ধামতী দরবার শরীফ, কুমিল্লা।

 ধামতী দরবার শরীফ, কুমিল্লা।

ধামতী দরবার শরীফ, কুমিল্লা।

ধামতি দরবারের পরিচিতি ও অবস্থান: 


বাংলাদেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলে যেসব মহান ব্যক্তিত্ব মানুষের জ্ঞানার্জন ও আমলের উন্নতিকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে হিদায়াত ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন তন্মধ্যে অন্যতম হলেন কুমিল্লার ঐতিহাসিক ধামতী দরবার শরীফের পীর আল্লামা আজিম উদ্দীন আহমদ রহ.। যিনি হিন্দু অধ্যুষিত অজপাড়াগাঁয়ের সম্পূর্ণ বৈরি পরিবেশে ইসলামের মশাল জালিয়ে দিয়েছেন। 


{getToc} $title={Table of Contents}

যোগাযোগ ব্যবস্থা:

ঢাকা থেকে কুমিল্লা। সেখান থেকে বাস বা সিএনজি যোগে দেবিদ্বার। সেখান থেকে ধামতী দরবার শরীফ। 


ধামতি দরবারের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান পরিচালক:


ধামতী দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠা আল্লামা আজিম উদ্দীন আহমদ রহ ১২৯৮ বঙ্গাব্দে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলাধীন পদ্মকূট গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবে পিতা মাতা মারা যাওয়ায় চাচার আশ্রয়ে লালিত পালিত হন। কিছুদিন পর চাচাও ইন্তেকাল করলে দয়াময় মহান আল্লাহ তাআলার দয়া ও করুনায় নোয়াখালীর বিশিষ্ট আলেম মৌলভী আহমদ উল্লাহর স্নেহে লালিত পালিত হন। মাওলানা সাহেবের কাছে তিনি আরবি, উর্দু, ফারসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ঢাকার হাম্মাদিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে জামাতে উলা পাশ করেন। মাদরাসা শিক্ষা সমাপনের পর খুলনা খুরশীদ মুনশীর বাড়িতে মক্তবে শিক্ষাদান শুরু করলেন। পরবর্তীতে ছারছীনা মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। চার বছর শিক্ষকতা শেষে অসুস্থতার দরুন নিজ এলাকা ধামতীতে ফিরে এসে ১৯২০ সালে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে সেটি ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসায় উন্নীত হয়।

ইলমে তাসাউফ অর্জনের জন্য তিনি ফুরফুরার মোজাদ্দিদে জামান আবু বকর সিদ্দিকী আল কোরাইশী রহ এর নিকট বায়াত গ্রহণ করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই চার তরিকায় পূর্ণ কামালিয়াত অর্জন করে খিলাফত প্রাপ্ত হন। 


২৩ শে শাবান ১৩৯৪ হিজরী, ২৫ শে ভাদ্র ১৩৮১ বাংলা, ১৯৭৪ সালের তিনি রফিকে আলার ডাকে সাড়া দেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে স্বীয় পিতা ও মুরশিদ মাওলানা আজিম উদ্দিন আহমদ (রহ.)-এর ইন্তিকালের পর আমৃত্যু হজরত মাওলানা আবদুল হালিম (রহ.) ধামতী দরবারের পীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি দেশ সেরা দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার উস্তাদ হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং ১৯৭৫ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।২০০৪ সালে তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে আবদুল হালিম রহ. এর নাতি শাহ মুহাম্মদ বাহাউদ্দীন হাফিজাহুল্লাহ দরবারের দায়িত্ব পালন করছেন। 


উল্লেখযোগ্য উলামায়ে কেরাম:

বিভিন্ন সময়ে যারা দরবার ও মাদরাসার খেদমত করেছেন তন্মধ্যে কয়েকজন হলো- 

মাওলানা মুহাম্মদ মোখলেসুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান,  মাওলানা আবদুল হালিম, আল্লামা ছফিউল্লাহ মূছাপুরী, মাওলানা ইসমাইল টুমচুরী, মাওলানা এ কে এম হাশেম।


ধামতি দরবারের আকিদা:


ধামতী দরবার শরীফ সূচনালগ্ন থেকেই পরিপূর্ণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী। মাযহাবে হানাফীর ধারক বাহক। তরিকায়ে কাদেরীয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদীয়া, মুহাম্মদীয়ার প্রচার প্রসার, তালিম তাওয়াজ্জুহ, সবকাদি মশক করিয়ে থাকেন। 


ধামতি দরবারের খেদমতসমূহ:


আল্লামা আজিম উদ্দীন আহমদ রহ এর ইসলামের খেদমতে অনেক অবদান রয়েছে। পরবর্তীতে আবদুল হালিম রহ ও অনেক দ্বীনি ও সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। ধামতী দরবারের মাধ্যমে অনেক মসজিদ, মাদরাসা, খানকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেমন- ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, বায়তুল আজিম মসজিদ, খানকা-ই সিদ্দিকীয়া, ধামতী পোস্ট অফিস, ধামতী স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, হিফজ মাদরাসা, ধামতী কৃষি ব্যাংক ইত্যাদি। 


দরবারের মাহফিল:


আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও তালিম তাওয়াজ্জুর জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের ১ ও ২ তারিখে বার্ষিক ঈসালে সওয়াব মাহফিল এবং প্রত্যেক চাঁদের ১২ তারিখে তাওয়াজ্জুহ ও তালিমের মাহফিল।


 দরবার শরীফ কর্তৃক অজিফা :


★সকাল সন্ধা ও ফরজ নামাজবাদ মাসনূন দুআ ও জিকিরের আমল।

★ সকাল সন্ধায় সওয়াব রেসানী। অর্থাৎ,  প্রথমে ৭ বার ইস্তেগফার, বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা ৩ বার, সূরায়ে ইখলাস ১০ বার, দরুদ শরীফ ১১ বার, সওয়াব রেসানীর মোনাজাত; ফজর, মাগরিব ও এশাবাদ তরিকানুযায়ী দরুদ ও জিকির।

★ দুই / চার রাকাত ইশরাকের নামাজ।

সুনানু তিরমিযি-৫৮৬, সুনানু তিরমিযি-৪৭৫), সলাতুত দুহা বা চাশতের নামাজ।

সহীহ মুসলিম-৭১৯), বাদ মাগরিব দুই দুই রাকাত করে ছয় রাকাত আউয়াবিন নামাজ।

ইবনে মাজাহ, ১১৬৭, শেষ রাতে চার/আট/বারো রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ, সন্ধায় সূরা ওয়াকিয়া, বাদ এশা সূরা মুলক তিলাওয়াত করা।


দরবারের প্রকাশিত গ্রন্থাবলি:

দরবার শরীফ কর্তৃক কিছু কিতাব রচিত হয়েছে। যেমন- মারেফাতের মূলতত্ত্ব, সীরাতে আজীম।


আরও পড়ুন: মাগুরা দরবার শরীফের পরিচিতি

আরও পড়ুন: সিলসিলায়ে ফুরফুরা শরীফ এর পরিচিতি ।

আরও পড়ুন: লাল গরু এসে গেছে? আল আক্বসা ভেঙে থার্ড টেম্পল তৈরি করা হবে কি?


তথ্যসূত্র:

০১. আল্লামা আজিম উদ্দীন আহমদ রহ, মারেফাতের মূলতত্ত্ব, তৃতীয় সংস্করণ ২০১৮।

০২. মাওলানা এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্সী, সীরাতে আজীম, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০১৮।




Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন