স্বর্ণ ও রুপা মিলিয়ে নেসাব নির্ধারণ প্রসঙ্গ:
নেসাব হল যাকাতযোগ্য সম্পদের শরীয়ত নির্ধারিত পরিমাণ। সম্পদের ধরনভেদে নেসাবের পরিমাণও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন, স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নেসাব হল ২০ মিসকাল। বর্তমান সময়ের হিসাবে সাড়ে সাত ভরি বা ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণ। [সুনানে আবু দাউদ ১/২২১, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৭৭, ৭০৮২]
আর রুপার নেসাব হল ২০০ দিরহাম। বর্তমান সময়ের হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন ভরি বা ৬১২.৩৬ গ্রাম রুপা। এ পরিমাণ রুপা থাকলে যাকাত ফরয হবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৯]
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষনীয়:
ক. কারো সোনা ও রুপা উভয়টিই আছে। এবং প্রত্যেকটিই আলাদা আলাদাভাবে নেসাব পূর্ণ হয়েছে। যেমন সোনা আছে সাড়ে সাত ভরি। রুপা আছে সাড়ে বায়ান্ন ভরি, তাহলে স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যেকটির যাকাত আদায় করবে। একটিকে আরেকটির সাথে মিলানোর দরকার নেই।
খ. আর যদি শুধু সোনা থাকে এবং অন্য সম্পদ না থাকে তাহলে এক্ষেত্রে স্বর্ণের নেসাব ধরা হবে। অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি হলে যাকাত আবশ্যক হবে। এর কম হলে যাকাত আসবে না। কেননা স্বর্ণের সাথে যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকলে যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ থাকা জরুরি। এছাড়া যাকাত ফরয হবে না। যেমন কারো কাছে শুধু চার ভরি স্বর্ণ আছে তাহলে যাকাত দিতে হবে না। এক্ষেত্রে চার ভরি স্বর্ণের মূল্য রূপার নেসাবের সমপরিমাণ হলেও যাকাত ফরয হবে না। মূল্য তখন ধর্তব্য হবে যখন স্বর্ণের সাথে রূপা বা নগদ টাকা অথবা ব্যবসার পণ্য থাকে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৫৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪, ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৭
গ. যদি শুধু রুপা থাকে এবং অন্য সম্পদ না থাকে তাহলে এক্ষেত্রে রুপার নেসাব ধরা হবে। অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন ভরি হলে যাকাত আবশ্যক হবে। এর কম থাকলে যাকাত আসবে না।
ঘ. সোনা এবং রুপা দুটোই আছে, তবে কোনোটিই নিজস্ব নেসাবে পৌছেনি, এক্ষেত্রে একটিকে অপরটির সাথে মিলিয়ে নেসাব পূর্ণ করা হবে কি না এ বিষয়ে দুটি মত রয়েছে।
প্রথম মাযহাবঃ ইমাম ইবনে আবী লাইলা, শুরাইক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম দাউদে যাহেরী, ইমাম শাওকানী, ইবনে উছাইমিন প্রমুখের মতে এক্ষেত্রে একটিকে অপরটির সাথে মিলানো হবে না। বরং প্রত্যেকটির স্বতন্ত্র নেসাব ধরা হবে। স্বতন্ত্র নেসাব পূর্ণ হলে যাকাত আবশ্যক হবে, অন্যথায় নয়।
দ্বিতীয় মাযহাবঃ অধিকাংশ সালাফ ও জুমহুর ফুকাহায়ে কেরাম—তথা হানাফী, মালেকী ও হাম্বলীদের মতে চতুর্থ সুরতে একটিকে অপরটির সাথে মিলানো হবে।
এদের মধ্যে আবার ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এর মতে মূল্যমান নয় বরং অংশের দিক থেকে মিলোনো হবে। যেমন কারো কাছে ১০ দিনার আছে। সাথে আছে ১০০ দিরহাম। ১০ দিনার সমান ১০০ দিরহাম হয়। ১০০ দিরহাম+১০০ দিরহাম মিলে ২০০ দিরহাম হচ্ছে। অর্থাৎ রুপার নেসাব পূর্ণ হচ্ছে। তাই যাকাত আসবে। ১০ দিনারের বাজার মূল্যমান কত আছে সেটা বিবেচনা জরুরি নয়।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ।
যারা বলে মূল্যের দিক থেকে মিলানো হবে, তারা আবার দুই দলে বিভক্ত।
ক. ইমাম আওযায়ী, ইমাম শাবী, ইমাম সাওরির মতে সোনা ও রুপার মধ্যে যার পরিমাণ কম, সেটিকে, যার পরিমাণ বেশি, তার সাথে মূল্যের বিবেচনায় মিলানো হবে; এর বিপরীত নয়।
খ. ইমাম ইবনে কাসীর, ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে মূল্যের দিক থেকে মিলানো হবে, যেভাবে মিলালে নেসাব পূর্ণ হয়, সেভাবেই মিলানো হবে। স্বর্ণের নেসাবে পৌছুক বা রুপার নেসাবে। যেভাবে মিলালে দরিদ্রদের জন্য উপকার হয়, সেভাবেই মিলানো হবে। এর উপরই হানাফি মাযহাবের ফতোয়া।
যেমন কারো কাছে ১০০ দিরহাম আছে, সাথে ৫ দিনার আছে, যার বাজার মূল্য ১০০ দিরহাম। তাহলে ১০০+১০০ মিলে ২০০ দিরহাম পূর্ণ হয়ে যাকাত আসবে।
মূল্যের মানদণ্ডে অধিক সাবধানতা ও সতর্কতার বিবেচনা রয়েছে। তেমনিভাবে এতে দরিদ্রের উপকার বেশি হয়। তাই সাধারণ অবস্থায় এ মানদণ্ডই অগ্রগণ্য ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বলে বিবেচিত হবে।
(অনেক তথ্যসুত্র শাইখ মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি. রচিত ‘যাকাতের আধুনিক প্রয়োগ’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।)
আল ইসতিযকার ৩/১৩৯, আল বায়ান ফি মাজহাবিল ইমাম আশ শাফেয়ী ৩/২৮৫, কিতাবুল আমওয়াল ৪২৫, আল ইসতিযকার ৩/১৩৮, শরহু মুখতাসারিত তাহাবি ২/৩০৯, রদ্দুল মুহতার ৩/২৩৫, মাবসুত সারাখসি ২/১৭৭, ফাতহুল কাদীর ২/২২১, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ১/২৫৭, হিদায়া ১/১৯৬, বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৮
লিখেছেন: Khairul Islam (24/3/24)