▌বই নং: ১৩
বই: দ্যা এ্যালকেমিস্ট।
লেখক: পাওলো কোয়েলহো।
অনুবাদক: মাকসুদুজ্জামান খান।
প্রকাশনী: রোদেলা।
পৃষ্ঠা:১১০।
ক্যাটাগরি: উপন্যাস।
ভাষা: বাংলা।
দ্যা এ্যালকেমিস্ট বই রিভিউ
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহোর 'দ্যা এ্যালকেমিস্ট' কে পৃথিবীর সেরা একটি বই হিসেবে ধরা হয়। এই বইটি প্রায় ২৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল। এই বইটির প্রথমাংশ পড়ে কিছুই বুঝি নি। দু'একটা উৎসাহ উদ্দীপনার বাক্য ছাড়া তেমন কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করার পর অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটে গেছে। দীর্ঘ শ্বাসে পড়তে বাধ্য হয়ে গেছি। যাদুর মতো বিভিন্ন বিষয় উপলব্ধি শুরু হয়ে গিয়েছিলো।
চলুন প্রথমত আপনাদের আলকেমি সম্পর্কে সহজ একটি ধারণা দেই-
আলকেমি (Alchemy) শব্দ এসেছে আরবি আল-কিমিয়া (الكيمياء) শব্দ থেকে। আর আরবি 'কিমিয়া' শব্দ এসেছে প্রাচীন গ্রিক শব্দ 'কেমিয়া' থেকে। অনেকে আলকেমি কে রসায়ন বা কেমিস্ট্রির সাথে গুলিয়ে ফেলেন। । যদি-ও আলকেমি শব্দ থেকে কেমিস্ট্রি শব্দ এসেছে। কিন্ত, আলকেমি মানেই কেমিস্ট্রি বা রসায়ন নয়।
আলকেমি শাস্ত্রের মূল প্রতিপাদ্য হলো -
একটি অদৃশ্য আধ্যাত্মিক শক্তির অতিপ্রাকৃত সাহায্য, যেটা ছাড়া কোনো আলকেমিক্যাল
কাজ সম্পূর্ণ হবে না। এ আধ্যাত্মিক সাহায্য আসতে পারে ভালো দিক থেকে অথবা খারাপ
দিক থেকে। ভালো দিকের ধারনা দিয়েছিলেন; জাবির ইবনে হাইয়্যান। যখন খারাপ (নেগেটিভ)
শক্তি ব্যবহার করে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করা হয়, তখন বলা হয় ডার্ক আর্টস বা
কালো জাদুবিদ্যাা।
আর এই আধ্যাত্মিক শক্তি ব্যবহার করে এমন একটি পদার্থ তৈরি করা, যেটা সম্পর্কে বিশ্বাস করা হয়, সেই পদার্থ দিয়ে মহাবিশ্বের সকল নিগূঢ় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। সেই পদার্থের রয়েছে দুটো অংশ, প্রথমটা কঠিন আর দ্বিতীয়টি তরল-
১) পরশ মণি বা পরশ পাথর (Philosopher’s Stone)
২) অমৃত সুধা (Elixir Of Life)-[যেটাকে আমরা আবে হায়াত নামে চিনি]
দ্বিতীয় নামটি জাবির ইবনে হাইয়ানের দেওয়া। তিনি আরবিতে নাম দিয়েছিলেন 'আল-ইকসির' (إكسير)। পশ্চিমাদের কাছে যেটা হয়ে যায় 'এলিক্সির' (Elixir)।
দ্যা এ্যালকেমিস্ট বই রিভিউ
শান্তিয়াগো একজন রাখাল। তার লক্ষ্য তাকে টেনে নিয়ে আসে আফ্রিকার একটি শহরে। সেখানে দেখা হয় অবাক করা একজন বুড়োর সাথে। বাবার দেয়া টাকা-কড়ির মাধ্যমে ভেড়ার পাল কে বিকিয়ে দেয় সে। তারপর আসে আরেক মহা দেশে। সেখানে ডাকাতি হয় তার টাকা পয়সা। পরবর্তীতে কাজ করে স্পটিকের দোকানে। এখন সে যাত্রা শুরু করছে মরুভূমির প্রান্তরে। মরুভূমির ক্যারাভানে দেখা হয় জনৈক ইংরেজের সাথে, যে কিনা হাজারো বই-পুস্তক পড়ে এখন রওয়ানা হয়েছে একজন আলকেমিস্টের খোঁজে। নানা তরাই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে এক মরুধ্যানে দেখা হয়ে গেল সেই আলকেমিস্ট এর সাথে, যিনি দেখামাত্রই জিজ্ঞেস করলেন,'কেন এসেছ'? কোন পদার্থকে স্বর্ণ বানিয়ে দেখেছো? প্রতিত্তোরে ইংরেজ লোকটা বলেছিল সেটা জানার জন্যই এসেছি। অ্যালকেমিস্ট বললেন,-'যাও চেষ্টা করো'। শুরু হয়ে এভাবেই উপন্যাসের চিত্র শেষ হতে থাকে। বইটার যাদুকরি একটি দিক হলো The Alchemist বইতে Santiago রাখাল বালকের জায়গায় প্রত্যেকটি মানুষ নিজেকে কল্পনা করতে পারে। আর বইয়ের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ উক্তি গুলো যেন পায়েসের কিসমিস। বইটা গ্লুকোজ খাওয়ার মতো ইনস্ট্যান্ট একধরনের এনার্জি দেয়।
বইটার অনুমোদিত পিডিএফ টেলিগ্রামে দিয়ে দিবো। পড়তে আগ্রহীরা সেখান থেকে ডাউনলোড
করে নিতে পারেন।
দ্যা এ্যালকেমিস্ট বই থেকে কয়েকটি জীবন শিক্ষা।
★সুখের গোপন উৎস হলো তোমাকে পৃথিবীর সব বিষ্ময় দেখতে হবে, সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে চামচের উপর থাকা এক বিন্দু পানির কথাও।
★কিছু কিছু পাবার চেষ্টা করলে পুরো বিশ্বব্রক্ষান্ড তোমাকে তা পাইয়ে দেওয়ার জন্য ফিসফাস করতে থাকবে।
★ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে সারা পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লেগে যাবে।
★কখনো স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিও না।
★শব্দ ছাড়াও ভাষা হয়; ভালোবাসা আর প্রত্যয়ের সমন্বয় গড়ে উঠা ভাষার নাম উৎসাহ। এটার নামই মহাজাগতিক ভাষা। সিদ্ধান্ত নিয়ে যাত্রা শুরু হলে যত বিপদ আসুক না কেন পিছু হটার সুযোগ নেই। সবসময় চিন্তা করতে হবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় কিভাবে।
★ পৃথিবীতে পশু পাখি এমনকি শাকসবজিরও আত্মা আছে। তদ্রুপ আছে আমাদের ভাবনার হৃদয়। আমরা আমাদের আত্মার অংশ বলেই এই হৃদয়ের অস্তিত্ব অনুভব করি না।
★ নিজের চাওয়া পাওয়াকে বুঝতে পারলে অচেনা-ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
★ বর্তমানের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে হবে এবং বর্তমানের প্রতি মনোযোগ হতে হবে।
বর্তমান বা ভবিষ্যতে কি হবে এগুলো নিয়ে সুখী হওয়া যাবে না বরং অতীতের
ভুলগুলো শুধরে এবং বর্তমানের প্রতি মনোযোগী হয়ে ভবিষ্যতে সুখী সমৃদ্ধ হওয়া
যাবে।
★ সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মানুষ খরস্রতা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে জানে না তার লক্ষ্য কি? ঢেউ তাকে কোথায় নিয়ে ছাড়বে? সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাথায় এসব প্রশ্ন আসার সম্ভাবনাই থাকেনা! তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বেই লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঠিক উচিত।
দ্যা আলকেমিস্ট নিয়ে গুনীজনদের মন্তব্য