ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ - Learn With Iqbal

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ কর্তৃক প্রকাশিত মু'জিযাসমূহঃ

বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ, যা মুসলমান ও কাফিরদের মধ্যে দ্বিতীয় হিজরীতে বদর নামক স্থানে সংগঠিত হয়। বদর বিন ইয়াখলাদ বিন কিনান নামক জনৈক ব্যক্তি এই উপত্যকায় বাস করতেন বলে পরবর্তীতে তারই নামানুসারে এ প্রান্তরের নামকরণ হয় বদর। ইবন হাযম বলেন- বদর এখানে বসতি স্থাপনকারী বানু দামরার জনৈক ব্যক্তির নাম। বদর বিন হারিছ নামক জনৈক ব্যক্তি উক্ত স্থানে একটি কূপ খনন করেছিলেন, ইহাকে বি'রে বদর বলা হতো।

{getToc} $title={Table of Contents}

পরবর্তীতে এ কুপের নাম থেকেই উক্ত স্থানের নাম বদর হয়ে যায়। শাবীর মতে, বদর নামক এক ব্যক্তির মালিকানায় থাকার কারণে এই কূপটির নাম হয়েছে বদর।অন্যান্যদের মতে, বদর ছিল কোরাইশ বংশের অন্যতম পূর্বপুরুষ কোরাইশের ছেলের নাম। প্রতি বৎসর সপ্তাহ ব্যাপী এখানে একটি মেলা বসতো। মক্কা ও আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে লোকজন এ মেলায় যোগদান করতো। এটি মদীনা হতে প্রায় আশি মাইল দূরে অবস্থিত।

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

বদর যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির শক্তিকে পরাজিত করে ইসলামের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের সূচনা করেন। এর মাধ্যমে সত্য মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়। এজন্য এ যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বলা হয়। আল কোরআনে এই দিনকে ‏يوم الفرقان হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 


বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

আবু জেহেল আবু সুফিয়ানের কাফেলার সাহায্যার্থে এক হাজার সৈন্য বাহিনী নিয়ে রওয়ানা করে। তন্মধ্যে দুইশত অশ্বারোহী সাতশত উষ্ট্রারোহীর মধ্যে ছয়শত লৌহবর্মধারী ছিল। আবু জেহেল বদর ময়দানে দক্ষিণ প্রান্তে মক্কার অংশে নিম্নভূমিতে সুবিধামত স্থানে তাঁবু গেড়ে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে উঠে। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ আট অথবা বার রামাদ্বান তারিখে তিনশত তের জন মুজাহিদের বাহিনী নিয়ে রওয়ানা হন। যার মধ্যে বিরাশিজন মুহাজির এবং আনসারগণের মধ্যে আউস গোত্রের একষট্টিজন ও খাজরাজ গোত্রের একশত সত্তরজন সাহাবী ছিলেন। তিন শতাদিক লোকের এ বাহিনীতে মাত্র দুইটি ঘোড়া (হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ) এর একটি ও হযরত আসওয়াদ (রাঃ) এর একটি) এবং সত্তরটি উট ছিল, যাতে দুই-তিনজন করে পালাক্রমে সওয়ার হয়ে চলতে হতো। অতঃপর ‎রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ বদর প্রান্তরের নিকটবতী অপেক্ষাকৃত উচু ভূমিতে ষোল রামাদ্বান তাঁবু স্থাপন করেন। ঐ রাতে আল্লাহ পাক প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করেন। প্রান্তরের মাটি ছিল নরম ভেজা।রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ ও তাঁর সাহাবীরা পর্যাপ্ত বৃষ্টি পেলেন, যার ফলে তাদের জমিন শক্ত যে গেল। ফলে চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য এলো। পক্ষান্তরে কোরাইশ পক্ষের মাটি এত স্যাঁতস্যাঁত হয়ে গেল যে, তাদের চলাচল কঠিন হয়ে গেল। রাসূলুল্লা‎ﷺ মুসলিম  বাহিনীকে আরো বেশি পানি আছে এমন জায়গায় সরিয়ে নিলেন। হযরত হুবাব ইবনু মুনযির ইবনে জামুহ (রাঃ) এর পরামর্শে রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ অন্যান্য কূপ বন্ধ করে দিলেন। 


আরও পড়ুন: লাল গরু এসে গেছে? আল আক্বসা ভেঙে থার্ড টেম্পল তৈরি করা হবে কি?


দ্বিতীয় হিজরী সতের রামাদ্বান মুতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের এগার মার্চ শুক্রবার যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠলো এবং সে যুগের প্রথা অনুযায়ী কোরাইশ পক্ষ মুসলিম পক্ষের যোদ্ধাদের দ্বৈতযুদ্ধে আহবান করল। তাদের একই পরিবারের তিনজন সেরা অশ্বারোহী বীর- উতবা , শায়বাহ ইবন রাবীআহ এবং ওলীদ ইবন উবা এগিয়ে এল। জবাবে মুসলিম পক্ষ হতে হয়রত আউফ (রাঃ) ও হযরত মুআওয়িয ইবনু হারিস (রাঃ) এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) তিনজন আনসার যুবক বীরদর্পে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু কোরাইশ পক্ষ বলে উঠলো হে মুহাম্মদ, আমাদের স্বগোত্রীয় সমকক্ষদের পাঠাও। তখন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ বললেন, হে ওবায়দাহ, হে হামযা, হে আলী, তোমরা যাও। অতঃপর হযরত আলী (রাঃ) তার প্রতিপক্ষ ওলীদ ইবনু উবাকে, হযরত হামযা (রাঃ) তার প্রতিপক্ষ শায়বা ইবনু রাবীআকে এক নিমিষেই খতম করে ফেলেন। এ দিকে বায়োবৃদ্ধ হযরত ওবায়দা ইবনুল হারিস (রাঃ) তার প্রতিপক্ষ উৎবা বিন রাবীআর সঙ্গে যুদ্ধে আহত হলেন। হযরত আলী ও হামযা (রাঃ) তার সাহায্যে এগিয়ে এসে উবাকে হত্যা করেন এবং হযরত উবায়দা (রাঃ)'কে কাধে তুলে নিয়ে মুসলিম বাহিনীর মধ্যে পৌঁছে দেন। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে যুদ্ধ থেকে মদিনা ফেরার পথে চতুর্থ বা পঞ্চম দিন হয়রত উবায়দা (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন।


প্রথম আঘাতেই সেরা তিনজন বীর যোদ্ধা ও গোত্র নেতাকে হারিয়ে কোরাইশা পক্ষ মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এসময় রাসূলুল্‎ﷺ আল্লাহর নিকট আকুলভাবে নিন্মাক্তো প্রার্থনা করেন, হে আল্লাহ ! তুমি আমার সাথে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ তা পূর্ণ করো। হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট তোমার ওয়াদাকৃত সাহায্যের নিবেদন করছি। হে আল্লাহ ! আজ যদি আপনি এ দলকে ধ্বংস করেন, তাহলে আপনার ইবাদত করার জন্য পৃথিবীতে কেউ থাকবে না”। তিনি বিনীত প্রার্থনায় এমন বিভোর হয়ে পড়লেন যে, তাঁর স্কন্ধ থেকে চাদর পড়ে  গেল। এ দৃশ্য দেখে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছুটে এসে তাঁর চাদর উঠিয়ে দিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেন “হে আল্লাহর রাসূল ‎ﷺ যথেষ্ট হয়েছে। কারণ আল্লাহ আপনাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি অবশ্যই পূরণ করবেন”। 


এ সময় আয়াত নাযিল হল-

“স্মরণ কর যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে। তখন তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি তোমাদের  সাহায্য করবো এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা, যারা একের পর এক আসবে”।


‘’রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ নামাযরত অবস্থায় এক সময় সামান্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠে বলেনঃ “হে আবু বকর ! সুসংবাদ গ্রহণ কর। অল্লাহর সাহায্য এসে গেছে। এইতো জিব্রাইল, তিনি ঘোড়ার লাগাম ধরে আছেন, তাঁর ঘোড়ার সামনের দাঁতগুলো ধুলাময়লা যুক্ত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ বলতে লাগলেন “শীঘ্রই দলটি পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাবে”। 


”মুসলিম বাহিনীর হামলার প্রচন্ডতার সাথে সাথে যোগ হয় ফেরেশতাগণের আক্রমণ। আবু দাউদ আল মাযিনী (রাঃ) বলেন, আমি একজন মুশরিক সৈন্যকে মারতে উদ্যত হই। ইতিমধ্যে তার ছিন্ন মস্তক আমার সামনে এসে পড়ল। আমি বুঝতেই পারলাম না, কে ওকে মারল। ইকরামা বিন আবু জেহেল বলেন- ঐ দিন আমাদের লোকদের মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যেতো, অথচ দেখা যেতো না কে মারলো। মুসলিম বাহিনীর দুর্ধর্ষ আক্রমণে পর্যদুস্ত মুশরিক বাহিনী প্রাণের ভয়ে পালাতে থাকে।


এ দৃশ্য দেখে তাদের ধরে রাখার জন্য আবু জেহেল তার লোকদের উদ্দেশ্যে জোরালো ভাষণে বললো, সুরাকার পলায়নে তোমরা ভেঙ্গে পড়ো না। সে আগে থেকেই মুহাম্মদের চর ছিল (ইবলিস সুরাকার বেশ ধরে আবু জেহেলের বাহিনীর সাথে এসেছিল, পরে সে পলায়ন করে)। উতবা, শায়বা ও ওলীদের মৃত্যুতেও ভীত হওয়ার কারণ নেই। কেননা তাড়াহুড়ো মধ্যে তারা মারা যায়। লাত উযযার শপথ করে বলছি, ওদেরকে শক্ত করে রশি দিয়ে বেঁধে না ফেলা পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। অতএব তোমরা ওদেরকে মের না। বরং ধরো এবং বেঁধে ফেলো। কিন্তু আবূ জেহেলের এ তর্জন গর্জন অসার প্রমাণিত হল। আনসারদের বনু সালামা গোত্রের কিশোর দু'ভাই মুআয ও মুআওয়িয ইবনু আফরা তীব্র বেগে ছুটে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লেন এবং মুআয প্রথম আঘাতে আবু জেহেলের পা তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এ সময় মুআযের কাঁধে ইকরামা ইবন আবু জেহেলের তরবারীর আঘাতে মুআযের একটি হাত কেটে ঝুলতে থাকে। তিনি নিজের পা দিয়ে চেপে ধরে একটানে সেটাকে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। 


তাঁর ছোট ভাই মুআওয়িযের আঘাতে আবূ জেহেল ধরাশায়ী হলে তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ- এর কাছে এসে গর্বভরে বলেন, হে রাসূল ‎ﷺ আবু জেহেলকে আমি হত্যা করেছি। রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ বলেন- তোমাদের তরবারী মুছে ফেলেছ কি ? তারা বললো- না। উভয়ের তরবারী পরীক্ষা করে রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ বলেন- তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছ। হযরত মুআওয়িয ইবনু আফরা (রাঃ) পরবর্তীতে যুদ্ধ করে শহীদ হন এবং হযরত মুআয ইবনু আফরা (রাঃ) উসমান (রাঃ) এর খেলাফতকাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন (এখানে একটি মু'জিযা প্রকাশ হয়েছিলো তা পরবর্তী পর্ব তুলে ধরবো)। হযরত মুআয ও মুআওয়ি (রাঃ) আবু জেহেলকে ধরাশায়ী করা পর আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) গিয়ে দেখেন আবু জেহেলে তখনও নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তিনি তার দাঁড়ি ধরে মাথা কেটে নেবার জন্য ঘাড়ে পা রাখলে সে বলে উঠল “হে মেষের রাখাল, তুই অনেক দুর্লভ মর্যাদা লাভ করেছিস”। উল্লেখ্য যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) মক্কায় থাকাকালে মেষ চরাতেন। তারপর সে বলল, فلو غير أكار قتلني অতঃপর রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ তার মৃতদেহ দেখার পর বললেন, رحم الله ابنى عفراء هما شركاء في قتل فرعون هذا الامة


বদর যুদ্ধের ফলাফল

এ যুদ্ধে ছয়জন মুহাজির ও আটজন আনসার শহীদ হন। কাফিরদের পক্ষে সত্তরজন নিহত ও সত্তরজন নেতস্থানীয় ব্যক্তি বন্দী হয়। তাদের বড় বড় ছব্বিশজন নেতাকে বদরের একটি পরিত্যক্ত দুর্গন্ধময় কপে নিক্ষেপ করা হয়। মুসলমানগণ প্রচুর গনীমতের মালের অধিকারী হন। যুদ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ বদর ময়দানে তিনদিন অবস্থান করেন।


বদর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ কর্তৃক প্রকাশিত মু'জিযাসমূহঃ


১: বদরের যুদ্ধে হযরত উকাশা ইবনু মিহসান আসাদী (রাঃ) এর তরবারী ভেঙ্গে যায়। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট গেলেন। তিনি তাঁর হাতে একটি কাষ্টখন্ড (শুকনো খেজুরের ডাল) দিয়ে বলেন, তুমি এটি দিয়ে যুদ্ধ কর। উবাদা (রাঃ) কাষ্টখন্ডটি (খেজুরের ডাল) হাতে নিতেই আল্লাহর রহমতে তা সূতীক্ষ্ম তরবারীতে পরিণত হয়ে যায়। তিনি ঐ তরবারী দ্বারা যুদ্ধ করতে শুরু করেন। যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হয়। তখন হযরত উবাদা (রাঃ) এর ঐ তরবারীখানার নাম রাখা হয় ‘আল আউন' অর্থাৎ সাহায্য। হযরত উবাদা (রাঃ) জীবনভর বিভিন্ন যুদ্ধে এ তরবারী ব্যবহার করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর খেলাফতকালে ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি তাদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন। ঐ যুদ্ধেও তিনি ‘আল আউন’ তরবারী দ্বারা যুদ্ধ করেছিলেন। 


২: বদর যুদ্ধে বীর বাহাদুর কিশোর সহোদরের একজন হযরত মুআয ইবনু আফরা (রাঃ) এর একটি হাত আবু জেহেলের পুত্র ইকরামার তরবারীর আঘাতে দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। মুআয (রাঃ) হতের খন্ডিত অংশ সহ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের একটু থুথু মুবারক লাগিয়ে খন্ডিত অংশ সংযুক্ত করে দেন। সাথে সাথে হাত জোড়া লেগে যায়। হযরত মুআয (রাঃ) উক্ত হাত নিয়ে সুস্থ অবস্থায় হযরত উসমান (রাঃ) এর খেলাফতকাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।


আরও পড়ুন: ছাত্র বেত্রাঘাতের ইসলামি হুকুম কি?


৩: বদর যুদ্ধের শুরুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মুষ্টি ধূলা হাতে নিয়ে شاهت الوجوه অর্থাৎ তাদের মুখমন্ডল আচ্ছন্ন হোক বলে ঐ গুলোতে ফুঁক দিয়ে শত্রুদের দিকে দূর থেকে নিক্ষেপ করেন। উক্ত ধূলিকণাগুলো মাঠের অপর প্রান্তে অবস্থানরত প্রত্যেক শত্রু সেনার (এক হাজার) চোখে গিয়ে পড়ে। এতে করে তারা দিশেহারা হয়ে যায়, তাদের দৃষ্টি বিভ্রাট ঘটে এবং তাদের শক্তি চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। এ সম্পর্কে কোরআনে পাকে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَمَارَمَيت اذ رَمَيْت وَلَٰكِنَّ الله رَمَى অর্থাৎ 'হে রাসুল, আপনি যখন ধূলিকণা নিক্ষেপ করেছিলেন তখন আপনি নিক্ষেপ করেননি বরং আল্লাহ তায়ালাই নিক্ষেপ করেছেন। 


সীরাতে শামিয়া নামে পরিচিত বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থ সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সীরাতি খাইরিল ইবাদ গ্রন্থে ইমাম সালিহী উল্লেখ করেন “ইমাম তাবারানী ও আবু শায়খ সহীহ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলীকে বলেন, এক মুষ্টি বালু আমাকে দাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বালু কাফিরদের মুখে ছুঁড়ে মারেন কাফিরদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিও বাকি থাকল না যার চোখে সে বালুর কণা ঢুকেনি। ইমাম মূসা বিন উকবা ও ইবনে আ’ইয বলেন, নিক্ষিপ্ত সেই বালুর মহিমা ছিল অপরূপ। মুশরিকদের এক ব্যক্তিও ছিল না যার চোখে সে বালুতে ভরেনি। 


৪) যুদ্ধের মাঠ এমন একস্থান যেখানে সাধারণ সিপাহী থেকে প্রধান সেনাপতি পর্যন্ত কারও চোখের পাতায় নিদ্রা ছোঁয়া লাগা প্রশ্নাতীত; কিন্তু বদর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক অনন্য মু'জিযা ছিল যে, যুদ্ধের ময়দানে মুসলিম বাহিনীর চোখে প্রবল নিদ্রা চেপে বসেছিল। কারণ ছিল এই যে, গভীর নিদ্রার মাধ্যমে মানুষের জড়তা, অবসাদ এবং আলস্য দূর হয়ে মানুষ সজীব ও সুদৃঢ় হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় যুদ্ধ ক্ষেত্রের দায়িত্ব পালনে তারা পূর্ণরূপে সফল হয়েছিলেন।


৫: বদর প্রান্তরে মুসলিম বাহিনী ও কোরাইশ বাহিনী নিজেদের পছন্দমত স্থানে তবু স্থাপনের পর কোরাইশদের একটি দল সামনে অগ্রসর হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বানানো হাওযের পানি নিতে থাকে। তাদের মধ্যে হাকীম ইবন হিযামও ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের বলেন, ওদেরকে বাধা দিও না বস্তুত সেদিন ঐ হাওয থেকে যে-ই পানি পান করেছে সে-ই নিহত হয়েছে। একমাত্র হাকীম ইবন হিযাম ছাড়া (তিনি নিহত হননি)। পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করে খাঁটি মুসলমান হয়েছিলেন। এ ঘটনাকে তিনি আজীবন মনে রেখেছিলেন।


৬: বদর যুদ্ধের পূর্বে সন্ধ্যার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী ইবনু আবি তালিব (রাঃ) হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ) ও হযরত সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)'কে একদল সাহাবীসহ বদরের জলাশয়ের কাছে প্রতিপক্ষের অবস্থান ও অন্যান্য তথ্য অনুসন্ধানের জন্য পাঠান। সেখানে তারা কোরাইশ গোত্রের একপাল পানি বহনকারী উট দেখতে পান এবং তার মধ্যে হাজ্জাজ গোত্রের গোলাম আসলাম এবং বনু আস ইবনু সাঈদের গোলাম আবূ ইয়াসার আরীযকে দেখতে পান। তারাঐ লোক দুটিকে পাকড়াও করে নিয়ে আসেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন। সাহাবাগণ তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কারা ? তারা বললো আমরা কোরাইশ গোত্রের পানিসরবরাহকারী। তারা আমাদের খাবার পানি নিতে এখানে পাঠিয়েছে। তাদের কথায় সাহাবাগণের বিশ্বাস জন্মায়নি। তাদের ধারণা ছিল, এরা আবু সুফিয়ানের লোক। তারপর তারা তাদেরকে আবারও মারপিট করেন। প্রচন্ড পিটুনি খেয়ে তারা বললো যে, আমরা আবু সুফিয়ানের লোক। এরপর সাহাবীগণ তাদের আর কোন কিছু জিজ্ঞেস করেননি। ইতোমধ্যে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায শেষ করে বলেন, “তারা যখন সত্য বললো, তখন তোমরা তাদের প্রহার করলে আর যখন মিথ্যা বললো, তখন জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বিরত হলে। আল্লাহর কসম ! এরা নিশ্চয়ই কোরাইশদের লোক”। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তাদের জিজ্ঞাসা করা শুরু করেন, ওহে লোকদ্বয়, তোমরা আমাকে কোরাইশদের খবর বলো। তখন তারা উভয়ে বললো, আল্লাহর কসম ! ঐ যে দূরে বালুর টিলাটা দেখছেন, ওর পিছনে তারা রয়েছে। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তারা সংখ্যায় কত ? আসলাম ও আলী বললো, অনেক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় জিজ্ঞাস করেন, তাদের সাজসরঞ্জাম কিরূপ ? তারা বললো, আমরা জানি না। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, তারা প্রতিদিন কয়টি উট জবাই করে ? তারা বললো, কোন দিন নয়টা, কোন দিন দশটা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাহলে এদের সংখ্যা নয়শো থেকে হাজারের মধ্যে হবে। 


৭: বদর যুদ্ধের আগের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের সুসংবাদ দেন যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে বিজয়ের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি কোরাইশদের সত্তর জন সরদারের নিহত হওয়ার স্থানও দেখতে পাচ্ছি। একথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের লাঠি দিয়ে এক একটি জায়গা চিহ্নিত করে বলেন, এটি আবু জেহেলের নিহত হওয়ার স্থান, এটি উতবার, এটি ওলীদের, এটি শায়বার নিহত হওয়ার স্থান ইত্যাদি। যুদ্ধ শেষে সাহাবায়ে কিরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা বাস্তবে দেখার জন্য অনুসন্ধান করে দেখতে পান রাসলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে যার নাম ধরে জায়গা চিহ্নিত করেছিলেন, ঠিক সে জায়গায়ই সে নিহত হয়েছে।


হযরত উমর (রাঃ) বদর যুদ্ধের আলোচনা বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গতকাল আমাদের বদরের (কাফিরদের নিহত হওয়ার স্থান) দেখিয়ে বলেছিলেন, আগামীকাল এটা হবে অমুকের নিহত হওয়ার স্থান, ইনশাআল্লাহ। বর্ণনাকারী বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, সেই সত্তার কসম যিনি তাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  যে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন সে স্থান থেকে সামান্য ব্যতিক্রম হয়নি।” 


”অন্য বর্ণনায় হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) এ প্রসঙ্গে বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিতে হাত রেখে রেখে বলেন, এখানে অমুক, এখানে অমুক (মত্যবরণ করবে)। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, তাদের কেউই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এর হাত রেখে দেখানো স্থান অতিক্রম করতে পারেনি”।


৮) গুপ্তচর উমায়র ইবনু ওয়াহাব জুমাহীর অনুসন্ধানী রিপোর্ট শুনে হাকীম ইবনু হিযাম কোরাইশ বাহিনীর অন্যতম নেতা উতবা ইবনু রাবীআকে কোরাইশ বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মক্কায় ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ করলে তিনি তাকে সম্মত হন এবং নিজ মিত্র আমর ইবনু হাদরামীর হত্যাকান্ডের ব্যাপারটা মিটিয়ে দেয়ার দায়িত্বেও নেন। উতবা ইবন রাবীআ হাকিম ইবনু হিযামকে বলেন- তুমি আবু জেহেলের কাছে যাও। আমি মনে করি কোরাইশদের বিনা যুদ্ধে ফিরিয়ে নেয়ার প্রশ্নে সে ছাড়া আর কেউ বিরোধিতা করবে না। হাকিম আবু জেহেলের নিকট গিয়ে উতবার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন। তখন আবু জেহেল বললো আল্লাহর শপথ ! উতবার মাথা তখন থেকে খারাপ হয়ে গেছে, যখন সে মোহাম্মদ এবং তার সঙ্গীদের দেখেছে। আল্লাহর কসম ! এটা কখনো হতে পারে না। যতক্ষণ আল্লাহ আমাদের ও মোহাম্মদের ব্যাপারে চূড়ান্ত ফায়সালা না করে দেন, ততক্ষণ আমরা ফিরে যাব না। উতবা যখন আবু জাহেলের এ উক্তি শুনলো যে, “উতবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে” তখন সে বললো- অচিরেই সে ভীরু জানতে পারবে, আমার মাথা খারাপ হয়েছে না তার মাথা খারাপ হয়েছে। অতঃপর উতবা মাথায় চাদর বেঁধে একটা লাল উটের পিটে চড়ে যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়লো। লাল উটের পিটে চড়া উতবা ইবনু রাবীআকে দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মন্তব্য করেন- গোটা কোরাইশ গোত্রের কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি কিছুমাত্র শুভবুদ্ধি থেকে থাকে, তবে এই লোকটার মধ্যে আছে। লোকেরা যদি তার কথা শোনে তাহলে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে। ”বদর যুদ্ধে কোরাইশদের চরম পরাজয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবরূপ লাভ করে।


(৯) বদর যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে কাফিরদের সত্তরজন যুদ্ধবন্দীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের সাথে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, মুক্তিপণের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দিবেন। এ সিদ্ধান্তে যখন হযরত আব্বাস (রাঃ) এর পালা এলো তিনি সম্পদের স্বল্পতার অজুহাতে আশি উকিয়া স্বর্ণমদ্রা মুক্তিপণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, “আপনি বদরের উদ্দেশ্যে বের হবার আগে উম্মুল ফদ্বল এর কাছে যে স্বর্ণ রেখে বলেছিলেন, যদি আমার কিছু হয়ে যায় তবে এই স্বর্ণ তোমার এবং (আমার তিনপুত্র) আব্দুল্লাহ, ফদ্বল ও কুছামের জন্য রেখে গেলাম, সে স্বর্ণ কোথায় ? হযরত আব্বাস বলেন, আমি জিজ্ঞেস করি আপনি কি করে জানলেন ? জবাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহই আমাকে জানিয়েছেন। হযরত আব্বাস বলেন, আপনি সত্যি বলেছেন। আমি তার কাছে যে স্বর্ণ রেখেছি তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সুতরাং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল”।


সুবহানাল্লাহ ! আল্লাহু আকবার !


বদর যুদ্ধ বন্দীদের প্রতি আচরণ ও বদর যুদ্ধ বন্দীদের পরবর্তীতে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেনঃ

আরবের তৎকালীন প্রথানুযায়ী যুদ্ধ বন্দীদেরকে কাতল করা, চির দাস বানানো অথবা মুক্তিপণ নিয়ে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হতো। সাহাবায়ে কিরামের পরামর্শ অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ ﷺ বন্দীদের কাতল না করে মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। সিদ্ধান্ত ঘোষিত হলো- মুক্তিপণ দেয়ার মত যাদের সামর্থ আছে তারা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি লাভ করবে। আর যাদের সামর্থ নেই তাদের মুক্তিপণ নির্ধারিত হলো আনসার সাহাবীদের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া শিক্ষা দেয়া। ‎রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ এর নির্দেশে মুসলমানগণ যুদ্ধ বন্দীদের প্রতি এত সুলাইম ও উদার ব্যবহার করলেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। হযরত মুসআব বিন উমাইর এর সহোদর আবু আযীয বিন উমাইরও ছিলেন বদরের যুদ্ধে বন্দীগণের একজন। তিনি নিজে বর্ণনা করেছেন, আমি যে আনসার সাহাবীর গৃহে ছিলাম তাঁর অবস্থা ছিল এই যে, সকাল সন্ধ্যা সারা দিনে যে রুটি পাকানো সম্ভব হতো ইহা তিনি আমাকে আহার করায়ে ফেলতেন এবং তিনি নিজে খেজুর খেয়ে দিন কাটাতেন। আমি লজ্জাবোধ করে অনেক সময় তাঁকে রুটি খাওয়ার আবেদন করতাম। কিন্তু তিনি ভক্ষণ করতেন না বরং বলতেন, যুদ্ধ বন্দীদের প্রতি সদ্ব্যবহারের জন্য রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ নির্দেশ দিয়েছেন।

 

রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ ও সাহাবায়ে কিরামের এই সুন্দর ও মনোরম ব্যবহার দেখে বন্দীদের মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে। ফলে পরবর্তীতে অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।


বদর যুদ্ধে কাফির পক্ষের ৭০ জন সৈন্য বন্দী হয়ে হয়ে মদীনায় আসেন। তন্মধ্যে ১৬ জন যুদ্ধ বন্দীদের মধ্যে পরবর্তীতে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তারা হলেনঃ 

১: হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু 

২: হযরত আকিল বিন আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু 

৩: হযরত নাওফাল বিন হারিছ রাদিয়াল্লাহু আনহু 

৪: আবুল আস ইবনে রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু 

৫: হযরত আবু আযীয বিন উমায়ির রাদিয়াল্লাহু আনহু 

৬: হয়রত সায়ীব বিন আবু জাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহু 

৭: হযরত আবু আ'তা আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু 

৮: হযরত মুত্তালিব বিন হানবি রাদিয়াল্লাহু আনহু 

৯: হযরত আবু ওয়াদা সাহমী রাদিয়াল্লাহু আনহু 

১০: হযরত হাজ্জাজ বিন হারিছ রাদিয়াল্লাহু আনহু 

১১: হযরত আবদুল্লাহ বিন উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু 

১২: হযরত ওয়াহব বিন উমায়ির রাদিয়াল্লাহু আনহু 

১৩: হযরত সুহায়িল বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু 

১৪: হযরত আবদানি জামআ রাদিয়াল্লাহু আনহু 

১৫: হযরত কায়িস বিন সায়ীব রাদিয়াল্লাহু আনহু 

১৬: হযরত নাসতাস রাদিয়াল্লাহু আনহু।


বদর যুদ্ধের সফলতা হচ্ছে: আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি, বিশ্ব বিজয়ের সূচনা, সর্বোত্তম ইতিহাস সৃষ্টি, প্রথম সামরিক বিজয়, কুরাইশদের শক্তি খর্ব, ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন, নবযুগের সূচনা, চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারক যুদ্ধ, রাজনৈতিক ক্ষমতায় ভিত্তি স্থাপন, জেহাদের অনুপ্রেরণা, বীরত্বের খেতাব লাভ, পার্থিব শক্তির ভিত্তি স্থাপন, ইসলাম ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র প্রতিষ্ঠা, মিথ্যার ওপর সত্যের জয় এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সৃষ্টি। বদরযুদ্ধের পর মুসলমানরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপর নেতৃত্বে উহুদ খন্দক বনু নাজীর, বনু করাইজা বনু কায়নোকা খায়বর যুদ্ধে, তায়েফ মক্কা বিজয় হুনাইন যুদ্ধে কাফিরদের সাথে মুসলমানদের মোকাবিলা হলেও বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে যুগান্তকারী যুদ্ধ। কারণ এযুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী না হলে পৃথিবী থেকে ইসলামের নিশানা বিলীন হয়ে যেত। আর এ যুদ্ধের অপর গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো বদর যুদ্ধের বছরই মুসলমানদের উপর রোজা ফরজ হয়। অসম বদর যুদ্ধের মাধ্যমেই হক ও বাতিলের পার্থক্য সুনিশ্চিত হয়েছে।



উপসংহার

মহান আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে বদর যুদ্ধের চেতনা ধারন করে জিবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুক।



তথ্যসূত্রঃ

১। মু'জামুল বুলদান, য্যাকুত (বদর শিরোনামে)। জামহারাতু আনসাবিল আরাব, ইবন হাযম, পৃষ্ঠা ১১।

২। সীরাতে ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯৪। সীরাতুন্ নবী ‎ﷺ , আল্লামা শিবলী নোমানী, পৃষ্ঠা ৯৫।

৩। সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ওয়া সিয়ার, পৃষ্ঠা - ৭৫২, হাদিস- ১৭৬৩।

৪। সহীহ বুখারী, দ্বিতীয় খন্ড, কিতাবুত তাফসির, পৃষ্ঠা - ৯৫৭, হাদিস- ৩৯৫৪।

সূরা আনফাল, আয়াত- ০৯।

সূরা আল কামার, আয়াত- ৪৫।

সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা- ৩০৯।

সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা ৩১৯।

সূরা আনফাল, আয়াত- ১৭।

সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সীরাতি খাইরিল ইবাদ, ইমাম সালিহী, পৃষ্ঠা ৭৪।

সীরাতে ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা- ৩০৮, ৩০৩।

সহীহ মুসলিম, দ্বিতীয় খন্ড, হাদিস- ৭৪০২, ৭৪২১।

সীরাতে ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা- ৩০৮-৯।

আসবাবুন নুযুল, ইমাম ওয়াকিদী, পৃষ্ঠা- ২৪৫।

তাফসিরে ইবনু কাছির, চতুর্থ খন্ড, পৃষ্ঠা- ৯২।

Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন