শামাহ, ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী,ইমাম বদরুদ্দীন আইনি, ইমাম সুয়ূতি, ইমাম আহমদ ইবনু ইয়াহইয়া মালেকী,ইমাম যুরকানীসহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম মিলাদুন্নবী উদযাপনের পক্ষে মত দিলে-ও আপনি সেটাকে বিদায়াতে দ্বলালাহ বলার দু:সাহস করেন কি ভাবে?
আরও পড়ুন: বিদায়াতে হাসানাহ কাকে বলে?
তবে এটা সত্যি কথা মিলাদুন্নবী উদযাপন করতে গিয়ে কেউ কেউ শিরক এবং বিদায়াতে দ্বলালাহয় লিপ্ত হয়ে পড়ে সেটা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। তাদেরকে বুঝানো যেতে পারে কিন্তু বিদায়াত বলে নিয়তের দরুন সওয়াবের সম্ভাবনা রাখে এমন বিষয় কে বিদায়াত বলে উম্মাতের মাঝে ফারাক সৃষ্টি করা কখনো কাম্য নয়।
সর্বোচ্চ আপনি এ মতের ক্বায়েল না হলে এড়িয়ে যান। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই সবার সব বিষয়ে শরহে সদর হয় না। কিন্তু কটাক্ষ তিরস্কার করার অধিকার তো রাখেন না।
মিলাদুন্নবী সাঃ নিয়ে লেখা ২য় কিস্তি।
২৭/০৯/২০২২
#মিলাদুন্নবী_সাঃ