মাগুরা দরবার শরীফ: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
মাগুরা দরবারের পরিচিতি ও অবস্থান:
যুগে যুগে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন অনেক মহাপ্রাণ ব্যক্তি, যাদের অশেষ অবদানে মানুষ পেয়েছে যথেষ্ট উপকার এবং বিপদগামী না হয়ে পেয়েছে পরম করুণাময় স্রষ্টার পথের সন্ধান। যিনি সমাজ থেকে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, শিরক, বিদআত দূরীভূত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আলোর নিশান। এমনি এক মহাপ্রাণ ব্যক্তি পীরে কামেল শাহ্সুফী খন্দকার আবদুল হামিদ(হাজী সাহেব হুজুর রহ.)। যিনি মাগুরা সদর থানার খামারকুচুন্দি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
{getToc} $title={Table of Contents}
মাগুরা দরবারে যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা:
ঢাকা থেকে মাগুরা ভায়না মোড়। সেখান থেকে হাজী সাহেব হুজুরের দরবার শরীফ।
মাগুরা দরবারের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান পরিচালক:
মাগুরা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠা ছিলেন শাহ সূফী আলহাজ্জ খন্দকার আব্দুল হামিদ রহ.। তিনি মাগুরা সদর থানার খর্দকুছুন্দি গ্রামে ইংরেজী আঠারশত আশির দশকে এক শুভক্ষণে জন্ম গ্রহণ করেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপন করে, উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার পর তিনি মুর্শিদাবাদ নবাব ইনষ্টিটিউটে এন্ট্রাস শ্রেণীতে ভর্তি হন। এন্টাস পাস করার পর ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টারি পড়ার সুযোগ পাওয়ার পরও তিনি সেদিকে না তাকিয়ে আধ্যাত্মিক জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়েন ।
তিনি ফুরফুরা শরীফের পীরে কামিল মুজাদ্দিদে যামান হযরত আবূ বকর সিদ্দীকি র. এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। কলকাতায় পীরের দরবারে থাকার জন্য ইংরেজ অফিসারের অধীনে চাকরি নেন। ইংরেজ অফিসার পীরের সাথে দেখা করতে না দেয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে পীরের দরবারে চলে যান এবং কামালিয়াত অর্জন করে মাত্র ৩০/৩৫ বছর বয়সে খেলাফত লাভ করেন। এ মহান ওলী ১৯৮৫ খৃ: ১৪ ই মার্চ ইন্তিকাল করেন। মাগুরা দরবার শরীফের মাদরাসার পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।
তার ইন্তেকালের পর তার একমাত্র ছেলে মাওলানা খন্দকার রশিদ আহমদ রহ. দরবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার ইন্তেকালের পর বর্তমানে তার বড় ছেলে মাওলানা আবু সালেহ মোহাম্মদ মু'তাসিম বিল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ দরবারের দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন: যাকাতের হিসেব স্বর্ণ ও রুপা মিলিয়ে নেসাব নির্ধারণ
মাগুরা দরবারের মাহফিল:
প্রতি চন্দ্র মাসের ৯ তারিখ তাঁর নিজ বাড়ীতে মাহফিল হয় এবং প্রতি বছর ২১,২২,২৩ শে পৌষ এ তিনদিন বাৎসরিক মাহফিল হয়।
মাগুরা দরবারের উল্লেখযোগ্য উলামায়ে কেরাম
যে সকল উলামায়ে কেরামগণ বিভিন্ন সময়ে দরবার ও মাদরাসার খেদমত করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তন্মধ্যে- মাওলানা খন্দকার রশীদ আহমদ রহ. এবং কুমিল্লা মছিহাড়া গ্রাম নিবাসি মাওলানা সৈয়দ আবূল ফাত্তাহ মো: ফরিদ উদ্দিন রহ. আবু সালেহ মোহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ, আবু তালহা মুহাম্মদ নুরুল্লাহ, আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওজিমুদ্দীন, আবু হাসান মুহাম্মদ আবদুল মুক্তাদির, আবু ইউসুফ মুহাম্মদ মুত্তাকি বিল্লাহ।
মাগুরা দরবারের আকিদা:
মাগুরা দরবার শরীফ সূচনালগ্ন থেকেই পরিপূর্ণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী। মাযহাবে হানাফীর ধারক বাহক। তরিকায়ে কাদেরীয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদীয়া, মুহাম্মদীয়ার প্রচার প্রসার, তালিম তাওয়াজ্জুহ, সবকাদি মশক করিয়ে থাকেন।
মাগুরা দরবারের খেদমতসমূহ:
ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্যে খন্দকার আবদুল হামিদ রহ. মাগুরাসহ অসংখ্য জায়গায় গড়ে তোলেন অনেক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, মসজিদ মক্তব ইত্যাদি।যেমন- ঘোড়াশাল সিদ্দিকীয়া হামিদিয়া মাদ্রাসা, ঝিনেদা শাগাছা সিদ্দিকীয়া হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, পাঁচ পাকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, কশাবাড়িয়া (ঝিনেপা) ও কোটবাগ হামীদিয়া মাদ্রাসা, নাছনা (ঝিনেদা) সিনিয়র মাদ্রাসা, খানকায়ে হামিদীয়া, মাগুরা।
ইসলামের হুকুম আহকাম, সমাজের কুসংস্কার মূল উৎপাটনে, আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রচারে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে মাসিক মাহফিল (প্রশিক্ষণ ক্যাম্প) গড়ে তুলেন।
মাগুরা দরবার শরীফ কর্তৃক অজিফা:
সকাল সন্ধা ও ফরজ নামাজবাদ মাসনূন দুআ ও জিকিরের আমল।
সকাল সন্ধায় সওয়াব রেসানী। অর্থাৎ, প্রথমে ৭ বার ইস্তেগফার, বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা ৩ বার, সূরায়ে ইখলাস ১০ বার, দরুদ শরীফ ১১ বার, সওয়াব রেসানীর মোনাজাত; ফজর, মাগরিব ও এশাবাদ তরিকানুযায়ী দরুদ ও জিকির।
দুই / চার রাকাত ইশরাকের নামাজ।
সুনানু তিরমিযি-৫৮৬, সুনানু তিরমিযি-৪৭৫), সলাতুত দুহা বা চাশতের নামাজ।
সহীহ মুসলিম-৭১৯), বাদ মাগরিব দুই দুই রাকাত করে ছয় রাকাত আউয়াবিন নামাজ।
ইবনে মাজাহ, ১১৬৭, শেষ রাতে চার/আট/বারো রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ, সন্ধায় সূরা ওয়াকিয়া, বাদ এশা সূরা মুলক তিলাওয়াত করা।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকুলারিকরণ : প্রক্রিয়া ও বিভিন্ন পর্যায়
মাগুরা দরবারের প্রকাশিত গ্রন্থাবলি
১. রাহেজান্নাত, তরীক্বতের আলো, মাজহাব ত্যাগের শেষ পরিণাম, সুন্নাহ্ শিরোনামে ভ্রান্ত আকীদার আহ্বান, মাশয়েখে ফুরফুরার দৃষ্টিতে হাজির নাজির, মুসলিম উম্মাহর আর্তনাদ, আমীন জোরেনা আস্তে, আমি হানাফী হলাম যেভাবে, উলূমে নববী ও নাসিরদ্দীন আলবানী, মাওলানা শব্দের ব্যবহার ও মুসাফাহার সুন্নাহ সম্মত পদ্দতি, বিশ্ব ব্যাপী একই দিনে রোযা ও ঈদ, সম্মিলিত মুনাজাত, অসিয়তের নূর ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে, মাসলাকে সিলসিলায়ে ফুরফুরা শরীফ, এই কঠিন সময়ে ঈমান নিয়ে বাঁচতে হলে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ, নূরের সৃষ্টি সম্পর্কিত সনদ বিহীন জাল হাদীস, বর্জনীয় সুন্নাহ, বাগমারি ফকিরের প্রেতাত্মা দুনিয়াতে এখনো বিদ্যামান, ইসলামে অধিক নফল ইবাদতের রূপরেখা, তাসাওউফ, ঐতিহাসিক ফতওয়া, সাদৃস্য বর্জিততাওহীদ, আলমুহান্নাদ, ইসলামের নামে সন্ত্রাস, মাযহাব ত্যাগের শেষ পরিণাম ইসলাম ত্যাগ, সুন্নাহ' শিরোনামে ভ্রান্ত আকীদার আহ্বান, মাশায়েখে ফুরফুরার দৃষ্টিতে হাযির-নাযির ও ইলমে গায়েব ‘আকীদা, সুন্নাহ ও সাহাবা-তাবেঈনের কর্ম পদ্ধতির আলোকে ইসলামে অধিক নফল ইবাদতের রূপরেখা, মুসলিম উম্মাহর আর্তনাদ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের দাফন সম্পন্ন ।
লিখেছেন: এমদাদুল হক আবেদীন।