মুসলমানদের প্রায় সহস্র বছরের সংস্কৃতি: মিলাদুন্নবি উদযাপন

মুসলমানদের প্রায় সহস্র বছরের সংস্কৃতি: মিলাদুন্নবি উদযাপন।

মুসলমানদের প্রায় সহস্র বছরের সংস্কৃতি :মিলাদুন্নবি উদযাপন


(১)ইমাম হাফিয শামসুদ্দিন  ইবনে জাযারি রহ.।প্রায় ৭০০ বছর আগে সিরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন।সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য উম্মতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন মুহাদ্দিস, ফকিহ ও মুফাসসির ও ক্বারি।তিনি বলেন,

"রাসুল ﷺ জন্মগ্রহণ করেন শিয়াবে আবু তালিবে। মক্কাবাসীর নিকট স্থানটি খুবই প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত ।প্রতিবছর রাসুল ﷺ এর জন্মদিনে মক্কাবাসীরা এখানে জড়ো হয়।এবং ইদের দিনের চেয়েও বেশি জাঁকজমকভাবে  দিনটা উদযাপন করে। আমাদের যুগেও এটা জারি আছে।"[আরফুত তারিফ বিল মাওলিদিশ শরিফ,পৃ:১০]

(২)ইমাম মাকরিজি রহ.।তিনিও প্রায় ৭০০ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বর্ণনামতে,তৎকালীন সময়ে মিলাদুন্নাবির মাহফিলে আমীর,আলেম,কাজিসহ বিভিন্ন মানুষেরা উপস্থিত হতেন।সুলতান মাহফিলে এসে বসতেন।তার ডান পাশে থাকতেন শাইখুল ইসলাম সিরাজুদ্দিন বালকিনি রহ.(ইবনে হাজার আসকালানি রহ. এর উস্তাদ)। উপস্থিত হতেন হানাফি, মালেকি,শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের কাজিরা।কারিগণ কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মাহফিল শুরু করতেন।অতঃপর একের পর এক শিল্পীরা দাড়িয়ে নাশিদ পরিবেশন করত।রাসুল জন্মের ঘটনা পাঠ করা হত।পরে খাবার ও হালুয়া পরিবেশন করা হত।
[বিস্তারিত দেখতে পড়ুন আল মাওয়ায়িজ ওয়াল ই'তিবার:৩/৩৯৯,দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ,বৈরুত]

(৩)ইমাম হাফিয সাখাবি রহ.।ইবনে হাজার আসকালানি রহ. এর হাতেগড়া ছাত্র।আপনি হাদিস নিয়ে পড়বেন আর "সাখাবি" নাম শুনবেন না এটা অসম্ভব। তিনি বলেন,

"উত্তম তিন যুগের কেউ প্রচলিত মিলাদুন্নাবি পালন করেননি।পরবর্তীতে এটার প্রচলন ঘটেছে।কিন্তু এর পর সকল দেশ ও নগরীর মুসলমানেরা যুগযুগ ধরে মিলাদুন্নাবি পালন করে আসছে।তারা মিলাদুন্নাবির রাতসমূহে বিভিন্ন ধরণের সাদাকাহ চালু রেখেছে ও রাসুল ﷺ এর জন্মদিনের ঘটনা পাঠ করে আসছে।ফলে এর বরকতে  অফুরন্ত  অনুগ্রহ তাদের উপর বর্ষিত হয়েছে।"
[আল আজউইবাতুল মারদিয়্যাহ ও আস সিরাতুল হালাবিয়্যাহ:১/১২৩,দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যাহ]

(৪)ইমাম মোল্লা আলি কারি রহ. ।৫০০ বছর আগে জন্ম নেওয়া হানাফী মাজহাবের উজ্জ্বল নক্ষত্র।

তিনি তার আল মাওরিদুর রাবি ফিল মাওলিদিন নববি  গ্রন্থে মিলাদুন্নাবি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন।সেখানে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মিলাদুন্নাবি পালনের ঘটনা উল্লেখ করেছেন।মিলাদুন্নাবির পক্ষে ইমাম সাখাবি ও ইবনে হাজারের বক্তব্য ও তুলে ধরেছেন।অতঃপর তিনি বলেন,

"আল্লাহ তাআলা বলেছেন,'তোমাদের নিকট রাসুল এসেছেন(সূরা তাওবা:১২৮)'।এখানে নবী ﷺ এর মক্কায় জন্মগ্রহণের সময়ের মর্যাদার প্রতি ইশারা ও ইঙ্গিত করা হয়েছে।"

