আলেম-ইসলামপন্থীরা কেন রাজনীতিতে ব্যর্থ? - Learn With Iqbal

আলেম-ইসলামপন্থীরা কেন রাজনীতিতে ব্যর্থ?

মাদরাসা-পড়ুয়া ও ইসলামপন্থীদের সাথে কথা বললেই দেখবেন, তাদের মনে অনেক কষ্ট, ‘সমাজ কেন আমাদেরকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, কেন আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করছি না, আমরাই তো সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত।’ এসব বক্তব্য শুনলে আমি তাদের অলক্ষ্যে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে চেষ্টা করি। আদতে ইসলামি ইতিহাসে আলেম ও ইসলামপন্থীরা কখনোই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বিশেষত নির্বাহী বিভাগে তাদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই সীমিত। প্রথম দেড়শ বছরের কথা বাদ দিতে হবে, তখন আলেমরা বারবার বিদ্রোহ করতে চেষ্টা করছিলেন—এই সময়ে বিরোধী হিসেবে আলেমদের বিশেষ গুরুত্ব ছিল।


কেন ইসলামি ইতিহাসে আলেম ও ইসলামপন্থীরা প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারেননি? ইবনে খালদুন এর তিনটি কারণ বর্ণনা করেছেন। একদিকে মুসলিম সমাজের রক্ষণশীল অংশটি ছিল অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাদপদ, বস্তুত ধর্মীয় সেবাগুলো কখনোই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসেবার মত অর্থনৈতিক গুরুত্ব ধারণ করে না, কাজেই ইবনে খালদুন নথিপত্র ঘেঁটে দেখান, আলেমরা কখনোই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করতেন না। পাশাপাশি, আসাবিয়াত ও গোষ্ঠী-আভিজাত্যে দুর্বলতার প্রেক্ষিতে রক্ষণশীল সমাজ নির্বাহী বিভাগে অংশগ্রহণ করেছে খুবই কম সময়। সর্বোপরি, ইবনে খালদুনের মতে,  তাত্ত্বিক জগতে আটকে পড়ায় রক্ষণশীল সমাজ রাজনীতিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।


এখানে বলে রাখা ভালো, ইবনে খালদুন নিজেও একজন আলেম ছিলেন, রাজকার্যে ব্যর্থ হয়ে ইলমি খেদমতে মনোনিবেশ করেন। কাজেই তাকে আলেম বা ইসলাম বিদ্বেষী ভাবার কোন কারণ নেই। ইবনে খালদুন ছিলেন বাস্তববাদী। অর্থনৈতিক সক্ষমতা, গোষ্ঠী আভিজাত্য ও বাস্তব জ্ঞান ছাড়া রাজনীতিতে সফলতা অসম্ভব। মুসলিম সমাজের রক্ষণশীল অংশ যত তাড়াতাড়ি এই দিকটি ধরতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি তারা হতাশা থেকে মুক্তি পাবেন, ‘আগে তো আলেমরা রাজনীতির কেন্দ্রে বসবাস করত’— এমন অসার কল্পনা থেকে মুক্তি পাবেন। আশরাফ আলি থানবি এই বাস্তবতা বুঝেছিলেন সবার আগে। ব্রিটিশ আমলে আলেমরা সবচেয়ে বেশী ত্যাগ স্বীকার করলেও স্বাধীনতা এসেছিল ইংরেজি শিক্ষিতদের হাত ধরেই :  ‘আমরা কেন কেন্দ্রে থাকব না’ এমন গো ধরে আশরাফ আলি থানবি রাজনীতি থেকে সরে যাননি।


আরও পড়ুন: হতাশা থেকে মুক্তির উপায়


রক্ষণশীল সমাজ কি রাজনীতিতে কিছুই করতে পারবে না অথবা রাজনৈতিক সফলতার জন্য কি রক্ষণশীলতা ছাড়তে হবে? আমি সেটা মনে করি না। মুসলিম সমাজে আলেমদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলেম না থাকলে আপনাকে কে কুরআন শেখাবে, আপনাকে কে ভালো-মন্দের কথা বলবে, হালাল-হারামের ফতোয়াটাও জানবেন কার কাছে? সমাজে আলেমরা না থাকলে মুসলমানরা আর মুসলমান থাকতে পারবে না। এজন্য আলেমদের সম্মান করা অত্যন্ত জরুরী : আপনার এলাকার ইমাম সাহেবকে বাসায় দাওয়াত দিবেন, হাদিয়া পাঠাবেন মাঝেমাঝে। তবে আলেমদের থেকে কখনোই বৃহত্তর রাজনৈতিক নেতৃত্ব আশা করবেন না।


আলেম সমাজ বা ইসলামপন্থীরা রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখতে পারবে না, সেটা আমি মোটেই বলছি না। তবে সেক্ষেত্রে তাদেরকে মানতে হবে জগতের আদিম নিয়ম। অর্থনীতি-গোষ্ঠীআভিজাত্য ছাড়া রাজনীতিতে সফল হওয়া যাবে না। আশরাফ আলি থানবির মন্তব্য দিয়ে লেখাটা শেষ করি, ‘লোকজন মাদরাসায় পড়তে পাঠায় মেধাহীন/নিরীহ সন্তানটাকেই, সমাজের অভিজাত শ্রেণী থেকে মাদরাসায় পড়তে আসে খুবই কমসংখ্যক ছেলে। নিন্মরুচির মাদরাসা পড়ুয়ারা জন্ম দেয় আরও নিন্ম রুচির কল্পনা ও সংস্কৃতি। তারা দাওয়াত খেতে যায় উচ্চবংশীয় কারো বাড়িতে, উচ্চবংশীয় ছেলেরা দাওয়াত খাওয়া মওলবিদের দেখে মায়া করে বটে, তবে মওলবি হবার ইচ্ছাটা হারিয়ে ফেলে।’ আলেম সমাজ ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে তাই আসাবিয়াত/গোষ্ঠীআভিজাত্যের মান ও পরিমাণ খুবই কম।

Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন