হতাশা থেকে মুক্তির উপায়
অতিরিক্ত হতাশা-উত্তেজনা আমাদেরকে অক্ষম বানিয়ে দেয়
অনলাইনে যারা কেবল হতাশামূলক উত্তেজনা প্রচার করে, আমি তাদের থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করি। আপনি কখনোই হতাশ হবেন না বা উত্তেজনা অপ্রয়োজনীয়—এটা আমি মোটেই বলছি না। হতাশা ও উত্তেজনা খুবই মূল্যবান সম্পদ। আমাদের সহ্যক্ষমতার একটা লিমিট আছে। জনতাকে নিয়মিত উত্তেজিত করতে থাকলে একসময় তাদের আবেগ ভোতা হয়ে যাবে। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আপনি আর জনতাকে পাশে পাবেন না।
দেখুন, আপনি যদি জনতার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে চান, যদি তাদের নেতৃত্ব দিতে চান, তবে আপনি তাদের ইমোশন নিয়ে কাজ করতে পারেন, অন্যথায় জাতির দুর্বল জায়গায় হাত দিবেন না—এই অল্প কয়েকটা লাইকের জন্য আপনি কি জনতার এত বড় ক্ষতি করতে পারেন? আশরাফ আলি থানবি মানুষকে পরাজয় নিয়ে পড়ে থাকতে নিষেধ করতেন। ‘কাশ্মীরে যদি যেতে না পারেন, তবে সারাদিন কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করবেন না—আপনার অনর্থক আলোচনায় ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছুই হবে না।
পাঁচই মের পরে লালবাগ মাদরাসা ছিল প্রচণ্ড শোকে কাতর। প্রতিমুহূর্তে হামলার ভয় কাজ করছিল সবার মধ্যে, শিক্ষকরা অনেকে পলাতক। ছাত্ররা ক্লাসে বসতে পারত না, বসলেও কিতাবে মনোযোগ দিতে পারত না—সে ছিল এক করুণ সময়। ইতিমধ্যে মাদরাসার প্রধান শিক্ষক সবাইকে নিয়ে বসলেন। তিনি বললেন, ময়দানের কাজ ময়দানেই শেষ। ভুলচুক নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে বটে, তবে অতীত-অক্ষমতা নিয়ে পড়ে থাকা যাবে না। অতীত-অক্ষমতায় আটকে রাখা শয়তানের কৌশল। তার আলোচনায় ছাত্র-শিক্ষকদের বুক থেকে পাথর নেমে গেল—স্মৃতি ফিরে আসত বটে, তবে দরস-তাদরিস শুরু হল আবার আগের মতই।
আরও পড়ুন: নারীরা কেন পুরুষের চেয়ে অর্ধেক সম্পত্তি পাবে?
সন্তানদের সামনে বাবারা নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে পারবেন না—এটাই আমাদের সামাজিক শিক্ষা। অক্ষমতা তো থাকেই, তবে অনেককিছুই লুকিয়ে রাখতে হয়। নইলে সন্তানদের মধ্যে ঢুকে যায় পরাজিত মানসিকতা, তারা লড়াই করার সাহসটাই হারিয়ে ফেলে। আপনি যদি জাতির নেতৃত্ব দিতে চান, তবে জনতাকে আশার কথা বলতে হবে। এরদোগান বলেছিলেন, নেতা পাথরের পেছনে লুকালে জনতা পাহাড়ের পেছনে পলায়ন করে—শুধু ছেলেভুলানো আশ্বাসই নয়, আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে, something extraordinary is possible। দাঁড়িয়ে থাকাটাই প্রধানত কঠিন কাজ—আরবি প্রবাদে যেমন আছে, ধারাবাহিকতা অলৌকিকতার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ।