অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা। book review
বই: অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা।
লেখক: মেজর (অবঃ) এম এ জলিল।
প্রকাশনী: ইতিহাস পরিষদ।
পৃষ্ঠা:৯০।
ক্যাটাগরি: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক।
ভাষা: বাংলা।
লেখক: মেজর (অবঃ) এম এ জলিল।
প্রকাশনী: ইতিহাস পরিষদ।
পৃষ্ঠা:৯০।
ক্যাটাগরি: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক।
ভাষা: বাংলা।
{getToc} $title={Table of Contents}
▌ শর্ট রিভিউ:
শর্ট রিভিউ করার পূর্বে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা বলি- আমি ভাই জানার জন্য বই পড়ি। হৃদয়ের বন্ধ দুয়ার খোলার আশায় যা পাই পড়ার চেষ্টা করি। এই বইটিও এর বাহিরে নয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশ কয়েকটি বই লিষ্ট করেছি। "অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা" এই লিস্টের প্রথম বই। তাই বইয়ে যা পেয়েছি,বুঝেছি পরবর্তীতে বইয়ের সারাংশ মনে রাখার জন্য নিজের মতো রিভিউ লিখেছি। এখানে যা আছে তা একান্তই সম্মানিত লেখকের কথা। আমি শুধু মনে রাখার স্বার্থে সেগুলোর দ্বিরুক্তি করেছি। তবে বইটি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি;কারণ সম্মানিত লেখক মুক্তিযুদ্ধের ০৯ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর অবঃ এম এ জলিল।
১। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের পরের ইসলাম- এর মধ্যে হঠাৎ করে কি এমন ঘটে গেল যাতে ইসলামের কথা শুনলেই কোন কোন মহল পাগলা কুকুরের মতো খিঁচিয়ে উঠেন। -২৩ পৃষ্ঠা।
২। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, সমর্থন কিংবা সহযোগিতা করলেই কেবল মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃতপক্ষে কেবল তারাই হতে পারে যারা মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় পরিপুষ্ট। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিপুষ্ট ছিল, তাদের মধ্যে হতাশা নেই। তাদের মধ্যে রয়েছে নবতর সংগ্রামের তীব্র যাতনা-দাহ।
৩। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল না। তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ছিলো ক্ষমতা অর্জনের হাতিয়ার মাত্র। চেতনার উৎস নয়।
৪। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।- এই ঘোষণা স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল না। তৎকালীন ছাত্র আন্দোলনের চাপে পড়েই এমন স্লোগান দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ তিনি আলোচনার এক ফাঁকে ইয়াহইয়া খানকে বলেছিলেন-" আমি ছাত্রদের কথা না-শুনলে তারা আমাকে গুলি করবে আর আপনাদের কথা না-শুনলে সেনাবাহিনী গুলি করবে, বলুন তো! এখন আমি কি করি?" আর তাছাড়া এই ঘোষণার পরেও শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানিদের সাথে আলোচনার টেবিলে বসার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নেতৃত্বস্থানীয় অনেকেই স্বীকার করেছেন পাকিস্তানিরা ২৬ মার্চে অমন বর্বর আক্রমণ করবে তা তারা কল্পনা করে নি। এটাই হলো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তৎকালীন নেতাদের তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। -২৭ পৃষ্ঠা
৫। মুক্তি যুদ্ধের চেতনা আসলে কী? কথায় কথায় 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করতে হবে' -স্লোগানে অনেকে মেতে উঠে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলে বস্তুটি কি এবং কোথায়? এই চেতনায় অনেকে আক্রান্ত এবং সংক্রমিত।
লেখকের মতে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্ত একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন'ই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই বিকৃতি কেন আসছে? কারণ যুদ্ধ পরবর্তীতে বেকার ছাত্র যখন দেখলো স্বাধীনতা তার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না, শিক্ষক দেখলো স্বাধীনতা তার মর্যাদা দিতে ব্যার্থ হচ্ছে, বুদ্ধিজীবীরা দেখলো স্বাধীনতা সমাজে তাদের মূল্য এনে দিতে পারে নি, সেনাবাহিনী দেখলো স্বাধীনতা তাদের গৌরব অক্ষুন্ন রাখতে ব্যার্থ হচ্ছে, তখনি প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বার্থনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলাদা সংজ্ঞা বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করা শুরু করলো।
৬। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলো- মুসলিমলীগ, জামাত-ই-ইসলামী,নেজাম-ই-ইসলাম'সহ অন্যান্য ইসলামি রাজনৈতিক দল। বিপক্ষে অবস্থানের কারণ ছিল-এরা বরাবরই ভারতীয় আগ্রাসনের ব্যাপারে ভীত ছিলেন৷ এরা মনে করতেন পাকিস্তানিদের আগ্রাসনের চেয়ে ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আগ্রাসন আরো ভয়াবহ। উপরন্তু তারা মনে করতেন ভারতীয়রা সর্বতোভাবেই বাংলাদেশকে গ্রাস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
তারা পাকিস্তানের পক্ষে নিয়েছে তারমানে এটা নয় যে- তারা বাঙ্গালীদের মুক্তি চায় নি।বরং তারা মুক্তি চেয়েছে নিজস্বতা বজায় রেখে। কারো সাহায্যে নয়। কারণ তারা এটাকে গোলামির নতুন রুপ হিসাবে বিবেচনা করতো। তারা মনে করতো পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিলে অন্তত ধর্ম রক্ষা হবে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিলে ভারতীয় আগ্রাসনের কারণে ধর্ম,দেশ উভয়টাই হারাতে হবে। পক্ষান্তরে মুক্তিযুদ্ধারা মনে করত মাটিই না থাকলে ধর্ম পালন কিভাবে সম্ভব হবে! প্রথমত মাটি বাঁচাই ; মাটি বাঁচাতে পারলেই ধর্ম পালন করা সম্ভব হবে। যুক্তির নিরিখে উভয় দলই সমান। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কেউ কাউকে দোষারোপ না করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে বিবেচিত হবে। তবে যে বা যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে তারা যে পক্ষের হোক না কেন, তারা সমান অপরাধী।
৭। স্বার্থ ছাড়া সন্ধি হয় না। ৭১ এর যুদ্ধে বাঙ্গালির স্বার্থ ছিলো ভারত থেকে অস্ত্র নিয়ে দেশ স্বাধীন করা। আর ভারতের স্বার্থ ছিলো চিন্থিত শত্রু পাকিস্তান কে দ্বিখণ্ডিত করে দুর্বল করা এবং পরবর্তীতে ছোট খন্ডকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে নিজের আওতাধীন করে নেওয়া।
৮। লেখক ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল কেন তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন না, তার অন্যতম কারণ ছিলো- তিনি অস্ত্র সংগ্রহ করতে কলকাতায় গিয়ে দেখেন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার হাসি আনন্দে তাস খেলছেন। তাদের আচার আচার-আচরণে বুঝাই যাচ্ছিলো না দেশে যুদ্ধ চলছে।
৯। মুজিব বাহিনী ভারতের RAW-এর প্রতিষ্ঠিত অভিজাত বাঙালিদের একটি দল। যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পূর্বেই দেশ স্বাধীন হয়ে যায়।
১০। ৭১-এর নভেম্বরে ভারত বাংলাদেশে অভিযান এবং লুটতরাজের নিমিত্তে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরস্ত্র করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কিন্তু মুক্তি বাহিনীর সরাসরি বিদ্রোহের দরুন তাদের সে চেষ্টা ব্যার্থতায় পর্যবাসিত হয়৷
১১। মুক্তিযুদ্ধকালীন শাসক গোষ্ঠীর নানাবিধ কুকর্মের ইতিহাস কেন ভারতীয়রা প্রকাশ করেনি। তা কি এখনো তাদের গলার বেড়ি হিসেবে সংরক্ষণ করে রেখেছে না-কি এর মাধ্যমে সুদূর কোন পরিকল্পনা আঁটছে। ক্ষমতাসীনরা দেশের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিসর্জনের মাধ্যমে তাদের মুখ আটকে রাখছে। তা খোঁজা দরকার।
১২। যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বাঙালিদের স্বশস্ত্র বিস্ফোরণ এবং হানাদারদের মাধ্যমে তা শেষ হয়েছে হানাদার বনাম ভারতীয় আরোয়ার সাইনের মাধ্যমে। কেন? এমনটি হওয়ার কারণ কি? এমনটি হওয়ার তো কথা ছিলো না। যুদ্ধ শুরু করলো বাঙলাদেশী এবং পাকিস্তানিরা। আর আত্মসমর্পণ হয় ভারতীয়দের কাছে। হিসেব তো মিলে না। এখানে কাদের স্বার্থ কাজ করেছে? কারা এই যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধে রুপান্তরিত করেছে তাদের স্বার্থ কি? আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী কে কেন এই অনুষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো? এই প্রশ্নের স্বচ্ছ উত্তর স্বাধীনতার পক্ষের দলদাবীকারীরা আদৌ দিতে পারবেন?
১৩। আমরা ১৬ ই ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস বলি। এটা বাঙালিদের বিজয় কিভাবে হয়? বরং ১৬ ডিসেম্বরে বাঙালিদের বিজয় কে অস্বীকার করে পাক-ভারত যুদ্ধে রনাঙ্গনের পূর্বাঞ্চলে ভারতীয়দের বিজয় ঘোষণা হয়েছে। কারণ আত্মসমর্পণ দলীলে স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান বনাম ভারতীয়রা। এই বইয়ের লেখক নিজেও ৯নং সেক্টরের কমান্ডার হওয়া সত্বেও তাকে খুলনার সেক্টর হাউজে আত্মসমর্পণের দলীল পত্রে স্বাক্ষর করতে দেওয়া হয় নি। সম্মানিত লেখক এখানে সুন্দর একটি প্রশ্নের অবতারণা করেছেন-১৬ ডিসেম্বরে এজাতি বিজয় থেকে বঞ্চিত হয় নি বরং স্বাধীনতা থেকেই বঞ্চিত হয়েছে। বঞ্চিতদের ন্যায্য আদায়ের লক্ষ্যে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা কি এখনো রয়ে যায় নি?
১৪। পাঠক হিসাবে আমি মারাত্মক আঘাত পেয়েছি, যখন পড়লাম- স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথমবন্দি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মহানায়ক ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল। তার দোষ; তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর লুটতরাজ এবং আগ্রাসনের প্রতিবাদে জোরালো ভূমিকা পালন করেছিলেন😪। ৩১ ডিসেম্বরের বেলা সাড়ে ১০টায় তাকে আটক করা হয়। আর রাতে তথা ৭২ সালের জানুয়ারীর ১ তারিখ রাতে তার উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলা হয়- "রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা আনলে তোমরা!"
১৫। ৭০-এর নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছিলো তারা ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কোন আইন প্রণয়ন করবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ৭২-এর সংবিধানে রাষ্ট্রের ০৪টি মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ যুক্ত করে ইসলাম কে সংবিধানের মুখোমুখি দাড় করানো হলো। কে বা কারা কাদের স্বার্থে দেশের ৯০% মুসলিম জনগণের মতামত কে উপেক্ষা করে এই মূলনীতি দাড় করিয়েছে! আজো তার হদিস পাওয়া যায়নি৷ কাদের কে খুশি করার জন্য এই মূলনীতি দাড় করানো হয়েছে।
১৬। বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিগুলো ভারত থেকে চাপিয়ে দেওয়া। নীতিগত ভাবে বাংলাদেশ কে নিয়ন্ত্রণ করার পলিসি মাত্র। কোন কোন জায়গা থেকে একটি অপরটির বিপরীত। যেমন: গনতন্ত্র বনাম সমাজতন্ত্র।
ক্রমিক নং অনুসারে সাজানো উপরের প্রতিটি টপিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনার বইটি পড়তে হবে। বইটির পিডিএফ টেলিগ্রাম চ্যানেলে দিয়ে রাখবো। কমেন্ট বক্সে টেলিগ্রামের লিংক থাকবে।
আরো পড়ুন
আমার ফাঁসি চাই বুক রিভিউ
জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
২২।০৭।২০২৪ ঈসায়ী।
রাত ০৯টা ২৪ মিনিট।