সাহাবায়ে কেরাম, তাবীঈনরা কেউই ঈদে মিলাদুন নবী সাঃ উদযাপন করেন নি কেন?

মিলাদুন্নবী সাঃ উদযাপন শরীয়তসম্মত হলে রাসূলুল্লাহ সাঃ, সাহাবায়ে কেরাম, তাবীঈনরা কেউই করেন নি কেন?

★সালাসে কুরুনের কোনো কাজ ছেড়ে দেওয়া অথবা না করা কাজটিকে নিষিদ্ধকরণ বুঝায় না। কেননা কখনো কখনো উম্মতের জন্য দয়াপরবশ হয়ে অথবা সহজিকরণের উদ্দেশ্যে অথবা প্রয়োজন না থাকায় কোনো কোনো আমল ছেড়ে দেওয়া হয়। যেমন:

১.আবশ্যিক হওয়ার অনুমানে রাসূলুল্লাহ সাঃ কোনো কোনো  নামাজের ধারাবাহিকতা ছেড়ে দিয়েছেন। 

২. উম্মতের জন্য তারাবীহর জামাত কষ্ট হবে বিধায় তিনি সাঃ জামাতবদ্ধ হওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। 

৩. বিশৃঙ্খলার অনুমানে রাসূলুল্লাহ সাঃ বায়তুল্লাহ শরীফ কে ইব্রাহিম আঃ ভিত্তির উপর তৈরী করেন নি।

৪. জায়েজ হওয়া সত্বেও রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সান্ডার গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।


জায়েজ বা মোবাহ বিষয়ের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর ঘোষণা হলো-وسكت عن أشياء رحمة لكم غير نسيان، فلا تبحثوا عنها

অর্থাৎ:-  আমি ইচ্ছে করেই দয়াপরশ হয়ে অনেক বিষয়ের হুকুম বলা থেকে বিরত থাকি, অতএব তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না।

-সুনানু দারাকুতনী হাদিস নং- ১৮৩২


☞শরীয়ত গর্হিত না হলে অনেক আমল প্রয়োজনের কারণে মুসতাহসান হতে পারে। যেমন:-

★প্রয়োজন না থাকায় অনেক জায়েজ কাজ প্রথম স্তবকের কতকে করেন নি কিন্তু অন্যারা করেছেন। তখন এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, এটা শরীয়তসম্মত হলে অন্যরা করেন নি কেন? যেমন:- কুরআন একত্রিকরন।  এটা রাসূলুল্লাহ সাঃ করেন নি কিন্তু আবু বকর রাঃ শুরু করে ওসমান রাঃ এর হাতে এই একত্রিকরণ পূর্ণতা পেয়েছে। এখন কিন্তু এ কথা বলার সুযোগ নেই একত্রিকরন শরীয়তসম্মত হলে রাসূলুল্লাহ সাঃ কেন করেন নি?  সাহাবিরা কি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বেশি বুঝে না-কি?  


এমন প্রশ্ন কোনো আকেলবানরা করতে পারে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যুগে কুরআন একত্রিকরণের প্রয়োজন পড়ে নি। ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফেজ সাহাবী শহীদ হয়েছে বিধায় সাহাবীরা কুরআন একত্রিকরণের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। 

(বুখারী শরীফে বিস্তারিত রয়েছে। হাদিস নং-৪৬৭৯)  


★অনুরুপভাবে কুরআন শরীফে হরকতের সংযুক্তিকরণ। রাসূলুল্লাহ সাঃ এবং সাহাবীদের যমানায় এটির প্রয়োজন ছিলো না কিন্তু হাজ্জাজ বিন ইউছুফের যমানায় এর প্রয়োজন হওয়ায় সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, হরকতের সংযুক্তি শরীয়তসম্মত হলে রাসূলুল্লাহ সাঃ এবং সাহাবীরা কেন করেন নি? হাজ্জাজ বিন ইউছুফরা কি রাসূলুল্লাহ সাঃ এবং সাহাবীদের থেকেও কি শরীয়ত বেশি বুঝে না-কি?  


★অনুরুপভাবে হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষা প্রণয়ন। সালাসে কুরুনের কেউই এ কাজটি করেন নি। হাদিসের প্রামাণ্যতা যাচাইয়ের জন্য  ইমাম নিশাপুরী রঃ থেকে ইবনু হাজার আসকালানী রঃ পর্যন্ত প্রতিযশা মুহাদ্দিসরা এগুলো প্রণয়ন করেছেন। এখন এ কথা বলা যাবে না যে, এগুলো শরীয়তসমর্থিত হলে নিশাপুরী রঃ এর পূর্বে কেউ এগুলো করেন নি কেন?  তারা কি নিশাপুরী রঃ থেকে কম বুঝতেন না-কি?  

আমি এমন অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারবো।

মিলাদুন্নবী সাঃ উদযাপন কেন এতো প্রয়োজন হলো! এবং এটাকে মুসতাহসান বলা হবে কেন?


রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাদের থেকে ইন্তেকাল করার পর থেকে উম্মাহর যুবকরা দিন দিন তাঁকে ভুলতে বসেছে। তাঁর মর্যাদাকে হৃদয় থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। অপসাংস্কৃতির করাল থাবায় আজকে তাঁরা মনোমুগ্ধ। ইসলামি চেতনা তাঁরা ভুলতে শুরু করেছে। ক্রিকেট, ফুটবল, হলিউড, বলিউড তাদের কে মাতিয়ে রাখছে। অথচ বুখারীর হাদিস রাসূলুল্লাহ সাঃ কে স্ত্র পরিজন, পৃথিবীর সকল মানুষ, এমন কি নিজের নফস থেকে বেশি ভালোবাসতে বলা হয়েছে। 

-বুখারী শরীফ হাদিস নং- ১৫


যুগের এই হাইসিয়াতে মিলাদুন্নবী সহ আরো ইসলামি আয়োজন করা সময়ের দাবী। যুগের প্রয়োজন।


এখন পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে মিলাদুন্নবী সাঃ উদযাপন সুন্নাতে ফেলি না-কি কওলি না-কি বিদায়াতে হাসানাহর অন্তর্ভুক্ত ? 


এটি সুন্নাতে কওলির অন্তর্ভুক্ত:- রাসূলুল্লাহ সাঃ কে সোমবার রোজা রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিলেন, সোমবারে আমি জন্ম গ্রহন করেছি এবং এ দিনেই আমার প্রতি কুরআন নাযিল শুরু হয়েছিল।

-মুসলিম শরীফ হাদিস নং - ১১৬২


এ হাদিসে স্পষ্ট রাসূলুল্লাহ সাঃ তাঁর জন্ম দিনের বার সোমবারের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর জন্মের বারেই কুরআন নাযিল শুরু করেছেন বলে গুরুত্ব বাড়িয়ে দিলেন।


এটি সুন্নাতে ফে'লির অন্তর্ভুক্ত:- রাসূলুল্লাহ সাঃ সাধারণত সোমবারে রোজা রাখতেন। সাহাবীরা-ও রাখতেন এবং উৎসাহ প্রদান করতেন। 


আর তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রায় ৫০+ বয়স হওয়ার পরে আকিকা করে নবী হিসেবে তাঁর জন্মের গুরুত্ব দেখিয়ে গেলেন।

-তিরমিজী শরীফ হাদিস নং -১৫১৯

আরও পড়ুন: বিদায়াতে হাসানাহ কাকে বলে?

এছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাঃ সাহাবীদের নিয়ে তাঁর জন্ম বিষয়ক ঘটনাবলি বর্ণনা করেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন তাঁর জন্মের সময় তাঁর আম্মু সিরিয়ার রাজপ্রাসাদের গম্বুজ দেখতে পেয়েছিলেন। এসব হাদিস রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্ম দিনের আলাদা গুরুত্ব প্রমান করে।

-মুসনাদু আহমাদ হাদিস নং -১৭১৫০


ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রঃ মিলাদুন্নবী উদযাপন কে বিদায়াতে হাসানার অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আশুরার দিনের ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস দিয়ে ইল্লত গ্রহন করেছেন। 

-বুখারী শরীফ হাদিস নং- ১৮৯৩

সুয়ূতি রঃ এর হাবী লিল ফতোয়া।

উপরিউক্ত আলোচনায় পাঠকের কাছে অস্পষ্ট নয় যে, শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক না হলে মিলাদুন্নবী উদযাপন মুসতাহসান থেকে খালি নয়। 

এটি মিলাদুন্নবী নিয়ে লেখা প্রথম কিস্তি। সময় সুযোগে  ধারাবাহিক লিখবো। ইনশাআল্লাহ।

 মিলাদুন্নবী সাঃ নিয়ে কেনো প্রশ্ন থাকলে ইনবক্সে অথবা কমেন্টবক্সে লিখতে পারেন।


#মিলাদুন্নবী_সাঃ

Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন