সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁরা কি সত্যের মাপকাঠি? যদি সত্যের মাপকাঠি হন, তবে দলিল উল্লেখ করেন এবং আমাদের আপত্তির জবাব দেন?
জবাবঃ অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি। যেমন= সূরা ফাতিহার মধ্যে আমরা বলি, হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে সঠিক/সরল পথ দেখান। তাদের পথ, যাঁদের উপর আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তাদের পথ নয়, যারা পথভ্রষ্ট। তাহলে যাঁদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দান করেছেন তারা কারা? অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, فأولٰٸك مع الّذين أنعم اللّه عليهم من النّبيين والصّديقين والشهداء والصالحين. তথা যাদের উপর আমি নিয়ামত দান করেছি তারা হলো, নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ, এবং সালীহীগণ। (সূরা নিসা, আয়াত নং ৬৯)।
সুতরাং নবীগণের পরে সালেহীনদের মধ্যে সর্ব প্রথম হলো সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ), তারপর তাবেঈনগণ, তারপর তাবেতাবেঈনগণ।
তাই কোরআন মাজীদ থেকে প্রমাণিত হলো যে, নবীগণের পাশাপাশি সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাদের পথও সঠিক পথ এবং তাদের পথকেও অনুসরণ করতে বলেছেন।
২নং দলিলঃ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, فإن اٰمنوا بمثل ماأنتم به فقد اهتدوا وإن تولّوا فإنّما هم في شقاق، فسيکفيكهم اللّه ، وهو السميع العليم. অর্থাৎ যদি তারা তোমাদের মতো ইমান আনে তাহলে তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তারা বিশাল এক হঠকরিতায় রয়েছে। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৩৭)।
৩নং দলিলঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ومن يشاقق الرسول من بعد ماتبيّن له الهدٰی ويتّبع غير سبيل المٶمنين نولّه ماتولّی ونصله جهنّم ، وساءت مصيرا. অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসুলের বিরোধিতা করবে, তার নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মু'মিনদের পথ ছেড়ে অন্য পথ অনুসরণ করবে, অবশ্যই তাকে আমি সেদিকে ফিরাব যেদিকে সে ফিরতে চায় এবং আমি জাহান্নামে জ্বালাব। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল। (সূরা নিসা, আয়াত নং ১১৫)।
সুতরাং নবীজি ﷺ এর পর মুমিনদের মধ্যে সর্ব প্রথম হলো সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)। তাই তাঁদের রাস্তা বাদ দিয়ে যারা অন্য রাস্তায় চলবে, তাঁদেরকে আল্লাহ তাআলা সেই রাস্তায় চালিয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাবেন।
৪নং দলিলঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, والسابقون الاوّلون من المهاجرين والأنصار الّذين اتبعوهم بإحسان رضی اللّه عنهم ورضوا عنه وأعدّلهم جنّات تجری تحتها الأنهار خالدين فيها أبدا ، ذٰلك الفوز العظيم. অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও প্রথম এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাঁদের অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট ও তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তাঁদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। তাঁরা সেখানে অনন্তকাল থাকবে, এটি মহা সাফল্য। (সূরা তওবা)
৫নং দলিলঃ لقد تاب اللّه علی النّبي والمهاجرين والأنصار الّذين اتّبعوه في ساعة العسرة من بعد ماکاد يزيغ قلوب فريق منهم ثمّ تاب عليهم ، إنّه بهم رءوف الرّحيم. অর্থাৎ আল্লাহ কৃপা দৃষ্টি দিলেন নবীর উপরে এবং মুহাজির ও আনসারদের উপরে, যারা তাঁর অনুসরণ করেছিলো অতি কঠিন সময়ে; এরপরও যখন তাঁদের এক দলের অন্তর বিচলিত উপক্রম হয়েছিলো। তারপর আল্লাহ তাআলা তাঁদের তওবা কবুল করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁদের প্রতি পরম মমতাময়, পরম দয়ালু। (সূরা তওবা: ১১৭)।
সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তাঁদের তওবা কবুল করেছেন এবং তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন। যেমনঃ رضی اللّه عنهم ورضوا عنه ، ذٰلك الفوز العظيم. অর্থাৎ আল্লাহ তাঁদের উপর সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট, এটি তাঁদের জন্য বিশাল সফলতা। (সূরা আল মায়িদা: ১১৯)।
তাই সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁরা ভুল-ত্রুটি করেছেন তাই তাঁরা সত্যের মাপকাঠি নন এই কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।
৬নং দলিলঃ قل الحمد للّه وسلام علی عباده الّذين اصطفی ، اٰللّه خير أمّا يشرکون অর্থাৎ আপনি বলুন, সকল প্রশংসা আল্লাহ পাকের জন্য, আর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর সেসব বান্দাদের উপর, যাঁদের তিনি বাছাই করে নিয়েছেন। (সূরা নামল: ৫৯)।
হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন, আলোচ্য আয়াতে عباده الّذين اصطفی "বাছাই করেছেন বলতে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) কে বুঝানো হয়েছে, যাঁদেরকে আল্লাহ তার প্রিয় নবীর সাথী হিসাবে মনোনীত করেছেন। ইবনে জারীর আত তাবারী (রহঃ) বলেন, বাছাইকৃত বান্দা বলতে সে সকল মহান ব্যক্তিদের বুঝানো হয়েছে যাঁদেরকে আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় নবীর জন্য মনোনীত করেছেন এবং যাঁদেরকে তার নবীর সাথী এবং সাহায্যকারী বানিয়েছেন।( জামিউল বায়ান, ২য় খন্ড, ২০ পৃষ্ঠা; মিনহাজুস সুন্নাহ লি ইবনে তাইমিয়া, ১ম খন্ড, ১৫৯ পৃষ্ঠা)।
৭নং দলিলঃ সূরা ফাতাহ এর ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁদের ৭টি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা= ১. তাঁরা কাফেরদের প্রতি কঠর। ২. পারস্পরিক রহম-দিল, সহানুভূতিশীল। ৩. রুকু সিজদা অবস্থায় পড়ে থাকে। ৪. এত অত্যাধিক সিজদাকারী তাঁরা যে সিজদার চিন্হ তাঁদের কপালে সৃষ্টি হয়ে আছে। ৬. সাহাবায়ে কেরামদের মর্যাদা পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিলে এসেছে। ৭. তাঁদের উদাহরণ এমন ফলের সাথে যা প্রথমে ছিলো দুর্বল। এরা আস্তে আস্তে পরে সফল হয়েছিলো। যে কারণে কাফেরদের গাত্রজ্বালা শুরু হয়েছিলো এবং তারা রাগে-ক্ষোভে জ্বলছিল।
৮নং দলিলঃ হযরত আবু মূসা (রাঃ) নবীজি থেকে বর্ণনা করেন, নবীজি (সাঃ) বলেছেন, ألنّجوم أمنة للسّماء فإذا ذهبت النجوم أتی السّماء ماتوعد وأنا أمنة لأصحابي فإذا ذهبت أتی أصحابي مايوعدون وأصحابي أمنة لأمتي فإذا ذهب أصحابي أتی أمّتي ما يوعدون. অর্থাৎ তারকাপুঞ্জ হলো আকাশের নিরাপত্তাকারী। তারকা ঝরে পড়লে আসমান ভেঙ্গে পড়বে। আর আমি আমার সাহাবীদের জন্য নিরাপত্তাকারী। অতএব আমার যখন ইন্তেকাল হবে, তখন আমার সাহাবীদের জন্য সেই সময় আসবে, যা তাঁদের সাথে ওয়াদা করা হয়েছে। আর আমার সাহাবীগণ হলেন আমার উম্মতের নিরাপত্তাকারী। যখন আমার সাহাবীগণ কবরে যাবে, তখন আমার উম্মতের উপর সেই জিনিসগুলো অবতীর্ণ হবে, যার ওয়াদা তাঁদের সাথে করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৩১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৯৫৮৪)।
সুতরাং উক্ত হাদিসে নবীজি স্পষ্ট বলেছেন যে, আমার সাহাবীগণ হলেন আমার উম্মতের নিরাপত্তাকারী।
৯নং দলিলঃ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁদের পথ হচ্ছে নাজাত প্রাপ্ত পথ। যেমন:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
অর্থাৎ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বানী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উম্মাতের মধ্যেও কেউ তাই করবে। আর বানী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ। (তিরমিযি, হাদিস নং ২৬৪১)
১০নং দলিলঃ قال رسول اللّه ﷺ : أصحابي كانّجوم فبأتهم إقتديتم إهتديتم. অর্থাৎ নবীজি (সাঃ) বলেছেন, আমার সাহাবীগণ হলেন নক্ষত্র তুল্য। তাঁদের যে কোনো জনকে অনুসরণ করবে তোমরা হেদায়েত পাবে। (জামিউল উসূল ফী আহাদীসির রাসুল, ৮খন্ড, ৫৫৬ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৬৩৬৯)।
১১নং দলিলঃ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ) বলেছেন, عن أبي سعيد الخدريّ رضی اللّه عنه قال قال رسول اللّه ﷺ : لا تسبّوا أصحابي لا تسبّوا أصحابي فوالّذی نفسي بيده لو أنّ احدکم أنفق مثل أُحد ذهبا ما أدرك مدّ أحدهم ولانصيفه . অর্থাৎ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার সাহাবীদেরকে তোমরা হেয়প্রতিপন্ন করো না। কেননা, ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন। যদি তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণও দান করে তাহলে তাঁদের মুদ-এক পাল্লা দান বা অর্ধের পাল্লা দানের সমকক্ষ হবে না। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৫৪১ ; সহীহ মুসলিম হাদিস নং ২৫৪০)।
সুতরাং سبّ বলা হয় কোনো ধরনের অসম্মান করাকে, যা নিষেধ করা হয়েছে।
১২নং দলিলঃ হযরত উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, من کان مستنّا فليستنّ بمن قد مات ، فإنّ الحيّ لا تٶمن عليه الفتنة ، ألٸك أصحاب محمّد ﷺ ، کانوا أفضل هذه الأمّة : أبرّها قلوبا ، وأعقمها علما ، وأقلّها تکلّفا ، إختارهم اللّه لصحبة نبيّه ، ولإقامة دينه ، فاعرفوا لهم فضلهم ، واتبعوهم علی أثرهم ، وتمسّکوا بما استطعتم من اخلاقهم وسيرهم ، فإنّهم کانوا علی الهدی المستقيم. অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি অনুসরণ করিতে চায় তাহলে সে যেন নবীর সাহাবীদের আদর্শকে আঁকড়িয়ে ধরে, যারা আজ নেই, ইন্তেকাল করেছেন। কেননা তাঁরা নবীর সাহাবী ও উম্মতের শ্রেষ্ঠতম মানুষ। তাঁরা অতিশয় পবিত্র মনের অধিকারী, অতীব গভীর জ্ঞানের অধিকারী, তাঁরা লৌকিকতা এবং কৃত্তিমতাশূণ্য। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে নবীজির সহবত অর্জনের জন্য এবং অনাগত ব্যক্তিদের নিকট দ্বীন পৌছানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। এরা হলেন আল্লাহর বাছাইকৃত ব্যক্তিবর্গ। এ জন্য তোমরা তাঁদের চরিত্র অনুকরণে চরিত্রবান হও। কেননা, তাঁরা নবীজির সাথী, তাঁরা সিরাতে মুস্তাকীমের ওপরে সুপ্রতিষ্ঠিত। (মুসনাদে আহমদ, ১ম খন্ড ৩৭৯ পৃষ্ঠা)।
সুতরাং অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সত্যের মাপকাঠি। আর হযরত উমর (রাঃ) এর সুন্নাতকেও নবীজি মানতে বলেছেন।
আরও পড়ুন: ইতিবাচক দেওবন্দ, নেতিবাচক দেওবন্দ
এক ভাইয়ের কিছু আপত্তির জবাব দিয়েছিলাম, সেই জবাব গুলো নিচে তুলে ধরলাম।
মন্তব্যঃ নবীজি ﷺ হলেন যাচাই-বাছাইয়ের উর্ধ্বে, আর সাহাবীদের হাদিস যাছাই করা হয় নবীজি ﷺ এর দ্বারা। তাই নবীজিই হলেন একমাত্র সত্যের মাপকাঠি।
জবাবঃ আপনি যে সত্যের মাপকাঠির সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী তো সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সত্যের মাপকাঠি প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, নবীজী ﷺ এর হাদিসও তো যাচাই-বাছাইয়ের উর্ধ্বে নয়, কারণ, নবীজী ﷺ এর হাদিস কওলী এবং ফেলীর মধ্যে দন্দ হলে সে ক্ষেত্রেও যাচাই-বাছাই করিতে হয়। তেমনিভাবে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের সাথে কোরআনের সাংঘর্ষিক হলেও যাচাই- বাছাই করিতে হয়।
মন্তব্যঃ নবীজি ﷺ হলেন মাছুম। আর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) মাছুম নন, তাঁদের ভুল-ত্রুটি ছিলো, তাঁরা তওবাও করেছেন। তাই সত্যের মাপকাঠি হওয়ার জন্য মাছুম হওয়া দরকার।
জবাবঃ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে নন, যার জন্য তারা সত্যের মাপকাঠি নন এই কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, তাঁরা হলেন মাহফুজ, তাঁদের ভুল-ত্রুটি গুলোকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিয়ে তাঁদেরকে পরবর্তীতে হেফাজত করেছেন ও তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন এবং দলিল হিসাবে তাঁদেরকে মানতে হবে তার ঘোষণা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল দিয়েছেন।
২নং জবাবঃ এমন কোনো হাদিস দেখাতে পারবেন যে, কোনো সাহাবীর ভুলের কারণে নবীজি ﷺ তাঁদেরকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন?
মন্তব্যঃ তাঁদের ভুল ক্ষমা করা হলেও তাদের ভুলগুলো সঠিক ও সত্য বলার সুযোগ নেই। তাই তারা সত্যের মাপকাঠি নন। সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসুলুল্লাহ ﷺ।
জবাবঃ তাঁদের ভুলগুলোকে আমরা ইজতেহাদী ভুল মনে করে থাকি। আর ইজতেহাদী ভুল আল্লাহর নিকট অপরাধ নয়। অতঃপর ইজতেহাদী ভুল নবীগণেরও আছে। তাই বলে কি তাঁরা সত্যের মাপকাঠি নন?
আপনি মনগড়া একেকটি শর্ত দিয়ে বলিতেছেন যে, তাই তারা সত্যের মাপকাঠি নন। কিন্তু সত্যের মাপকাঠি হওয়ার জন্য এসব শর্ত গুলো থাকা যে আবশ্যক তার দলিল কোথায়? নাকি সত্যের মাপকাঠি কেমন হবে তা আপনি নির্ধারণ করবেন?
মন্তব্যঃ সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মত সত্যের মাপকাঠি নন। রাসুলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি মনে করা কুফুরী। স্বয়ং সাহাবাগণও কখনোই নিজেদের সত্যের মাপকাঠি বলে দাবী করেননি।
জবাবঃ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) নবীগণের মত সত্যের মাপকাঠি সে কথা কে বলেছে? নিজে একটা মনগড়া দাবী করে সেটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেন কেনো? মুজতাহিদগণও সত্যের মাপকাঠি, কিন্তু এখন এ কথা বলা যাবে না যে, মুজতাহিদগণ সাহাবায়ে কেরামদের মত সত্যের মাপকাঠি।
অতঃপর আপনি বলিলেন যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁরা কখনোই দাবী করেননি যে, তাঁরা সত্যের মাপকাঠি। অথচ আমি হাদিস দিয়েছি যে, হযরত উমর (রাঃ) সাহাবায়ে কেরামদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলেছেন।
আর আপনি এ ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামদের কওল খুজেন কেনো? আল্লাহ ও তাঁর নবী সাহাবায়ে কেরামদেরকে সত্যের মাপকাঠি বানিয়েছেন, সে কওল কি আপনার কাছে ছোটো মনে হয় এ ক্ষেত্রে?
অতঃপর নবীজি ﷺ ছাড়া অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি মনে করা কুফরি হলো কোন দলিলের ভিত্তিতে? নবীজি ﷺ তাঁদেরকে সত্যের মাপকাঠি বানিয়ে কি কুফরি করেছেন? নায়ুযুবিল্লাহ!
আপনাকে বলেছি, দলিল ছাড়া নিজের মনগড়া দাবী করবেন না, তারপরও বারবার কেনো মূর্খতা প্রকাশ করেন?
মন্তব্যঃ হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন,
فإن الذي جاؤوا به هو الحق الذي ليس وراءه حق-
"নবীগণ যা নিয়ে এসেছেন, তাই হক তথা সত্য, এ সত্য বহির্ভূত আর কোনো সত্য নেই।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৩৩২)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই বলেন,
أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ حَقًّا وَأَنِّي جِئْتُكُمْ بِحَقٍّ فَأَسْلِمُوا.
"নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল সত্য, আমি তোমাদের নিকট 'হক' সত্য নিয়ে এসেছি। সুতরাং তোমরা (এ সত্যের প্রতি) আত্মসমার্পণ কর (অর্থাৎ ঈমান এনে সত্যের অনুসরণ কর)।" (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৯১১; মুসনাদে আহমদ হাঃ ১২৭৯৩)
ইমাম মালিক (রাহঃ) নবী কারীম (সাঃ) এর কবরের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন:
ما من أحد إلا ومأخوذ من كلامه ومردود عليه إلا صاحب هذه الروضة-
'এ কবরবাসী ছাড়া আর কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথা গ্রহণীয় বর্জনীয়'।" (কিতাবুল মীযান ১/৬৪; মালফুজাতে আযাদ, পৃঃ ১১০)
জবাবঃ নবীজি ﷺ সত্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন সেটাই তো আপনি মানেন না, যতি মানতেন, তবে সাহাবায়ে কেরামদেরকে সত্যের মাপকাঠি মানতেন।
অতঃপর আপনি তো ইমাম ইবনে কাছির (রহঃ) এবং ইমাম মালেক (রহঃ) কথাই তো মানছেন না। যদি মানতেন, তবে নবীজি সাহাবায়ে কেরামদেরকে সত্যের বানিয়েছেন, সেটা মানতেন।
আর আপনি সাহাবায়ে কেরামদেরকে সত্যের মাপকাঠি মানেন না, অথচ ইমাম মালেক ও ইবনে কাছিরের কথা এখন আপনার কাছে দলিল হয়ে গেলো? তাঁদের কথা মানলেও তো হত, তাও মানছেন না?
মন্তব্যঃ সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা সবার সমান না, যার কারণে তাঁদের প্রতি সমান ভাবে ঈমান আনা যাবে না, তাই তাঁরা সত্যের মাপকাঠি নন।
জবাবঃ এটা একটি মূর্খতা। কারণ, হযরত আবু বকর (রাঃ) , হযরত উমর (রাঃ), হযরত ওসমান (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ) এদের সকলের মর্যাদা সমান না, তারপরেও নবীজি ﷺ তাদের সুন্নাতকে (অন্য সাহাবীদের থেকে প্রাধান্য দিয়ে) মানতে বলেছেন।
২নং জবাবঃ ঈমান আনার পদ্ধতি কি ভিন্ন, যে সমানভাবে ঈমান আনা যাবে না তাঁদের মত? বরং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁদের মধ্যে অনেকে ঈমান আনতে গিয়ে বা ঈমান আনার পর ইসলামের জন্য খুব বেশী ত্যাগ শিকার করেছেন, আবার কেউ একটু কম ত্যাগ শিকার করেছেন, যার কারণে তাঁদের মর্যাদা কারো বেশী আবার কারো একটু কম।
মন্তব্যঃ নবীজি ﷺ ঈমানের ক্ষেত্রে মাপকাঠি, কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) নন। যেমনঃ নবীজি ﷺ কে কেউ গালী দিলে মুরতাদ হয়ে যায়, কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁদের ক্ষেত্রে এরূপ বলা হয়নি।
জবাবঃ ঈমানের ক্ষেত্রেও সাহাবায়ে কেরামও মাপকাঠি, তবে হুকুম নবীজি ﷺ এর মত নন। যেমন= নবীজি ﷺ কে কেহ গালী দিলে হত্যা করতে বলা হইছে,আর সাহাবীদের গালী দিয়ে বেত্রাঘাত করতে বলা হইছে।
মন্তব্যঃ সাহাবী হওয়া নির্ভর করে নবীজি ﷺ এর উপর। তাই নবীজি ﷺ একমাত্র সত্যের মাপকাঠি।
জবাবঃ আপনি বলিলেন যে, সাহাবী হওয়া নির্ভর করে নবীজি ﷺ এর উপর, কিন্তু আপনি কি জানেন না যে, তাবেঈ হওয়া নির্ভর করে সাহাবায়ে কেরামদের উপর?
নির্ভর করলে কি সত্যের মাপকাঠি হওয়া যায় না? নবী হওয়া নির্ভর করে আল্লাহ তাআলার উপর, তাই বলে কি নবীজি ﷺ সত্যের মাপকাঠি নন?
২নং জবাবঃ সাহাবী হওয়া নির্ভর করে নবীজি ﷺ এর উপর, তাই তাঁরা সত্যের মাপকাঠি নন এই কথা কোথায় পেয়েছেন? যেখানে কোরআন ও সুন্নাহে সাহাবায়ে কেরামদেরকে সত্যের মাপকাঠি হিসাবে নির্ধারণ করেছেন, সেখানে আপনাকে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি নবীজিকে বানানোর অধিকার দিলো কে?
মন্তব্যঃ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সত্যের মাপকাঠি হতেন, তবে তাঁদের মধ্যে বিরোধ থাকিতো না। সব সাহাবী যদি সত্যের মাপকাঠি হয়, তবে তাঁদের মধ্যে মতানৈক্য হলে বিরোধ হবে কার সাথে?
জবাবঃ আবার মূর্খতা প্রকাশ করলেন যে, সত্যের মাপকাঠি হলে বিরোধ থাকতে পারবো না। অথচ চার মাজহাবই সত্যের মাপকাঠি এবং চার মাজহাবের মধ্যেই বিরোধ আছে। এমনকি নবীজি ﷺ এর মারফু হাদীসের মধ্যেই বিরোধ আছে, তাই বলে কি নবীজি ﷺ সত্যের মাপকাঠি নন?
মন্তব্যঃ কোরআন মাজীদের মধ্যে আছে, তোমাদের মধ্যে দন্দ হলে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের ফিরে যাবে। তাই সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে দন্দ হলে তাঁরা নবীজি ﷺ নিকট গিয়ে সমাধান নিতেন। অতএব, সাহাবায়ে কেরামদের সত্যের মাপকাঠি হলেন নবীজি ﷺ। সুতরাং নবীজিই একমাত্র সত্যের মাপকাঠি।
জবাবঃ সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে দন্দ হলে নবীজি ﷺ এর নিকট গিয়ে সমাধান নিতেন বলে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নন এই কথা আপনি কোথায় পেয়েছেন? বরং অনেক সময় সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে দন্দ হলে সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে যারা ফকীহ ছিলেন তাঁদের কাছে গিয়েও সমাধান নিতেন এবং নবীজি নিজেই তাঁদেরকে ইজতিহাদ করতে বলেছেন। এমনকি তাঁদের মধ্যে মত বিরোধ থাকিলে যেকোনো একজনকে অনুসরণ করতে বলেছেন।
এখানে যে দন্দের কথা বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে মৌলিক আকিদার ক্ষেত্রে। আর মৌলিক আকিদার ক্ষেত্রে আমরা আল্লাহ ও রাসুলকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তাই প্রাধান্য দেওয়ার কারণে যদি সাহাবায়ে কেরাম রাঃ তাঁরা সত্যের মাপকাঠি না হন, তবে একই যুক্তিতে নবীজি ﷺ সত্যের মাপকাঠি হওয়া বাদ পড়ে যাবে।
২নং জবাবঃ নবীজি ﷺ বলেছেন যে, আমার সাহাবীগণ হলেন উম্মতের নিরাপত্তাকারী বা সত্যের মাপকাঠি। তাদের মধ্যে দন্দ থাকার কারণে তাঁরা সত্যের মাপকাঠি নন এমন কথা বলেননি।
৩নং জবাবঃ দন্দ হওয়ার দ্বারা অনেক সময় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসও মানসুক হয়ে যায়। তাই বলে কি নবীজি ﷺ সত্যের মাপকাঠি নন?
মন্তব্যঃ আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজীদের মধ্যে বলেন, হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসুলের আনুগত্য করো এবং নেতাদের অনুসরণ করো, যদি তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়, তবে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ফিরে যাও, যদি তোমরা পরকালকে বিশ্বাস করে থাকো। তাই যেহেতু সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে দন্দ ছিলো, সেহেতু নবীজির দিকেই ফিরে যেতে হবে। তাই নবীজি একমাত্র সত্যের মাপকাঠি।
জবাবঃ আপনি আয়াত উল্লেখ করেছেন যে, হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো এবং নেতার অনুসরণ করো। অতএব তাঁদের মধ্যে যদি মতবিরোধ হয়, তবে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ফিরে যাবে, যদি তোমরা পরকালকে বিশ্বাস করে থাক। কিন্তু আপনি উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা তাফসীর থেকে উল্লেখ করেননি। অথচ নবীজী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের মন মতো কোরআন মাজীদ বুঝলো তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিলো।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে বায়জাবীতে বলা হয়েছে যে, নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে আল্লাহ এবং তার রাসুলের দিকে ফিরে যেতে বলেছেন। এই মতবিরোধটা হলো (মৌলিক) আকিদাগত। উক্ত আয়াতেও শেষের অংশে তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং মৌলিক আকিদার ক্ষেত্রে আমরা আল্লাহ এবং তার রাসুলকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তারমানে এই নয় যে, তিনিই সব ক্ষেত্রে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি, বরং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বা তাঁদের পরবর্তীদেরকে বাদ দিলে ইসলামের মধ্যে অসংখ্য সমস্যার সমাধান খুজে পাওয়া যাবে না। তাই তিনারা সত্যের মাপকাঠির মধ্যে। আর এর জবাব পূর্বেই দিয়েছি যে, প্রাধান্য দেওয়ার দ্বারা তিনারা সত্যের মাপকাঠি হতে পারবেন না এর কোনো প্রমাণ নেই?
মন্তব্যঃ আল্লাহর রাস্তা হলো একটি, আর সেই রাস্তার নির্দেশন হলো নবীজি, তাই নবীজি একমাত্র সত্যের মাপকাঠি।
জবাবঃ আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা হবে একটি, আপনার এই কথাও কোরআন বিরোধী। কারণ, আল্লাহ তাআলা সূরা মায়িদার ১৫ এবং ১৬ নং আয়াতে বলেন, আল্লাহর নিকট হইতে নূর এবং স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট আসিয়াছে। যারা আল্লাহর আনুগত্য করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করিতে চায়, ইহা দ্বারা তিনি তাহাদিগকে শান্তির অনেক গুলো পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোর দিকে নিয়ে যান এবং উহাদিগকে সরল পথে পরিচালিত করেন।
সুতরাং উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা سبيل এর বহুবচন سبل শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা একটি নয় বরং অনেক গুলো। আরো আয়াত আছে এ ব্যাপারে, সেগুলো এখন আর উল্লেখ করলাম না।
২নং জবাবঃ নবীজি ﷺ থেকে শুরু করে মুজতাহিদগণ বা আবেদগণ পর্যন্ত তাঁরা সকলেই সত্যের মাপকাঠি।
যেমনঃ أخبرنا محمد بن المبارك ، حدّثنا يحي بن حمزة حدّثني أبو سلمة ، أنّ النبيّ ﷺ سٸل عن الأمر يحدث ليس في کتاب ولا سنة قال: ينظر فيه العابدون من المٶمنين. অর্থাৎ হযরত আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, দ্বীনের মধ্যে এমনকিছু চালু হলো যার সমাধান কোরআনেও নাই আপনার সুন্নাতেও নাই তখন আমরা কি করবো? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তখন তোমরা লক্ষ করিবে মুমিমগণের মধ্যে যারা আবেদ বা বুযর্গ, তারা যারা যা বলে সেটা গ্রহণ করিবে। (সুনান দারেমী, হাদীস নং ১১৯)। সুনান দারেমীর মুহাক্কিক শায়েখ হুসাইন সালিম দারানী বলেন ইহার সনদ সহীহ।
২নং জবাবঃ عن عليّ قال: قلت يا رسول ، إن نزل بنا أمر ليس فيه بيان أمر ولا نهي ، فما تأمرني؟ قال: تشاورو الفقهاء والعابدين ، ولا تمضوا فيه رأي خاصّة. অর্থাৎ হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ), যদি আমাদের মধ্যে কোনো নতুন ঘটনা ঘটে, আর সে ব্যাপারে (কোরআন বা হাদীসে) আদেশ বা নিষেধ না থাকে, তখন আপনি আমাদেরকে কি করতে বলেন? তখন নবীজী বলিলেন, সে ব্যাপারে তোমরা ফকীহ এবং বুযুর্গণের সাথে পরামর্শ করিবে এবং (তাছাড়া) কোনো বিশেষ ব্যক্তির রায় গ্রহণ করিবে না। (তাবরানী: মুজামুল আওসাত, হাদীস নং ১৬১৮)।
এই হাদীসের সনদ সম্পর্কে ইমাম হাইসামী (রহঃ) বলেন- رواه الطّبرانيّ في الأوسط، ورجاله موثّقون من أهل الصحيح. অর্থাৎ ইহা ইমাম তাবরানী (রহঃ) আওসাতে বর্ণনা করছেন। আর এর রাবীগণ সহীহ হাদীসের নির্ভরযোগ্য রাবী। (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং ৮৩৪)।
৩নং জবাবঃ وقد روي عن النبيّ ﷺ أنّه قال: مارواه المٶمنون حسنا فهو عند اللّه حسن. অর্থাৎ নবীজী (সাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, (আবেদ) মুমিমগণ যেটাকে ভালো মনে করেন সেটা আল্লাহর নিকটও ভালো। (মুয়াত্তা মুহাম্মদ, হাদীস নং ২৪১)। উল্লেখ্য যে, মুয়াত্তা মুহাম্মদ' এর মধ্যে কোনো জয়ীফ হাদীস নেই।
মন্তব্যঃ হাদিস শরীফ লক্ষ করুণ।
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻰٍّ ﻗَﺎﻝَ ﺑَﻌَﺚَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺳَﺮِﻳَّﺔً ﻭَﺍﺳْﺘَﻌْﻤَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺭَﺟُﻼً ﻣِﻦَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻭَﺃَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﻳُﻄِﻴﻌُﻮﺍ ﻓَﺄَﻏْﻀَﺒُﻮﻩُ ﻓِﻰ ﺷَﻰْﺀٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺟْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟِﻰ ﺣَﻄَﺒًﺎ . ﻓَﺠَﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻭْﻗِﺪُﻭﺍ ﻧَﺎﺭًﺍ . ﻓَﺄَﻭْﻗَﺪُﻭﺍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻣُﺮْﻛُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺃَﻥْ ﺗَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟِﻰ ﻭَﺗُﻄِﻴﻌُﻮﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺑَﻠَﻰ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺎﺩْﺧُﻠُﻮﻫَﺎ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻨَﻈَﺮَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻓَﺮَﺭْﻧَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ﻓَﻜَﺎﻧُﻮﺍ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻭَﺳَﻜَﻦَ ﻏَﻀَﺒُﻪُ ﻭَﻃُﻔِﺌَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺟَﻌُﻮﺍ ﺫَﻛَﺮُﻭﺍ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻰِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻮْ ﺩَﺧَﻠُﻮﻫَﺎ ﻣَﺎ ﺧَﺮَﺟُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ
.“আলী (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) একটি সেনাদল যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ করলেন। এক আনসারী ব্যক্তিকে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। এবং সাহাবীদেরকে তার কথা শুনা ও মানার জন্য নির্দেশ দিলেন। অতপর তাদের কোন আচরণে সেনাপতি রাগ করলেন। তিনি সকলকে লাকড়ি জমা করতে বললেন। সকলে লাকড়ি জমা করলো এরপর আগুন জ্বালাতে বললেন। সকলে আগুন জ্বালালো। তারপর সেনাপতি বললো রাসূলুল্লাহ (সা:) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার এবং আমার কথা শুনা ও মানার নির্দেশ দেন নাই? সকলেই বললো, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সকলেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। সাহাবীগণ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন। এবং বললেন, আমরাতো আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে এসেছি। এ অবস্থায় কিছুক্ষন পর তার রাগ ঠান্ডা হলো এবং আগুনও নিভে গেল। যখন সাহাবারা মদীনায় প্রত্যাবর্তণ করলেন তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে উপস্থাপন করা হলো। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন ‘তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজেই।”
(সহীহ মুসলিম হা:নং: ৪৮৭২, সহীহ বুখারী হা: নং: ৪৩৪০, সহীহ মুসলিম বাংলা; ইসলামিক ফাউন্ডেশন কতৃক তরজমা; হা: নং: ৪৬১৫।)
১নং জবাবঃ এই হাদিস দ্বারা সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সত্যের মাপকাঠি নন সেটা কিভাবে প্রমাণিত হলো? বরং উক্ত হাদিস দ্বারা সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁরা যে সত্যের মাপকাঠি সেটাকে আরো মজবুত করে তুলছেন। কারণ, তাঁরা যে কারো অন্য অন্ধভক্ত ছিলেন না সেটা উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
২নং জবাবঃ সাহাবায়ে কেমার (রাঃ) তাঁদের পিছনে চার মাজহাবের ইমামগণ আছেন, তাই তাঁদের কোন কওলটি গ্রহণযোগ্য আর কোন কওলটি অগ্রহণযোগ্য সেটা তাঁরা সমাধান দিয়ে গেছেন। তাই আপনার নতুন করে মুজতাহিদ সেজে পণ্ডিতি করা লাগবো না।
মন্তব্যঃ সাহাবায়ে (রাঃ) তাঁদের দ্বারাও হারাম সংঘটিত হতে পারে, তাই তারা সত্যের মাপকাঠি নন।
জবাবঃ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁদের দ্বারাও হারাম কাজ সংঘটিত হতে পারে, তাই তাঁরা সত্যের মাপকাঠি নন এই কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, তাঁদের ভুলোকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাঁদের প্রতি আলাদা ভাবে সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাঁদেরকে অনুসরণ করতে বলেছেন। কিন্তু আমাদের তওবা কবুল করেছেন কিনা, আমাদের ভুল গুলো ক্ষমা করেছেন কিনা তাঁর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মন্তব্যঃ আমাদের কুরআন সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে, যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম কুরআন সুন্নাহ অনুসরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন।
জবাবঃ ভাই মূর্খতা প্রকাশ করিয়েন না। কোরআন ও সুন্নাহের মধ্যে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ও আছে। তাই সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) কে অনুসরণ কররিতে হবে।
মন্তব্যঃ সাহাবায়ে কেরাম অনুসরণ যোগ্য দল। তবে আল্লাহ ও তার রাসুল সাঃ এর মত শর্তহীন ভাবে নয়।
জবাবঃ কোরআন দ্বারা কি হাদিস শরীফ রদ করি না? যেমন= হাদিসে একাধিক বিবাহের কথা আছে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল চারটির বেশী হাদিস গুলোকে রদ করে দিয়েছেন আমাদের জন্য।
অতঃপর নবীজির হাদিসও শর্তহীন ভাবে অনুসরণ যোগ্য নয়। এই জন্য উসূলবিদগণ বলেন, নবীজির কওলী এবং এবং ফেলী হাদিসের মধ্যে দন্দ হলে কওলী হাদিস বহাল থাকবো আর ফেলী হাদিস রহিত হবে।
তাহলে নবীজির হাদিসও শর্তহীনভাবে অনুসরণ যোগ্য নয় । তারমানে কি নবীজি সত্যের মাপকাঠি নন?
২নং জবাবঃ আপনি স্বীকার করেছেন যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাঁরা অনুসরণ যোগ্য দল। তাহলে অনুসরণ যোগ্য দল আর সত্যের মাপকাঠির মধ্যে পার্থক্য কি?
মন্তব্যঃ কুরআন ও হাদীসের উৎস একই। তা হলো ওহী। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম কেউ ওহী প্রাপ্ত ছিলেন না। তাই তারা সত্যের অনুসারী ও সত্যপন্থী বটে তবে সত্যের মাপকাঠি না।
জবাবঃ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ওহীর অধিকারী নন, কিন্তু এলহামের অধিকারী। ইজতেহাদ করার অধিকারী। উম্মতের জন্য সঠিক পথ দেখানোর অধিকারী।
যা জামাত ইসলামরা বুঝবে না, কারণ, তাঁদের দল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একজন আল্লাহর ওলী তাঁদের দলের মধ্যে নাই। তাঁরা রেডিমেড ইসলাম বাস্তবায়ন করিতে চায়।
অতঃপর আপনার মনগড়া বায়ান অনেক শুনেছি, আর শুনতে চাই না। মারফু হাদিস দেন যে, সত্যের মাপকাঠি হওয়ার জন্য ওহী প্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক?
মন্তব্যঃ আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﻣَّﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﭐﻟﻠَّﻪَۖ ﻭَﻣَﻦ ﺗَﻮَﻟَّﻰٰ ﻓَﻤَﺎٓ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَٰﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺣَﻔِﻴﻈًﺎ
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।
(সূরা নিসাঃ৮০)
জবাবঃ আপনি তো আল্লাহর আনুগত্য করিতেছেন না এবং নবীজিরও আনুগত্য করিতেছেন না? কারণ, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি বানিয়েছেন। যা আপনি মানেন না।
মন্তব্যঃ তা'য়ালা বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর। (হাশর ৫৯/০৭)
জবাবঃ রাসুল (সাঃ) যা নিয়ে আসছেন সেটও তো আপনি গ্রহণ করেন না, যদি গ্রহণ করিতেন, তবে সাহাবায়ে কেরামদেরকেও মানতেন। কেননা, নবীজি তাঁদেরকে মানতে বলেছেন।
আপনার অবস্থা হয়েছে ইহুদীদের মত। কারণ, তারা আল্লাহকে মানার দাবী করে, কিন্তু নবীজিকে মানে না। ঠিক তেমনিভাবে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মান্য করার দাবী করেন, কিন্তু সাহাবায়ে কেরামদেরকে মানেন না।
আরও পড়ুন: আলেম-ইসলামপন্থীরা কেন রাজনীতিতে ব্যর্থ?
মন্তব্যঃ হাদীসে তো পিতা-মাতাকেও আনুগত্য করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাহলে কি তারাও সত্যের মাপকাঠি?
জবাবঃ মা-বাবাকে হাদিসে যেই হিসাবে মানতে বলেছেন সেই হিসাবে তাঁরা সত্যের মাপকাঠি।
মন্তব্যঃ তাহলে আপনার নিকট সত্যের মাপকাঠি অগণিত?
জবাবঃ শুধু আমার নিকট না, বরং আল্লাহর নিকটও সৎপথের অনেক গুলো রাস্তা আছে। যার দলিল উপরে দিয়েছি। কিন্তু আপনি পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণে মানছেন না।
মন্তব্যঃ ৬টি প্রশ্ন করলাম, পারলে জবাব দিন।
১. সত্যের মাপকাঠি এর সংজ্ঞা কি?
.২. সত্যের মাপকাঠি হওয়ার শর্ত কি কি?
.৩. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন, তাঁর কোন নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়া যাবে কি না?
.৪. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাঁকে বা তাঁর কোন মতামতকে অন্য কোন মহান ব্যাক্তির কথা বা কাজ দ্বারা পরিমাপ করা যাবে কি না?
.৫. যিনি সত্যের মাপকাঠি তাঁর অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে কি না? এবং তাঁর কোন অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে কি না?
.৬. কেউ যদি সত্যের মাপকাঠি'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যুদ্ধ করে, এমনকি হত্যা করে তাহলে কি ঐ ব্যাক্তি মুমিন মুসলিম বলে গণ্য হবেন?
জবাবঃ ১. মুজতাহিদ না হলে চার মাজহাবকে হক জেনে যেকোনো একটিকে মান্য করা হলো সত্যের মাপকাঠির সংজ্ঞা।
২. সত্যের মাপকাঠির জন্য নবীজি ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাদের পথ অনুসরণ করা শর্ত।
৩. সে যে মাজহাবের অনুসরণ করে, সেই মাজহাবের বিরুদ্ধে গেলে সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যেতে হবে। আর না হয় এড়িয়ে যেতে পারবে না।
৪. মুজতাহিদ হলে পরিমাপ করিতে পারবো, কিন্তু মুকাল্লিদের জন্য এটা জায়েজ হবে না। তবে সে যে মাজহাবের অনুসরণ করে, সে মাজহাবের উসূলের দৃষ্টিতে হলে পরিমাপ করিতে পারবো।
৫. চার মাজহাবের ইমামগণ প্রত্যেকেই হক বা সত্য। সুতরাং সে যে মাজহাবের অনুসরণ করবে, সে মাজহাবের ইমামের বিরুদ্ধে গেলে গোমড়া বলে সাব্যস্ত হবে। তবে সে মাজহাবের উসূলের দৃষ্টিতে বিরুদ্ধাচরণ করিতে পারবো।
৬. চার মাজহাবের যেকোনো একটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে গোমড়া বলে সাব্যস্ত হবে, আর কাউকে হত্যা করলে কবীরাহ গুনাহগার সাব্যস্ত হবে। তবে আমরা মাজহাবের বিরুদ্ধাচরণদেরকে কাফের বলি না বরং গোমড়া বলে থাকি। কিন্তু কারো কাফের হওয়ার আকিদা থাকলে আমরা কাফের বলি।
লিখেছেন- মুফতি নুরুজ্জামান নাহিদ হাফিঃ।