মিলাদ কিয়াম নিয়ে দেওবন্দী আলেমদের ফতোয়া

প্রকৃত দেওবন্দী এবং ভেজাল দেওবন্দীদের পার্থক্য জানতে নিচের পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কোন দলে কমেন্টে লিখে যাবেন।

মিলাদ কিয়াম নিয়ে দেওবন্দী আলেমদের ফতোয়া

মুহাক্কিক উলামায়ে দেওবন্দের সর্বসম্মত একটি দস্তুর ও প্রয়াস হচ্ছে "আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ" কিতাবটি। এতে একটা প্রশ্ন ছিলো মিলাদ নিয়ে। 


প্রশ্নটি ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে আলোচনা করা তোমাদের মতে বৈধ নাকি বিদআত ও অবৈধ?

খলীল আহমদ সাহরানপুরী রাহ. বলেন, শুধু আমরা নই বরং একজন সাধারণ মুসলমানও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জুতা মোবারকের ধূলো বা তাঁর গাধার আলোচনাকেও বিদআত মনে করে না। সেখানে তাঁর জন্ম সংক্রান্ত আলোচনা কিভাবে বিদআত মনে করতে পারি? 


আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পর্কিত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসের আলোচনাকেও উত্তম মুস্তাহাব মনে করি। চাই তাঁর জন্ম সংক্রান্ত বিষয় হোক অথবা মল-মূত্র, খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা ইত্যাদি যে-কোন বিষয় নিয়ে আলোচনাকেই ইবাদত মনে করি। যা "আল-বারাহীনুল কাতিয়া" গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। 


তারপর তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি (শাহ ইসহাক দেহলভি রাহ.এর ছাত্র এবং খলীল আহমদ সাহরানপুরীর উস্তাদ) আহমাদ আলী সাহরানপুরীকে প্রশ্ন করেন যে, মিলাদ মাহফিল নিয়ে আপনার বক্তব্য কি? জায়েয হলে কোন শর্তে জায়েয? নাজায়েয হলে কোন ক্ষেত্রে নাজায়েয?


আহমদ আলী সাহরানপুরী রাহ. জবাবে বলেন, 

কিছু শর্তে মিলাদ মাহফিল জায়েয। (তা মূলত দশটি শর্ত)

১. আলোচনার ক্ষেত্রে বর্ণনা সহীহ হতে হবে।  

২. ফরয বা ওয়াজিব ইবাদতের সময় মিলাদ মাহফিল করা যাবে না। (উদাহরণস্বরূপ ফরজ নামাজের সময় জামায়াত ছেড়ে দিয়ে মিলাদ মাহফিলে বসে থাকা যাবে না।)

৩. এমনভাবে মিলাদ মাহফিল করা যাবে না, যাতে অংশগ্রহণকারীদের পদ্ধতি সাহাবা এবং খাইরুল কুরুনের বুযুর্গদের খেলাফ না হয়। 

৪. এমন বিশ্বাস রেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বৃত্তান্ত এবং মর্যাদা বর্ণনা করা যাবে না, যাতে শিরকের সন্দেহ তৈরি করে। (যেমন তাকে আলিমুল গায়েব বলা)

৫.  মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণকারীদের মিলাদ সম্পর্কে বিদআতী আকীদা থাকা যাবে না। (উদাহরণস্বরূপ যারা মজলিশে অংশ নেয় না, তাদের গুনাহগার ভাবা বা খারাপ মনে করা।)

৬. এমনভাবে করা যাবে না, যার আদব সাহাবাদের আদবের খেলাফ। অর্থাৎ সাহাবারাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আলোচনা করতেন। তাঁরা যে আদব বজায়ে রাখতেন মিলাদে অংশগ্রহণকারীদের আদব তার খেলাফ হতে পারবে না। 

৮. মজলিশে কোন রকম মুনকারাত থাকতে পারবে না। অর্থাৎ হারাম কাজ করা যাবে না। মজলিশে কোন গুনাহের কাজ হতে পারবে না। 

৯. মিলাদ মাহফিল সহীহ নিয়ত ও ইখলাসের সাথে করতে হবে। এবং মুস্তাহাব ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে করতে হবে।

১০. কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ বা সময় নির্ধারণ না করা। অর্থাৎ কেবল শুক্রবার মিলাদ করা যাবে বৃহস্পতিবার নয় বা বারই রবিউল আউয়াল করা যাবে কিন্তু চৌদ্দই রবিউল আউয়াল করা যাবে না এমনভাবে সময় নির্দিষ্ট করা যাবে না।

আরও পড়ুন:

এ সকল শর্ত মানলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম সংক্রান্ত আলোচনা খায়ের ও বরকতের কারণ। আমরা একে মুস্তাহাব মনে করি, নাজায়েয ও বিদআত মনে করি না।


অতঃপর সাহরানপুরী রাহ. বলেন, হিন্দুস্থানে (ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ) আমরা এমন মিলাদকে নাজায়েয বলি যেখানে:


১) মওজু বা জাল হাদিস বর্ননা করা হয়।


২) নারী-পুরুষ একত্রিত হয়।


৩) অপচয় করা হয়। (যেমন অতিরিক্ত সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা ইত্যাদি) 


৪) মিলাদ মাহফিলকে ওয়াজিব মনে করে যারা এতে তাদের সাথে অংশগ্রহণ করে না, তাদেরকে কাফের কিংবা তিরস্কার ও গালিগালাজ করা হয়। 


যদি এ সকল নাজায়েয থেকে খালি হয়, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিলাদ আলোচনাকে আমরা কক্ষনো বিদআত বলি না। আর একজন মুসলিম তা কিভাবে বলতে পারে?


আমাদের সম্পর্কে এ ধরনের (উপরোল্লিখিত শর্ত যুক্ত) মিলাদ মাহফিলকে বিদআত বলার অপবাদ মুলহিদ, দাজ্জাল ও মিথ্যুকরা দিতে পারে।


দ্র. আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ পৃষ্ঠা ৭৮-৮০, ২১ নং প্রশ্নোত্তর।

মিলাদ কিয়াম নিয়ে দেওবন্দী আলেমদের ফতোয়া



Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন