গাজওয়ায়ে হিন্দ বা হিন্দুস্থানের যুদ্ধ।

 গাজওয়ায়ে হিন্দ বা হিন্দুস্থানের যুদ্ধ। 

গাজওয়ায়ে হিন্দ বা হিন্দুস্থানের যুদ্ধ।

{getToc} $title={Table of Contents}

গাজওয়ায়ে হিন্দ কি?

সিন্ধু নদীর আশেপাশের অঞ্চলকে হিন্দুস্থান বলে। পরবর্তীতে ভারত উপমহাদেশ হিন্দুস্থান নামে পরিচিতি লাভ করে। বিভিন্ন সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণিত রয়েছে যে, হিন্দুস্থানে হক-বাতিলের একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে। যে যুদ্ধের এক পক্ষ হবে কাফির মুশরিক মুনাফিক এবং অপর পক্ষ হবে তাওহীদবাদী জনতা। হাদীসের ভাষায় এটিই হিন্দু স্থানের যুদ্ধ বা গাজওয়ায়ে হিন্দ নামে অভিহিত করা হয়েছে। 

গাজওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কিত হাদীস:- 

গাজওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কে দুইজন সাহাবী এবং দুইজন তাবেয়ী থেকে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। যথাক্রমে তারা হলেন- আবু হুরাইরা রাঃ, সাওবান রাঃ, আরতাত ইবনুল মুনযির রঃ, কা'ব আল-আহবার রঃ।

আবু হুরাইরা রাঃ থেকে তিনটি সনদে সিমিলার শব্দ চয়নে একটি মতন এবং অপর আরেকটি সনদে স্বতন্ত্র একটি মতন মোট চারটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সিমিলার শব্দ চয়নে বর্ণিত প্রথম তিনটি সনদের একটি সহিহ বাকি দুইটি যয়ীফ কিন্তু অর্থগত মিল থাকায় তিনটি সনদ'ই সহিহর কাতারে উন্নীত হয়েছে।

সাওবান রাঃ থেকে একটি হাদীস বর্ণিত রয়েছে। তা'য়াদ্দুদু তুরুকের (একাধিক সনদের) কারণে সেটি হাসান লি-গাইরিহী পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। 

দুই তাবেঈ থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত দুই সাহাবীর বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যা স্বরুপ। নিম্নে আমরা সংক্ষিপ্তাকারে হাদীসগুলো আলোচনা করছি।

★ আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত প্রথম হাদীসটি হিজরী তৃতীয় শতকের মুহাদ্দিস সাঈদ ইবনু মানসুর (২২৭ হিজরী) র: তার সুনান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-

আবু হুরাইরা রাঃ বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে হিন্দুস্থানের জিহাদের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি আমি সে জিহাদ পেয়ে যাই তাহলে আমার জান-মাল সেখানে ব্যায় করবো। এতে যদি শহীদ হই তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদ হবো। আর যদি ফিরে আসি তাহলে হবো (জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত। 
(সনদ সহিহ)

★ ২য় হাদীসটি মুসনাদে আহমদে উল্লেখ রয়েছে -

আবু হুরাইরা রাঃ বলেন, আমার সত্য বন্ধু রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন এই উম্মতের একটি দল জিহাদের জন্য সিন্ধু বা হিন্দুস্থানে প্রেরিত হবে। (আবু হুরায়রা বলেন) আমি যদি সে যুদ্ধ পাই এবং তাতে শহীদ হই তাহলে ভালো কথা। আর যদি ফিরে আসি তাহলে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা হবো।

(সনদ যয়ীফ। তবে প্রথম হাদীসের সাথে অর্থগত মিল থাকায় সহিহ হিসাবে উন্নীত হয়েছে)


★ ৩য় হাদীসটি তৃতীয় শতকের মুহাদ্দিস ইবনু আবি আসেম রঃ (২৮৭ হি:) তার কিতাবুল জিহাদে উল্লেখ করেছেন-

আবু হুরাইরা রাঃ বলেন, আমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ হিন্দুস্থানের জিহাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি যদি সে যুদ্ধ পেয়ে যাই তাহলে আমার জানমাল সেখানে ব্যায় করবো। যদি শহীদ হই তাহলে সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ হবো। আর যদি ফিরে আসি তাহলে হবো (জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত।

(হাদীসটি স্বতন্ত্রভাবে যয়ীফ। তবে ১ম হাদীসটির সাথে অর্থগত মিল থাকায় সহিহ হিসাবে উন্নীত)।

★ ৪র্থ হাদীসটি নুয়াঈম ইবনু হাম্মাদ রঃ এর কিতাবুল ফিতানে উল্লেখ রয়েছে। ১ম তিনটি হাদীসের মতন প্রায় একই। আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত চতুর্থ হাদীসটিতে ১ম তিনটি হাদীসের বিষয়বস্তুসহ অতিরিক্ত আরো বিষয় রয়েছে। 

আবু হুরাইরা রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ হিন্দুস্থানের যুদ্ধের আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, 'অবশ্যই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্থানে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাদের বিজয় দান করবেন। তারা হিন্দুস্থানের রাজাদের শিকল দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তায়া’লা সেই মুজাহিদদের সবাইকে ক্ষমা করে দিবেন। অতপর মুজাহিদরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ঈসা আঃ কে শামে পেয়ে যাবে।

আবু হুরাইরা রাঃ বলেন, আমি যদি সেসময় বেঁচে থাকি আমার সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে সেই জিহাদে অংশগ্রহণ করবো। এবং যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা হবো যে শামে ঈসা আঃ এর সাথে মিলিত হবে। আবু হুরাইরা রাঃ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ﷺ।  আমার মনে চায় আমি গাজওয়ায়ে হিন্দে অংশগ্রহন করি এবং ফিরার সময় ঈসা আঃ এর কাছে গিয়ে বলি আমি আপনার সংশ্রব প্রাপ্ত একজন সাহাবী৷ একথা শুনে রাসুলুল্লাহ ﷺ মুচকি হাসলেন এবং বললেন, সে, (যুদ্ধ) অনেক দেরি! অনেক দেরি!।

★ সাওবান রাঃ থেকে বর্ণিত হাদীসটি মুসনাদে আহমদে উল্লেখ রয়েছে। 
রাসূলুল্লাহ ﷺ  বলেছেন, আল্লাহ তায়া’লা আমার উম্মতের দু'টি দলকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। একটি দল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদে শরীক হবে। অপরদল যারা ঈসা ইবনু মারইয়ামের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করবে।

(স্বতন্ত্র ভাবে হাদীসটি হাসান পর্যায়ের কিন্তু একাধিক সনদের কারণে হাসান লি-গাইরিহী পর্যায়ে)।

গাজওয়ায়ে হিন্দ কি হয়ে গেছে? না-কি শেষ যামানায় হবে?

আল্লামা ইবনু কাসীর রঃ তার আন-নিহায়াহ ফিল ফিতান গ্রন্থে তার যুগ পর্যন্ত হিন্দুস্থানে অভিমুখে প্রতিটি যুদ্ধকেই গাজওয়ায়ে হিন্দ নামে অভিহিত করেছেন। একদল লোক ৪৪ হিজরীতে ইমাম মুয়াবিয়া রাঃ এর যুগে হিন্দের অভিযানকে গাজওয়ায়ে হিন্দ নামে অভিহিত করে এবং এক্ষেত্রে তারা ইবনু কাসীর রঃ এর কিতাবের কিঞ্চিৎ অংশ দিয়ে দলীল পেশ করে।

প্রকৃতপক্ষে ইবনু কাসীর রঃ নির্দিষ্ট কোন অভিযানকে গাজওয়ায়ে হিন্দ বলেন নি বরং মুহাম্মদ বিন কাসিমের অভিযান, সুলতান ফতেহ মাহমুদ গজনবী রঃ এর ভারত উপমহাদেশে অভিযানকেও গাজওয়ায়ে হিন্দ নামে অভিহিত করেছেন। কাজেই যারা ইবনু কাসীর রঃ এর দিকে নিসবত করে বলেন ৪৪ হিজরীতে গাজওয়ায়ে হিন্দ হয়ে গেছে তারা সুস্পষ্ট ভুলের উপর রয়েছেন। অতএব হিন্দুস্থানে হক্ব বাতিলের যুদ্ধ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। 

সম্মানিত পাঠক- 

উপরে উল্লেখিত ৪র্থ এবং ৫ম হাদীস দ্বয় খেয়াল করুন। সেখানে স্পষ্ট রয়েছে গাজওয়ায়ে হিন্দ পরবর্তী  অংশগ্রহণকারী সৈন্যরা হযরত ঈসা আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। আর আমরা সবাই জানি ঈসা আঃ শেষ যামানায় দুনিয়ায় আগমন করবেন। এতে প্রমাণিত হয় গাজওয়ায়ে হিন্দ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। এবং এটা আখেরী যমানায় হবে।

গাজওয়ায়ে হিন্দ কোথায় হবে? 

হাদীস শরীফে স্পষ্ট ভাবে হিন্দুস্থানের কথা উল্লেখ রয়েছে। কাজেই আমরা ইয়াকিনের সাথে বলতে পারি ভারত উপমহাদেশেই গাজওয়ায়ে হিন্দ সংঘটিত হবে। এবং মুসলিম আর মুশরিকরা মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হবে।

কাসীদায়ে শাহ নিয়ামতুল্লাহ।

বিখ্যাত ওলী হযরত শাহ নিয়ামতুল্লাহ রঃ। তিনি আজ থেকে প্রায় ৮৮৬ বছর পূর্বে হিজরী ৫৪৮ সন মোতাবেক ১১৫২ খ্রিস্টাব্দে একটি ক্বাসিদা (কবিতা) রচনা করেন। যুগে যুুগে ওনার এই ক্বাসিদার এক একটি ভবিষ্যৎবাণী  আশ্চর্যজনকভাবে ফলে গেছে। ইংরেজ শাসনের ক্রান্তিকালে এ ক্বাসিদা শরীফ মুসলমানদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর অসাধারণ প্রভাব লক্ষ্য করে ব্রিটিশ লাট লর্ড কার্জনের শাসনামলে (১৮৯৯-১৯০৫) সালে এই ক্বাসিদা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

 আপনাদেরকে গাজওয়ায়ে হিন্দের সাথে সম্পৃক্ত এই ক্বাছীদার ৩৩ থেকে ৪৮ তম প্যারা লক্ষ্য করার অনুরোধ করছি। 

৩৩। হে যুবকরা! হাতজোর করে অনুরোধ করি খ্রিস্টানদের চাল-চলন গ্রহন করো না।

৩৪। পশ্চিমা বেহায়াপনা এবং অশ্লীলতা তোমাদের ধ্বংস ডেকে আনবে এবং আল্লাহ তায়া’লার গজবে নিক্ষেপ করবে।

৩৫। মুসলমানরা মুশরিকদের হাতে মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে দেশান্তরীত হবে।

৩৬। মুসলমানদের জান-মালের নিরাপত্তা থাকবে না। মুশরিকদের হাতে তাদের রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে।

৩৭। এরপর মুসলমানরা কাশ্মীর দখল করবে। এবং অসংখ্য সম্পদ অর্জিত হবে । 

৩৮। কাশ্মীর হাত ছাড়া হলে হিন্দুরা বাংলাদেশ দখল করে নিবে।

৩৯। বাংলাদেশ দখল করে তারা অনেক হত্যাযজ্ঞ চালাবে। ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়ে যাবে।

৪০। বাংলাদেশের একজন মুসলিম নেতা হবেন; যিনি প্রকাশ্যে মুসলিমের নেতা সাজবেন কিন্তু তলে তলে কাফেরদের সাথে চুক্তি করবেন।

৪১। সেই নেতা চিনার আলামত হলো তার নামের প্রথম অক্ষর হবে আরবি "ش" দিয়া এবং শেষাক্ষর হবে "ن"। 
এবং এসব ঘটনা ঘটবে ঈদুল ফিতর এবং আযহার মধ্যবর্তী সময়ে। সারাবিশ্বে তখন নিন্দার ঝড় উঠবে।

৪২। মুসলমানরা কোনঠাসা হয়ে পড়লে মহররম মাসে সমরাস্ত্র হাতে পেয়ে পাল্টা আক্রমণ চালাবে।

৪৩। সারা ভারত ঝুড়ে আলোড়ন তৈরি হলে সেনাপতি উসমান জিহাদের আহ্বান করবেন।

৪৪। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান হাবীবুল্লাহর নেতৃত্বে মানুষজন জিহাদে ঝাপিয়ে পড়বে। 

৪৫। মুসলমানরা হিন্দুধিকৃত স্থানে হুঙ্কার দিয়ে আগাতে থাকবে।

৪৬। অসংখ্য মুজাহিদদের আক্রমণে মুসলমানরা বিজয় লাভ করবে।

৪৭। ইরানি এবং আফগানিস্তানের মুজাহিদদের অংশগ্রহণে পুরো হিন্দুস্থান মুসলমানদের করায়াত্বে আসবে।

উপসংহার

আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে গাজওয়ায়ে হিন্দের প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফিক দান করুক। 


Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন