শাইখ শা'রাভী রঃ এর আশ্চর্যান্বিত হওয়ার গল্প: যা তিনি নিজেই বর্ণনা করেছিলেন।
ইমাম শা'রাভী রঃ নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন;
وَهُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إِلَٰهٌ وَفِي الْأَرْضِ إِلَٰهٌ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ﴾ - الزخرف- ٤٥
অনুবাদ: তিনিই (অর্থাৎ আল্লাহই) আসমানেও মাবুদ এবং যমীনেও মাবুদ এবং তিনিই হেকমতের মালিক, জ্ঞানেরও মালিক।
—আয্-যুখরুফ - ৮৪
উপরের আয়াতে নাহুবী (ব্যাকরণগত) একটা নিয়ম রয়েছে। আলোচ্য আয়াতটিতে إله শব্দটি দুইবার এসেছে। এবং শব্দটি আরবি ব্যাকরণগত দিক থেকে নাকিরা বা অনির্দিষ্ট। আর নিয়ম হলো; إذا تكررت النكرة مرتين كانت اﻷولى غير الثانية তথা একই বাক্যে একই নাকিরা ইসেম ( অনির্দিষ্ট বিশেষ্য) দুইবার আসলে একটি অপরটির থেকে বিপরীত হবে।
উদাহরণ: أكرمت رجلا في البيت ورجلا في الشارع (আমি বাসায় একজনকে সম্মান করছি এবং রাস্তায় একজনকে)। এখানে "رجلا" (একজনকে) শব্দটি দুইবার এসেছে। বাসার একজন এবং রাস্তার একজন পরস্পর ভিন্ন লোক। একই বাক্যে দুইজন অনির্দিষ্ট লোক একই লোক নয়। বরং পরস্পর আলাদা মানুষ।
কাজেই উপরের আয়াতে إله শব্দটি দুইবার এসেছে। এবং ব্যাকরণগত বিধিনুযায়ী আয়াতে উল্লেখিত إله শব্দ পরস্পর বিপরীত হবে; তথা আসমানে একজন ইলাহ এবং যমিনে অন্য ইলাহ: এমনটি বুঝাযায়। এটা ভেবেই তিনি হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন। এবং উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতেছিলেন।
শায়খ নিজে বলতেছেন- আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এবং আমার স্মৃতিপটে এমন অর্থ আসায় আসতাগফিরুল্লাহ পড়ছিলাম। কোন কিছু না-ভেবে উত্তর খোঁজার জন্য আপন শায়খের শরণাপন্ন হলেন; এবং ওস্তাদের কাছে বিস্তারিত বললেন।
আছরের সময়ে হলে ওস্তাদ বললেন; চলো আমরা নামাজের প্রস্তুতি শুরু করি। মসজিদটি ছিলো প্রশস্ত এবং গ্রামের শেষ প্রান্তে। নামাজান্তে উভয়ে ইলমি মুনাকাশায় বসে পড়লেন।
হঠাৎ একজন গ্রাম্য কৃষক মসজিদে প্রবেশ করে সালাম প্রদান করলেন। প্রতিত্তোরে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ে জবাব দিলেন। লোকটি এসেই বলা শুরু করলেন; আপনারা وَهُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إِلَٰهٌ وَفِي الْأَرْضِ إِلَٰهٌ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ﴾ - الزخرف- ٤٥ আয়াত নিয়া আলোচনা করতেছিলেন। এতে বালাগাত ফাসাহাতপূর্ণ বাক্যের পরিভাষা পরিবর্তন হয়ে গেছে।
ছাত্র শিক্ষক উভয়ে এটা ভেবে আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, আমাদের ইলমি আলোচনার বিষয়বস্তু এই অপরিচিত কৃষক কিভাবে জানলেন! অথচ তিনি আমাদের আলোচনার ছিটেফোঁটা-ও শুনেন নি।
ইতিমধ্যেই অপরিচিত কৃষক বলা শুরু করলেন। ইসমে মাওসূল (এটি একটি নাহুবী পরিভাষা) নাকিরা ইসেমকে (অনির্দিষ্ট বিশেষ্যকে) মারেফায় (নির্দিষ্ট) ইসমে রুপান্তরিত করে দেয়।
আল্লাহ তায়া’লা আয়াতে ( وهو الذي في السماء )বলেছেন।তিনি ( هو في السماء )বলেন নি। তোমরা আয়াতে উল্লেখিত ( الذي) মাওসূল কে ভুলে গেলা কিভাবে?
এবার ছাত্র-শিক্ষক উভয়ে হতবিহ্বল হয়ে রইলেন। ইতোমধ্যে অপরিচিত কৃষক বলা শেষে নিরবে স্থান ত্যাগ করলেন।
নিরবতা ভেঙে শায়খ শা'রাভী রঃ স্বীয় ওস্তাদ কে জিজ্ঞেস করলেন এই 'আল্লামা' কে? উত্তরে শিক্ষক বললেন, 'আমি তাঁকে চিনি না, আর তাছাড়া তিনি এই শহরের বাসিন্দা-ও না'।
শায়খ শা'রাভী রঃ দৌড়ে মসজিদের বাহিরে এসে দরজায় দাঁড়ানো লোকদের আগন্তুক সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলল, আমরা এখানে এমন কাউকেই দেখি নি। তারা আগবাড়িয়ে বলল, আমরা কাউকেই মসজিদে প্রবেশ এবং বাহির হতে দেখি নি।
শায়খ শা'রাভী রঃ তাদের কে বললেন, এটা কিভাবে হতে পারে! হয়তো তোমরা তাঁকে দেখো নি। উপস্থিত লোকজন বলল, আরে কি বলেন! আমরা তো শায়খ থেকে কিছু মাসয়ালা জানার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কেউ মসজিদ থেকে বের হলে অবশ্যই আমরা তাকে দেখতাম।
ঘটনা বর্ণনা শেষে শাইখ রঃ বলেন, আল্লাহ তাঁর কিতাব এবং দ্বীন কে এমন সৈনিক দ্বারা হিফাজত করেন যা আমাদের পক্ষে উপলব্ধি করা অসম্ভব। কেননা আল্লাহ তায়া’লা বলেন- আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর আমিই এর হিফাজত করবো।