পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং সঠিকভাবে এটি সম্পন্ন করতে কিছু নির্দিষ্ট নথিপত্র ও প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়। এখানে পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ধাপ ও প্রয়োজনীয় তথ্য বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।
{getToc} $title={Table of Contents}
১. আবেদন ফরম পূরণ
পাসপোর্ট করার প্রথম ধাপ হলো আবেদন ফরম পূরণ করা। এটি অনলাইনে অথবা নির্দিষ্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায়। বাংলাদেশে অনলাইনে আবেদন করতে হলে [বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট) ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। অনলাইন ফরম পূরণের ধাপগুলি:★ প্রথমে ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করুন এবং একটি প্রোফাইল তৈরি করুন।
★ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, পেশা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করুন।
★ নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ডিজিটাল ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করুন।
★ অনলাইনে বা নির্দিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ফি জমা দিন।
২. প্রয়োজনীয় নথি
নিম্নলিখিত নথিগুলি পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন হবে:
★ এটি আবেদনকারীর পরিচয় প্রমাণপত্র হিসেবে প্রয়োজন।
★ আবেদন ফরমের জন্য নির্দিষ্ট মাপের ছবি (সাধারণত ৩.৫ x ৪.৫ সেমি)।
★ পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার ফি জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র।
★ যেমন, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল ইত্যাদি, যা বর্তমান ঠিকানা প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
★ বিবাহ সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পেশাগত সনদ ইত্যাদি নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুসারে জমা দিতে হতে পারে।
৩. বায়োমেট্রিক তথ্য
আবেদন ফরম জমা দেওয়ার পরে, আপনাকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে। বায়োমেট্রিক তথ্যের মধ্যে রয়েছে:★ সমস্ত আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়।
★ পাসপোর্টের জন্য ডিজিটাল ছবি তোলা হয়।
৪. পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার পদ্ধতি
পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়া হলো পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বাংলাদেশে পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। নিচে এই পদ্ধতিগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:পাসপোর্ট ফি বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্টের জন্য ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, ফি প্রদান করা যায় নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে:
★ নিয়মিত পাসপোর্ট: সাধারণত ৫০০০ টাকা (আবেদনের সময়ে বর্তমান ফি যাচাই করুন)।
★ ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট: দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য ৭৫০০ টাকা (আবেদনের সময়ে বর্তমান ফি যাচাই করুন)।
১. ব্যাংকের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়া
বাংলাদেশের নির্দিষ্ট ব্যাংকের শাখায় গিয়ে আপনি পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারেন। সাধারণত, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংকের শাখাগুলি এই সেবা প্রদান করে। ফি জমা দেওয়ার জন্য যা করতে হবে:★ ব্যাংকের শাখা থেকে ফি জমা দেওয়ার ফরম সংগ্রহ করুন।
★ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, আবেদন নম্বর (যদি প্রযোজ্য হয়), এবং ফি পরিমাণ উল্লেখ করে ফরমটি পূরণ করুন।
★ ফরমটি পূরণ করার পর ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে ফি জমা দিন। জমা দেওয়ার পর ব্যাংক থেকে একটি রশিদ পাবেন যা পরবর্তী ধাপে জমা দিতে হবে।
২. অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং
অনেক ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার সুবিধা প্রদান করে। এর জন্য আপনাকে ব্যাংকের নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ ধাপগুলি নিম্নরূপ:★ ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে লগ ইন করুন।
★ বিল পেমেন্ট বা ফি পেমেন্ট সেকশনে যান।
★ পাসপোর্ট ফি বা ই-পাসপোর্ট ফি নির্বাচন করুন।
★ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও আবেদন নম্বর প্রদান করুন।
★ নির্দিষ্ট ফি পরিমাণ প্রদান করুন এবং পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
★ পেমেন্ট সফল হলে, একটি ডিজিটাল রশিদ পাবেন যা আপনি সংরক্ষণ করতে পারেন।
৩. পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ফি প্রদান
বাংলাদেশের নির্দিষ্ট পেমেন্ট গেটওয়েগুলি পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার সুবিধা প্রদান করে। যেমন:★ বিকাশ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারেন।
★ রকেট মোবাইল অ্যাপ বা ইউএসএসডি কোড ব্যবহার করে ফি জমা দিন।
★ নগদ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি প্রদান করা যায়।
এই পেমেন্ট গেটওয়েগুলির মাধ্যমে ফি জমা দিতে হলে সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
★ বিকাশ, রকেট বা নগদ মোবাইল অ্যাপ খুলুন।
★ পেমেন্ট বা বিল পেমেন্ট অপশন নির্বাচন করুন।
★ পাসপোর্ট ফি বা ই-পাসপোর্ট ফি নির্বাচন করুন।
★ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও আবেদন নম্বর প্রদান করুন।
★ নির্দিষ্ট ফি পরিমাণ প্রদান করুন এবং পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
★ পেমেন্ট সফল হলে, একটি ডিজিটাল রশিদ পাবেন যা আপনি সংরক্ষণ করতে পারেন।
৫. সাক্ষাৎকার
কিছু ক্ষেত্রে, আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকারে ডাকা হতে পারে। এটি সাধারণত তখনই করা হয় যখন কিছু তথ্য যাচাই করা প্রয়োজন হয়। সাক্ষাৎকারের সময় আপনি আপনার আবেদন ও জমা দেওয়া নথির সত্যতা প্রমাণ করতে পারবেন।৬. পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন: যা জানা দরকার
পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন। এটি একটি নিরাপত্তা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া যেখানে আবেদনকারীর পেছনের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা যাচাই করা হয়। নিচে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা নিশ্চিত করে যে আবেদনকারী কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত নয় এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়। এটি পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করে এবং আবেদনকারীকে একটি বৈধ ও সঠিক পাসপোর্ট প্রদানে সহায়তা করে।১. আবেদন ফরম জমা
আপনি যখন পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফরম জমা দেন, তখন আপনার আবেদনটি সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়। এর পরে, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়।২. পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম
পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনার আবেদনের তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়। থানার অফিসাররা আপনার তথ্য যাচাই করতে একটি পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করেন।৩. পুলিশ অফিসারের পরিদর্শন
পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হিসেবে, স্থানীয় পুলিশ অফিসার আপনার ঠিকানায় পরিদর্শন করতে পারেন। তাঁরা আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং আপনাকে ও আপনার ঠিকানার সত্যতা যাচাই করবেন।৪. প্রতিবেশীদের সাথে সাক্ষাৎ
পুলিশ অফিসাররা আপনার প্রতিবেশীদের সাথে সাক্ষাৎ করে আপনার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। তাঁরা সাধারণত জিজ্ঞাসা করেন:★ আবেদনকারী এখানে বসবাস করেন কিনা?
★ আবেদনকারী কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত কিনা?
★ আবেদনকারীর সামাজিক ও ব্যক্তিগত আচরণ কেমন
৫. অফিসিয়াল নথি ও রেকর্ড যাচাই
পুলিশ অফিসাররা আবেদনকারীর পূর্ব ইতিহাস, বিশেষ করে যদি আবেদনকারী আগে কোনো অপরাধে জড়িত থাকে, সেই রেকর্ডও যাচাই করেন।৬. প্রতিবেদন প্রস্তুত ও জমা
যাচাইকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, পুলিশ অফিসার একটি ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। এই প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে পাঠানো হয়।পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য কিছু টিপস:
★ আবেদন ফরমে সঠিক ও সত্য তথ্য প্রদান করুন।
★ আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ, ঠিকানার প্রমাণপত্র ইত্যাদি প্রস্তুত রাখুন।
★ আপনার প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন যাতে তাঁরা আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য প্রদান করেন।
★ পুলিশ অফিসারের সাথে ভদ্র ও সহযোগিতামূলক আচরণ করুন।
৭. সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট তৈরি করার প্রক্রিয়াটি সাধারণ প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়ার মতোই, তবে কিছু অতিরিক্ত নথিপত্র ও প্রক্রিয়া রয়েছে। নিচে সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ধাপ ও প্রয়োজনীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:১. প্রয়োজনীয় নথি
সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নথিপত্র প্রয়োজন হয়। এগুলি হলো:★ আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র।
★ জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদ।
★ নির্দিষ্ট মাপের ছবি (সাধারণত ৩.৫ x ৪.৫ সেমি)।
★ পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার ফি জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র।
★ যেমন, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল ইত্যাদি।
★ বর্তমান কর্মস্থলের পরিচয়পত্র বা চাকরির প্রমাণপত্র।
★ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা অফিস থেকে প্রাপ্ত এনওসি। এটি একটি নথি যা নিশ্চিত করে যে পাসপোর্ট তৈরি করতে কোন আপত্তি নেই।
৮. শিশুদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
শিশুদের পাসপোর্ট তৈরি একটি বিশেষ প্রক্রিয়া এবং এতে কিছু নির্দিষ্ট নথি ও ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিচে শিশুদের পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ধাপ ও প্রয়োজনীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:১. প্রয়োজনীয় নথি
শিশুদের পাসপোর্ট করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নথিপত্র প্রয়োজন হয়। এগুলি হলো:★ শিশুর জন্ম সনদ।
★ পিতামাতার উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র।
★ পিতামাতার বিবাহ সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)।
★ শিশুর নির্দিষ্ট মাপের ছবি (সাধারণত ৩.৫ x ৪.৫ সেমি)।
★ পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার ফি জমা দেওয়ার রশিদ।
৯. পাসপোর্ট সংগ্রহ
সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এবং পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে, নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করা হলে, পাসপোর্টের অবস্থা ট্র্যাক করার সুবিধা থাকবে। পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও রশিদ সাথে নিয়ে যেতে হবে।১০. উপসংহার
পাসপোর্ট তৈরি একটি সহজ কিন্তু সঠিক প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়। উপরে বর্ণিত ধাপগুলি মেনে আপনি সহজেই আপনার পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। পাসপোর্ট পাওয়ার পর, এটি নিরাপদে সংরক্ষণ করুন এবং যথাযথ প্রয়োজনীয়তা মেনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করুন।