তিনি আরো বলেন,

"আমি যখন সত্যিকার অর্থে মিলাদুন্নাবি উপলক্ষে যিয়াফত( লোকজনকে খাওয়ানো বা আপ্যায়ন) করতে পারলাম না।তখন এই কাগজের পাতাগুলো লিখে ভরাট করলাম।যাতে এটা অর্থগত ও আলোকোজ্জ্বল যিয়াফত হয়।এবং বছর ও মাসের গণ্ডি পেড়িয়ে যুগের পাতায় চলমান থাকে।আর এটার নাম দিলাম,'আল মাওরিদুর রাবি ফিল মাওলিদিন নববি'।"

(৫)ইমাম শিহাবুদ্দিন আল-কাস্তালানি রহ.(ইন্তেকাল:৯২৩ হিজরি)।তিনি বলেন,

" মুসলমানেরা যুগযুগ ধরে রাসুল  ﷺ এর জন্মমাস উদযাপন করে আসছে।বিভিন্ন অনুষ্টানের আয়োজন করেছে। মিলাদুন্নাবির রাতসমূহে বিভিন্ন ধরণের সাদাকাহ চালু রেখেছে, খুশি প্রকাশ করেছে, নেক আমল বাড়িয়ে দিয়েছে এবং রাসুল ﷺ এর জন্মদিনের ঘটনা পাঠ জারি রেখেছে।ফলে এর বরকতে সকল ধরণের অফুরন্ত অনুগ্রহ তাদের উপর বর্ষিত হয়েছে।মিলাদুন্নাবি উদযাপনের একটি পরীক্ষামুলক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,এটা সেবছরের জন্য নিরাপত্তা ও কামনা-বাসনা পূরণের আগাম সুসংবাদ।

অতএব আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন,যে মিলাদুন্নাবির রাতসমূহকে ইদ হিসেবে গ্রহণ করেছে।যাতে এটা যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তাদের মারাত্মক যন্ত্রণা ও অধিক পীড়ার কারণ হয়।"
[আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্যিয়্যাহ:১/৮৯-৯০, আল-মাকতাবাতুত তাওফিকিয়্যাহ,মিসর

(৬)বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইমাম আহমদ আল -মাক্কারি আত-তিলমিসানি রহ.।প্রায় ৫০০ বছর আগের মানুষ।আলজেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।তিনি বলেন,

আরও পড়ুন: কাউকে জান্নাতি বলার বিধান কি?

"সুলতান আবু হামু মিলাদুন্নাবির রাত জাঁকজমকভাবে উদযাপন করতেন।যেমনিভাবে মাগরিব ও আন্দালুসের(স্পেন) সুলতানরা সে যুগে এবং  পূর্ববর্তী যুগে উদযাপন করতেন।"

[নাফহুত তায়্যিব:৬/৫১৩]

(৭) শাইখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভি রহ.।ভারতবর্ষের দেওবন্দি,সালাফি,বালাকোটি,রেজাখানি সহ যতদল আছে সবার হাদিসের সনদ তার কাছে গিয়ে মিলেছে।তিনি বলেন,

"মুসলমানেরা যুগযুগ ধরে রাসুল ﷺ এর জন্ম মাস উদযাপন করে আসছে।বিভিন্ন অনুষ্টানের আয়োজন করেছে। মিলাদুন্নাবির রাতসমূহে বিভিন্ন ধরণের সাদাকাহ চালু রেখেছে, খুশি প্রকাশ করেছে, নেক আমল বাড়িয়ে দিয়েছে এবং রাসুল ﷺ
এর জন্মদিনের ঘটনা পাঠ জারি রেখেছে।ফলে এর বরকতে সকল ধরণের অফুরন্ত অনুগ্রহ তাদের উপর বর্ষিত হয়েছে।মিলাদুন্নাবি উদযাপনের একটি পরীক্ষামুলক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,এটা সেবছরের জন্য নিরাপত্তা ও কামনা-বাসনা পূরণের আগাম সুসংবাদ ।

অতএব আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন,যে মিলাদুন্নাবির রাতসমূহকে ইদ হিসেবে গ্রহণ করেছে।যাতে এটা যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তাদের মারাত্মক যন্ত্রণা ও অধিক পীড়ার কারণ হয়।"
[মা সাবাতা বিস সুন্নাহ:৭৯ পৃষ্টা]


লিখেছেন হাসনাইন ইনু ভাই।

Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন