জিলহজ্জ মাসের ১ম ১০দিনের ফযিলত

জিলহজ্জ মাসের ১ম ১০দিনের ফযিলত

ইসলামের পবিত্র মাসগুলোর মধ্যে জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি হিজরি ক্যালেন্ডারের দ্বাদশ এবং শেষ মাস। এই মাস মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই মাসেই হজ পালন করা হয়, যা ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। তাছাড়া, জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, ইবাদত এবং নেক আমল করার জন্য বিশেষ সওয়াব রয়েছে। এই নিবন্ধে, জিলহজ্জ মাসের ফযিলত সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।

জিলহজ্জ মাসের ১ম ১০দিনের ফযিলত

{getToc} $title={Table of Contents}

জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব

জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সূরা আল-হাজ্জ এবং সূরা আল-ফাজরের মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

 “তারা যেন তাদের (হাজিদের) কল্যাণের জন্য সাক্ষী হয় এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করে।”(সূরা আল-হাজ্জ, ২২:২৮)

“শপথ ফজরের এবং দশ রাতের।” (সূরা আল-ফাজর, ৮৯:১-২)

মুফাসসিরদের মতে, এখানে উল্লেখিত "দশ রাত" হচ্ছে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ফযিলত

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফযিলতময় হিসেবে গণ্য করা হয়। হাদিসে এসেছে:

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো দিন এমন নেই, যে দিনে নেক আমল করা জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমলের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।” সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা-ও নয়? তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও নয়; কিন্তু সে ব্যক্তি, যে নিজের জীবন ও সম্পদ নিয়ে জিহাদ করতে বের হলো এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসলো না।

 (সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৯৬৯)

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, জিলহজ্জের প্রথম দশ দিন ইবাদত-বন্দেগি, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা এবং অন্যান্য নেক আমলের জন্য বিশেষভাবে মূল্যবান।

আরও পড়ুন: লাল গরু এসে গেছে? আল আক্বসা ভেঙে থার্ড টেম্পল তৈরি করা হবে কি?

হজ্জের গুরুত্ব

জিলহজ্জ মাসের অন্যতম প্রধান ইবাদত হলো হজ। হজ পালন করা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যারা আর্থিক এবং শারীরিকভাবে সক্ষম, তাদের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন:

 “এবং মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দিয়ে দাও। তারা তোমার কাছে পায়ে হেঁটে এবং সকল দূরবর্তী পথ থেকে সকল পাতলা উটনীদের পিঠে চড়ে আসবে।” (সূরা আল-হাজ্জ, ২২:২৭)

হজের সময় মুসলিম উম্মাহ একত্রিত হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং ইবাদত করে, যা উম্মাহর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য জোরদার করে।

কোরবানি করা

জিলহজ্জ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো কোরবানি। জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হয়। এই দিন মুসলিমরা পশু কোরবানি করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে এই আমল সম্পন্ন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“অতএব তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামায পড় এবং কোরবানি কর।” (সূরা কাওসার, ১০৮:২

কোরবানি করা আমাদেরকে নবী ইব্রাহীম (আ.) এর সেই মহান ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যিনি আল্লাহর নির্দেশে তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি হওয়ার দলিল

জিলহজ্জ মাসের আমলসমূহ

জিলহজ্জ মাসের বিশেষ ফযিলতপূর্ণ দিনগুলোতে কিছু বিশেষ আমল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু আমল হলো:

১। রোজা রাখা: জিলহজ্জের প্রথম নয় দিন রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। বিশেষ করে আরাফার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আরাফার দিনের রোজা এক বছরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পাপসমূহের জন্য কাফফারা হবে।” (মুসলিম, হাদীস নং: ১১৬২)

২। তাহলিল, তাকবির এবং তাহমিদ: এই দিনগুলোতে বেশি বেশি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার” এবং “আলহামদুলিল্লাহ” পাঠ করা।

৩। নফল ইবাদত: এই দিনগুলোতে বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার করা।

৪। সদকা ও দান-খয়রাত: জিলহজ্জ মাসে দান-খয়রাত করার বিশেষ ফযিলত রয়েছে। এটি মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি করে।

জিলহজ্জের দিনের আমলসমূহের প্রভাব

জিলহজ্জ মাসের আমলসমূহ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই মাসে করা ইবাদত-বন্দেগি এবং নেক আমলগুলি মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহর প্রতি প্রেম ও ভক্তি বাড়ায়। তাছাড়া, এই মাসে হজ পালন করার মাধ্যমে মুসলিমরা একটি মহা সম্মেলনে একত্রিত হয়, যা উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি জোরদার করে।

আরও পড়ুন:কুরবানি কাকে বলে? কুরবানির ইতিহাস, ফজিলত,দোয়া,সময়,ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কি?

উপসংহার

জিলহজ্জ মাসের ফযিলত ও গুরুত্ব ইসলামের ধর্মীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে মুসলমানরা তাদের ইবাদত-বন্দেগি ও নেক আমল বৃদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। হজ পালন, কোরবানি, রোজা রাখা এবং অন্যান্য নেক আমল এই মাসের প্রধান বিশেষত্ব। সুতরাং, এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মাসের ফযিলত এবং বরকত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Learn With Iqbal

I'm Muhammad Iqbal Hossain, a language teacher. Languages ignite my passion – their ability to connect us and unlock new worlds. youtube facebook instagram telegram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন