কুরবানি কাকে বলে? কুরবানির ইতিহাস, ফজিলত,দোয়া,সময়,ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি?
কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এটি ইসলামের মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। সামর্থ্যবান প্রত্যেক নরনারীর উপর কুরবানি করা ওয়াজিব।
{getToc} $title={Table of Contents}
কুরবানি কাকে বলে?
আরবিতে শব্দটির উচ্ছারণ "কুরবান"। শব্দটি নৈকট্য লাভ,ত্যাগ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে।
পরিভাষায় কুরবানি বলা হয় আল্লাহ তায়া’লা নৈকট্য অর্জনের নিমিত্তে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে কুরবানী বলে।
কুরবানির ইতিহাস -
পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কুরবানি করেন আদি পিতা হযরত আদম আ: এর দুই পুত্র হাবিল এবং কাবিল। আল্লাহ তায়া’লা বলেন,
وَاتۡلُ عَلَیہِمۡ نَباَ ابۡنَیۡ اٰدمَ بِالۡحقِّ ۘ اِذۡ قَرّبَا قُرۡبانًا فَتقُبّلَ مِنۡ اَحدِہِمَا وَلَمۡ یُتقَبَّلۡ مِنَ الاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقتُلَنَّکَ ؕ قَالَ اِنَّمَا یَتقبَّلُ اللّٰہُ منَ الۡمُتّقِیۡنَ
(হে নবী!) আপনি তাদের কাছে হযরত আদমের (আঃ) দু’ পুত্রের ঘটনা যথাযথভাবে পড়ে শুনান, যখন তারা কুরবানী করেছিল এবং তাদের একজনের কুরবানী কবুল হয়েছিল, অন্যজনের কবুল হয়নি।একজন অপরজনকে বলল, আমি তোমাকে হত্যা করে ফেলবো। প্রথমজন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকীদের পক্ষ হতেই (কুরবানি) কবুল করেন।
হযরত আদম আঃ এর দু'পুত্রের কুরবানীর ঘটনাটি বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী সনদে বর্ণিত রয়েছে। আল্লামা ইবনু কাসীর আদ-দিমাশকি রঃ এটিকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সর্বস্তরের আলিমদের সর্বসম্মত উক্তি বলে মতামত দিয়েছেন।
হাবিল-কাবিলের কুরবানির ঘটনাটি হলো-
যখন হযরত আদম ও হাওয়া (আ) পৃথিবীতে আসেন এবং আল্লাহ তায়া’লার নির্দেশে বংশ বিস্তার শুরু হয়, তখন প্রতি গর্ভ থেকে একই সাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান যমজ জন্মগ্রহণ করত। তখন ভাই-বোন ছাড়া হযরত আদমের আঃ আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ সহোদর ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ্ তা’আলা উপস্থিত প্রয়োজনের স্বার্থে হযরত আদম (আ)-এর শরীয়তে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ ছেলে ও মেয়ে জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন বলে বিবেচিত হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী ছেলের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারিণী মেয়ে সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ হবে।
কিন্তু ঘটনাক্রমে কাবিলের সহোদরা বোনটি ছিল আনত নয়না সুন্দরী এবং হাবিলের সহজাত মেয়েটি ছিল কুশ্রী ও অসুন্দর। বিয়ের সময় হলে আল্লাহ তায়া’লার নির্দেশানুযায়ী হাবিলের সহজাত কুশ্রী মেয়েটি কাবিলের ভাগে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রুতে পরিণত হলো। সে জেদ ধরল যে, আমার সহজাত বোনটিকেই আমার সাথেই বিয়ে দিতে হবে। হযরত আদম (আ) তাঁর শরীয়তের আইন অনুযায়ী কাবিলের দাবী প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেনঃ তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্য নিজ নিজ কুরবানী পেশ কর। যার কুরবানী কবুল হবে, তার সাথে সুন্দরী মেয়ের বিয়ে হবে। হযরত আদম আঃ এর নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, যে সত্য পথে আছে, আল্লাহ তার কুরবানীই কবুল করবেন।
হযরত আদম আঃ এর শরীয়তে কুরবানী কবুল হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল এই যে, আসমান থেকে একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এসে কুরবানির জন্য রাখা বস্তুকে ভস্মীভূত করে আবার অন্তর্হিত হয়ে যেত। যে কুরবানী অগ্নি ভস্মীভূত করত না, তাকে প্রত্যাখ্যাত হিসেবে মনে করা হতো।
হাবিলের পেশা ছিলো পশুপালন করা। সে তার খামারের উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানী করার স্থানে রেখে আসলো। কাবিল কৃষিপেশায় নিয়োজিত ছিলো করত। সে কিছু শস্য কুরবানীর স্থানে রেখে আসলো। অতঃপর নিয়মানুযায়ী আসমান থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কুরবানীর পশুকে ভস্মীভূত করে দিল এবং কাবিলের কুরবানী যে অবস্থায় রাখা ছিল, সে অবস্থায় পড়ে রইল। কুরবানি কবুল না হওয়ায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ বেড়ে গেল। সে নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। যার প্রেক্ষিতে সে প্রকাশ্যে ভাইকে বলে দিলঃ لَأَقْتُلَنَّكَ অর্থাৎ অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করে ফেলবো।
হাবিল তখন স্বীয় ভাইয়ের ক্রোধের জওয়াবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে বরং একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল । এতে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও অভিনন্দন বার্তাও ফুটে উঠেছিল। সে বললঃ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ম এই যে, তিনি আল্লাহ্তর্ভীরু লোকের কর্মই গ্রহণ করেন। তুমি আল্লাহ্তৰ্ভীতি অবলম্বন করলে তোমার কুরবানিও আল্লাহ তায়া’লা কবুল করতেন। তুমি তা করনি বিধায় কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কি?
বিঃদ্রঃ তাফসীরে পাওয়া যায়- যে সুন্দর মেয়েটি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে শয়তান হিংসা ছড়িয়ে দিয়েছিলো তার নাম হলো আকলিমা। আর হাবিল এবং কাবিলের কোরবানি করার স্থান ছিলো বর্তমান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি।
ইব্রাহীম আঃ কর্তৃক ইসমাইল আঃ কে কুরবানী-
ইবরাহীম আ.-কর্তৃক হযরত ইসমাইল আঃ এর কুরবানী ৷ ইতোপূর্বে আমরা জেনেছি পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম কুরবানি করেছিলেন হযরত আদম আ.-এর দু'পুত্র হাবিল এবং কাবিল। কিন্তু ঈদুল আযহার দিনে আমাদের কুরবানীর সম্পর্ক হযরত ইবরাহীম আঃ কর্তৃক হযরত ইসমাঈল আঃ কে কুরবানীর অবিস্মরণীয় ঘটনার সাথে। হযরত ইব্রাহিম আঃ এর কুরবানির স্মারক হিসেবেই উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য কুরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে। পিতা-পুত্রের সে ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। কুরবানীর তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য বুঝার জন্য এই ঘটনাপ্রবাহ একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু।
হযরত ইবরাহীম আঃ নিঃসন্তান অবস্থায় প্রায় পুরোটা জীবন কাটিয়ে দেন । অতপর ৮৬ বছর বয়সে এসে দুআ করলেন-কুরআনের ভাষায়:-رَبّ ہَب لِی مِن الصّلِحِیۡنَ“ হে আমার রব! আমাকে নেককার সন্তান দান করুন।”
আল্লাহ তা'আলা তার দুআ কবুল করে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দান করেন । কুরআনে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-فَبشّرنہُ بِغلٰمٍ حلِیمٍ‘অতঃপর আমি তাকে ধৈর্য সহিষ্ণু পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। ধৈর্য সহিষ্ণু বলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এ নবজাতক তার জীবনে ধৈর্য ও সহনশীলতার এমন উদাহরণ পেশ করবে যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
বৃদ্ধাবস্থায় ইবরাহীম আঃ-এর পুত্রলাভ
এদিকে হযরত ইবরাহীম আঃ এর স্ত্রী হযরত সারা দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় সন্তান হয় না বিধায় নিজেকে বন্ধ্যা মনে করলেন। তৎকালীন মিশরের সম্রাট ফিরআউন তার কন্যা অন্যমতে তার দাসী হাজেরাকে হযরত সারার সাথী হিসেবে পাঠিয়ে দিলেন।হযরত সারা হাজেরাকে ইবরাহীম আঃ এর খিদমাতের জন্য দিয়ে দিলেন। একটা পর্যায়ে হযরত ইব্রাহিম আঃ তাঁকে বিবাহের সূত্রে আবদ্ধ করে নিলেন। এ হাজেরার গর্ভেই আল্লাহ তায়া’লার সুসংবাদকৃত পুত্র জন্মগ্রহণ করলেন। হযরত ইবরাহীম আঃ তার নাম রাখলেন ইসমা’ঈল। অবশ্য হযরত সারার গর্ভে পরবর্তীতে হযরত ইবরাহীম আঃ এর দ্বিতীয় পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেন যার নাম রাখেন ইসহাক। দ্বিতীয় পুত্র জন্মের সময় হযরত ইবরাহীম আঃ এর বয়স হয়েছিল একশ’ বিশ বছর এবং স্বীয় স্ত্রী সারার বয়স হয়ে ছিল নিরানব্বই বছর।
হযরত ইসমাইল আঃ এর কুরবানীর ঘটনা -
পালনে দীর্ঘ কষ্ট সহ্য করে যখন সন্তান পিতার পাশে দাঁড়াবার বয়সে পৌঁছল তখন আল্লাহ তায়া’লার পক্ষ থেকে নির্দেশ হলো, পুত্রকে কুরবানী করো। এ ঘটনাকে ইঙ্গিত করে কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে-
فَلمَّا بَلَغ مَعَہ السّعۡی قَالَ یٰبنَیّ اِنِّیۡۤ اَری فِی الۡمَنام اَنِّیۡ اَذبَحُکَ فَانظُر مَاذا تَری ؕ قال یٰۤاَبَت افعل مَا تؤۡمَر ۫ ستجِدنِیۡ اِن شَآء اللّٰہُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۰۲﴾
“অতঃপর যখন সন্তান বাবার সাথে চলা-ফেরার মত বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহীম আঃ বললেন, হে আমার ছেলে! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করছি। তুমি ভেবে দেখো, কী করবে? সে বললো, হে বাবা! আপনাকে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা আপনি বাস্তবায়ন করুন। ইনশাআল্লাহ! আপনি আমাকে সবরকারীদের মধ্যে পাবেন।
[সূরা সাফ্ফাত : আয়াত-১০২]
পরবর্তী আয়াতে এরশাদ হয়েছে فَلمَّاۤ اسۡلَما وَ تَلّہٗ لِلجبِینِ“অতঃপর যখন উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইবরাহীম আঃ স্বীয় সন্তানকে (ইসমাঈল) যবেহ করাতে শোয়ালেন।
[সূরা সফফত: আয়াত ১০৩]
শোয়ানোর পরবর্তী ঘটনা আয়াতে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
তাফসীরের কিতাবেগুলোতে উল্লেখ রয়েছে যে, অবশেষে তারা উভয়ে যখন কোরবানিস্থানে পৌঁছলেন, তখন হযরত ইসমা’ঈল আঃ বাবাকে বললেন, বাবা! আমাকে খুব শক্ত করে বেঁধে নিন যাতে যবেহের সময় বেশি ছটফট করতে না পারি। আপনার পরিধেয় বস্ত্রও গুটিয়ে নিন যাতে রক্তের ছিঁটা তাতে না লাগে। আপনার কাপড়ে রক্ত দেখলে আমার মা ব্যাকুল হয়ে পাড়বেন। আর আপনার ছুরিটা ধার দিয়ে আমাকে দ্রুত যবেহ করুন। যাতে আমার সহজে আমার মৃত্যু হয়ে যায়। কারণ মৃত্যু অনেক কঠিন বিষয়! আপনি মায়ের কাছে গিয়ে আমার সালাম বলবেন। আপনার কাছে অনুরোধ! আমার রক্তমাখা জামা তার কাছে নিয়ে নিয়ে যাবেন। এতে হয়ত তিনি সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন। এরপর হযরত ইবরাহীম আঃ ছেলের কপালে চুমু খেলেন এবং অশ্রুপূর্ণ চোখে নিজ হাতে বেঁধে নিলেন। এবং এমনভাবে কাঁৎ করে শায়িত করলেন যাতে কপালের একপাশ মাটি স্পর্শ করে। এরপর তিনি স্বজোরে গলায় ছুরি চালানো শুরু করলেন। পরপর কয়েক বার চেষ্টা করে সর্বশেষ চেষ্টা করতে যাবেন এমন সময় আসমান থেকে জিবরাঈল আলাইহিসসালাম বলে উঠলেন- الله اكبر الله اكبر জনমানব শুন্য স্থানে আল্লাহ তায়া’লার বড়ত্বের ঘোষনা শুনে হযরত ইব্রাহিম আঃ চোখের কাপড় সরিয়ে বললেন- لاإله إلاالله والله اكبر। এবার জিবরাইল ইব্রাহিম এবং ইসমাইল আঃ সমস্বরে বলে উঠলেন الله اكبر ولله الحمد।
ইব্রাহিম আঃ পরীক্ষা পূর্ণ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَ نَادَیۡنٰہُ اَنۡ یّٰۤاِبۡرٰہِیۡمُ ﴿۱۰۴﴾ۙقَدۡ صَدَّقۡتَ الرُّءۡیَا ۚ اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۰۵﴾‘আমি তাঁকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছো। আমি এভাবেই নোককারদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
হযরত জিবরাঈল আঃ একটি জান্নাতি দুম্বা নিয়ে উপস্থিত হলেন । এবং আল্লাহ তায়া’লার নির্দেশে হযরত ইবরাহীম আ: তা'ই কুরবানি করলেন। উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য খলিলুল্লাহ ইব্রাহীম আঃ এর কুরবানি থেকে আমাদের এ কুরবানী।
কুরবানির ফযিলত -
কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। মহান আল্লাহ তায়া’লা এরশাদ করেছেন- ْفَصَلِّ لربكَ وانحَر তথা অতএব আপনি রবের সন্তুষ্টির জন্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন।
[সূরা কাউছার]
আল্লাহ তায়া’লা
অন্যত্রে এরশাদ করেছেন-قلْ انَّ صَلاتِى ونسُكِى ومَحْياى ومَمَاتى للهِ ربِّ العَالمِيْن তথা (হে নবী) বলুন আমার নামাজ,আমার কুরবানী আমাার জীবন,আমার মৃত্যু একমাত্র আল্লাহ তায়া’লা জন্য উৎসর্গিত।
[সূরা আনআম-১৬২ নং আয়াত]
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেন- لنْ ينَالَ اللهَ لُحُومُهَا وَلا دِمَائُهَا ولكِنْ يَنَالُه التَّقْوى مِنْكُم তথা তোমাদের যবেহকৃত পশুর গোস্তো এবং রক্ত আল্লাহ তায়া’লার কাছে পৌঁছে না বরং পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া তথা খোদাভীতি।
[সূরা হজ্ব-৩৭নং আয়াত]
অন্য আয়াতে এরশাদ হচ্ছে -
وَ لِکُل اُمَّۃ جَعَلۡنَا مَنسَکًا لِّیذۡکُرُوا اسمَ اللّٰه عَلٰی مَا رَزقَهمۡ من بَهِیمَۃِ الۡاَنعَامِ ؕ فَاِلـهُکُمۡ اِلٰه وَّاحدٌ فَلهٗۤ اَسلِمُوۡا ؕ وَ بشِّرِ الۡمخۡبِتِینَ- ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহ তায়া’লার নাম স্মরণ করতে পারে, যেসব পশু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও।
[সুরা হজ : আয়াত ৩৪-৩৫]
وَ الۡبُدنَ جَعَلۡنهَا لَکمۡ مِّنۡ شعَآئِرِ اللّهِ لکُمۡ فِیهَا خیۡرٌ ٭ۖ فَاذکُروا اسۡم اللّهِ عَلیۡهَا صوَآفَّ ۚ فاِذَا وَجَبتۡ جُنُوبُهَا فَکُلوۡا مِنهَا وَ اطۡعِمُوا الۡقَانعَ وَ الۡمُعۡترَّ ؕ کَذٰلِک سَخّرۡنٰهَا لَکمۡ لَعَلّکُمۡ تَشکُرُوۡنَ ‘আর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহ তায়া’লার অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দাড়ানো অবস্থায় সেগুলোর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতপর যখন সেগুলো কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়- তাদের উভয়কে খেতে দাও। এভাবেই আমি সেগুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর।’
[সুরা হজ : আয়াত ৩৬]
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
عَنْ عائشةَ رضي الله تعالى عَنها أنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم قالَ : ما عمل آدمي مِن عملٍ يوم النحر أحب إلى اللهِ من إهراق الدمِ، إنه ليأتي يوْمَ القيامةِ بقرونها وأشعارها وأظلافها، وإن الدم ليقع من الله بمكان قبلَ أن يقعَ من الأرضِ، فطيبوا بها نفسًا.
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কুরবানী আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় আমল। কিয়ামতের দিন কুরবানীর পশুর শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে।আর কুরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা খুশি মনে কুরবানী কর।
[জামে তিরমিযী]
অন্য হাদীস শরীফে এসেছে -
ْعنْ أبي هريرةَ قالَ : قَال رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : مَن وجَد سعةً لأن يضحي فلمْ يضحِّ فلا يقربنَّ مُصَلَّانَا.
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য আছে কিন্তুকুরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।
[মুসনাদে আহমদ]
অপর হাদীসে এসেছে-
قالوا فَما لَنَا فيهَا يَا رَسولَ اللَّه قَالَ بِكلّ شعرَة حسَنةٌ
. قَالُوا فَالصّوف يَا رَسول اللَّه قَال بِكلِّ شَعَرَةٍ
مِنَ الصّوفِ حَسَنةٌ
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ ﷺ! এতে কি আমাদের জন্য সাওয়াব আছে? তিনি ﷺ বললেন, কুরবানীর পশুর
প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে সওয়াব রয়েছে। সাহাবীগণ আবার জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! পশমওয়ালা পশুদের ব্যাপারে কী হবে? (এদের পশম তো
অনেক বেশী হয় থাকে) তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুদের প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে
সওয়াব রয়েছে।
[ইবনে মাজাহ ৩১২৭]
কুরবানি কার উপর ওয়াজিব?
উত্তর: কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। রাসুলুল্লাহ ﷺ হিজরতের পর প্রতি বছর কুরবানি করেছেন। তিনি কখনও কুরবানি ত্যাগ করেননি।
ইসলামি ফিকহের ভাষ্যনুযায়ী প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকিম ব্যক্তি, যে ১০ ই জিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ ই জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব হবে।
কুরবানির নেসাব হলো:
স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত তোলা/ ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা/ ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা/ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ।
স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি এককভাবে নিসাব পরিমাণ না হয়, তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সঙ্গে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা/ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে-ও কুরবানি ওয়াজিব হবে।
স্বর্ণ-রুপার গহনা, নগদ অর্থ, যে জমি বার্ষিক খোরাকির জন্য প্রয়োজন হয় না (তথা জমিত উৎপন্ন ফসল বার্ষিক খোরাকির অতিরিক্ত হয়ে থাকে) এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র— এসবই কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
কুরবানির দোয়া:
নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে পশু যবেহ করার পর এ দোয়া পড়া-اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكَ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল-লাহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন-হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া-খালিলিকা ইবরাহিম।'
অন্য কেউ কুরবানী করলে অথবা অন্য কারো কুরবানী করে দিলে এ দোয়া পড়া-اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّخَلِيْلِكَ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল-লাহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া-খালিলিকা ইবরাহিম।'
কুরবানির সময়:
জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে ১৩ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে কুরবানি করা যাবে। তবে উত্তম হচ্ছে ১০ তারিখে করা।
আরও পড়ুন: ট্রান্সজেন্ডার কী? ট্রান্সজেন্ডার কারা?
আরও পড়ুন: জিলহজ্জ মাসের ১ম ১০দিনের ফযিলত
উপসংহার:
পরিশেষে আমরা বলতে পারি কুরবানী আমাদেরকে ত্যাগ স্বীকার করার জন্য উজ্জীবিত করে। পশু জবাই করার সাথে সাথে নিজের ভিতরের পশুত্বকে জবাই করার মধ্যেই রয়েছে কুরবানি উপলব্ধি এবং রবের সন্তুষ্টি।